আমীরে জামায়াত

2023-03-17

চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত

ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে দেশকে স্বৈরাচার মুক্ত করতে হবে

-অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আল্লাহ্‌ তায়ালা কোন জাতির ভাগ্যের পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ সে জাতি নিজেরাই ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা না করে। দেশের অবস্থা আজ করুণ, প্রতিটি ক্ষেত্রে সমাজের শান্তি নষ্ট হয়ে গেছে। অশান্তির আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে সর্বত্র। কাদের কারণে এই আগুন লাগলো, কারা শান্তি নষ্ট করল। অনেক মানুষের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ অর্জিত হয়েছিল শান্তির জন্য। মানুষ একটু শান্তিতে থাকতে পারবে, দু’বেলা দু মুঠো খেতে পারবে এ আশা করেছিল, আজকে ভাতের অধিকার, ভোটের অধিকার কোনটাই নেই।’

তিনি আজ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরী আয়োজিত এক কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও চট্টগ্রাম মহানগরীর আমীর মুহাম্মদ শাহজাহানের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমীনের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, দারসুল কুরআন পেশ করেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, আরো বক্তব্য রাখেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও চট্টগ্রাম অঞ্চল পরিচালক উপাধ্যক্ষ আব্দুর রব।

অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, আজকে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে, ভয়াবহ লুটপাট চলছে। লুটপাটকারীরা এই অবৈধ সরকারের সাথে সংশ্লিষ্ট বলেই তাদেরকে কোনো শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে না। পুলিশ প্রশাসন তার বিবেক অনুযায়ী কাজ করছে না। সমাজে বৈষম্য প্রকট, একই দেশের মানুষের এক অংশ যাবতীয় সব সুবিধা পাচ্ছে, আরেক অংশ কোন সুবিধা পাচ্ছে না। এক দেশে দুই নীতি কেন? অসহায় মানুষদের ধরে জেলখানায় ভরছে, চোর ডাকাতদের জেলে না দিয়ে আলেম ওলামা সহ দেশের ভালো মানুষদের তারা গ্রেফতার করে জেলে ঢুকছে।

তিনি আরো বলেন, ধর্ম পালনের অধিকার, রাজনীতির অধিকার সংবিধান দিয়েছে, কিন্তু সরকারের কার্যক্রম সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। প্রকৃত জঙ্গীদের বাদ দিয়ে যারা পবিত্র ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছে তাদেরকে জঙ্গী বলে গ্রেফতার করা হচ্ছে। আজকে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে, নিজেদের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য সবাইকে জাগতে হবে। দিনের ভোট রাতে হয়ে যাচ্ছে, ভোট কেন্দ্রে গেলে বলছে ভোট হয়ে গেছে, এর অবসান হওয়া দরকার। তাদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। এই সরকার গণতন্ত্র হত্যাকারী, সংবিধান হত্যাকারী, আজকে মানুষকে কথা বলার সুযোগ দিচ্ছে না, নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। গত পরশু সুপ্রিমকোর্টে যা হল তাতে আবার প্রমাণিত হয়ে গেল, এই সরকার দেশের কোথাও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে দেবে না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে হক কথা বলতেই হবে, নিজেদেরকে আল্লাহ্‌র আযাব থেকে বাঁচানোর জন্য হলেও আমাদেরকে হকের পথে থাকতে হবে। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে দেশকে স্বৈরাচার মুক্ত করতে হবে

তিনি রমযানে যাকাত প্রদান, দাওয়াতি কাজ অব্যাহত রাখা এবং আল্লাহর আইন ও সৎলোকের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সকলকে ময়দানে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, চট্টগ্রাম ইসলামের আগমনের দ্বার। সুফী আউলিয়াদের দেশ। জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের নগরী। ত্যাগ তিতিক্ষার মূর্ত উপমা এই শহর। চট্টগ্রাম বলতেই আমাদের হৃদয়ের মাঝে এক বিশাল আশাবাদ সঞ্চার হয়। ইসলাম যেমনিভাবে এই চট্টগ্রামের মধ্য দিয়ে এই ভূখণ্ডে আগমন ঘটিয়েছিলো, তেমনিভাবে একটি সফল ও পূর্ণাঙ্গ সমাজ পরিবর্তনের সংগ্রামের মাধ্যমে ইসলামী আন্দোলনের বিজয়ের সূচনাও এই চট্টগ্রাম দিয়েই শুরু হবে ইনশা আল্লাহ।

তিনি আরো বলেন, আসুন নিজেদেরকে আবিস্কার করি কল্যাণের পথে, জান্নাতের পথে, মানুষের মুক্তির এই পথে। হজরত আদম (আ) থেকে শুরু করে মুহাম্মাদ (সা) পর্যন্ত যে মহান আন্দোলন, যে মহান দাওয়াত, যে মহান জীবন বিধান সেটারই উত্তরাধিকারী হচ্ছি আমরা। নবী রাসূলের অবর্তমানে তাদের মিশন বাস্তবায়নের স্বর্ণোজ্জ্বল অগ্রনায়ক হচ্ছি আমরা। অতএব, ঈমানের বলে বলীয়ান হয়ে, চরিত্রের দৃঢ়তা অর্জন করে, ত্যাগ এবং কুরবানির পরাকাষ্ঠার প্রমাণ দিয়ে সমস্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার মতো মানসিক হিম্মত সঞ্চয় করে আসুন আমরা একটি কঠিন কঠোর শপথ গ্রহণ করি।

এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, আজকের বিশ্ব একটি কঠিন পরিস্থিতি ও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, দ্বন্ধ সংঘাত যুদ্ধ বিগ্রহ চলছেই। এই যুদ্ধ এই সংঘাতের মাধ্যমে একটি সভ্যতার পতনের পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছি আমরা। ব্রিটিশ সাম্রাজ্য, রুশ সাম্রাজ্যের পতন হয়েছে, ইনশাআল্লাহ্‌ মার্কিন সাম্রাজ্যেরও পতন হবে, মিথ্যাবাদিদের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী। আজ বিশ্ব পরিস্থিতি সেই বার্তা দিচ্ছে, আজ দুনিয়াতে একটি উন্নত জীবন আদর্শ হিসেবে ইসলামের বিজয়ের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে, এজনয় তারা ইসলামকে দাবিয়ে রাখতে চায়, আমাদের এ বাংলাদেশের মানুষ ইসলাম প্রিয়, এখানকার ইসলামের প্রতিপক্ষ শক্তি সে কারণে এর অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে চায়, নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা নিয়েছিল, ৫ জন জাতীয় নেতৃবৃন্দসহ শত শত কর্মীকে শহীদ করা হয়েছে, একটি আদর্শিক শক্তি হিসেবে জামায়াতকে তারা নিশ্চিহ্ন করতে পারে নাই। আল্লাহ্‌ যা চাইবেন তাই হবে। তারা চেয়েছিল ইসলামকে নির্মূল করতে, আমাদের ত্যাগী সাহসী কর্মীরা সেটি রুখে দিয়েছে। হতাশার কোন কারণ নেই, বিজয় সন্নিকটে।

মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, মু’মিন জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো দ্বীন প্রতিষ্ঠার যথাযথ প্রচেষ্টা চালানো। এজন্য আল্লাহর প্রতি অবিচল ঈমান ও জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ অপরিহার্য অনুসঙ্গ। এ পথ কখনো কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না; এখনো নয়। মূলত, যুগে যুগে যারাই মানুষের কাছে দ্বীনে হক্বের দাওয়াত দিয়েছে তাদের ওপরই নেমে এসেছে নানাবিধ বাধা-প্রতিবন্ধকতা। তাই জুলুম-নির্যাতনে হতাশ হলে চলবে না বরং সকল বাধা উপেক্ষা করেই ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালাতে হবে। তিনি কর্মীদেরকে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ময়দানে কাজ করার আহবান জানান।

উপাধ্যক্ষ আব্দুর রব বলেন, দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য দাওয়াতি কার্যক্রম সম্প্রসারণের কোন বিকল্প নেই। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের এই প্রত্যয় নিয়ে কাজ করা উচিত যাতে কেউই দাওয়াতের বাইরে না থাকেন। আর এ জন্য সমাজসেবা কার্যক্রম বাড়াতে হবে। তাহলেই দ্বীনের বিজয় তরান্বিত হবে-ইনশাআল্লাহ।

সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, বন্দরনগরী চট্টগ্রাম হচ্ছে ইসলামের প্রবেশদ্বার। এই জনপদে আমরা ইসলামী আন্দোলনের কর্মী হিসেবে যার যার সাধ্য মোতাবেক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছি। ইসলামী আন্দোলনের পথ হচ্ছে কাঁটা বিছানো, এই পথে চলতে গেলে বাঁধা আসবেই, এই পথ রক্ত পিচ্ছিল, বাতিলরা আমাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছিল, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছিল, কিন্তু তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে, তারাই আজ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন, সুপ্রিম কোর্টের মতো বিচারাঙ্গানেও ব্যালট ছিনতাই করে তাদেরকে কৃত্রিম ভাবে জয়ী হতে হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী আজ দেশের মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিক। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা উন্নত ও নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হলে গোটা জাহেলিয়াত তাদের কাছে আত্মসমর্থন করতে বাধ্য হবে। এই কর্মী সম্মেলন থেকে আমাদেরকে দৃঢ় শপথ নিতে হবে, ইসলামী আন্দোলনের জন্য এই নগরী যেন পুরো বাংলাদেশের কাছে উদাহরণ হয়ে থাকতে পারে।

তিনি আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান, চট্টগ্রাম দুই কৃতি সন্তান সাবেক এমপি মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলাম ও শাহজাহান চৌধুরীসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দের মুক্তির জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান এবং মহান আল্লাহ তা’য়ালার রহমত কামনা করেন।

অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জনাব নুরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর জনাব মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য অধ্যাপক আহছানুল্লাহ ভুঁইয়া, অধ্যক্ষ আমিরুজ্জামান, মুহাম্মদ জাফর সাদেক, নগর নায়েবে আমীর ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ, মুহাম্মদ নজরুল ইসলামসহ চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও দেশের প্রখ্যাত ইসলামী সঙ্গীত শিল্পী মশিউর রহমান, চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি, পাঞ্জেরি শিল্পী গোষ্ঠী, দুর্নিবার শিল্পী গোষ্ঠী ও পারাবার শিল্পী গোষ্ঠী গান পরিবেশন করে।