আমীরে জামায়াত

2022-03-21

রাজধানীর কাপ্তান বাজারে অগ্নিকান্ডে নিহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের জামায়াতের আর্থিক সহায়তা

জুলুম, নির্যাতন সত্বেও আপোষহীনভাবে কল্যাণমুখি কাজের ধারা অব্যাহত থাকবে

-ডা. শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান বলেছেন, গত ১২ বছর জামায়াতে ইসলামীর উপর রাষ্ট্রীয় জুলুম চলছে। আমাদের কার্যক্রমকে জোর করে বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা চলছে। এ নির্যাতনের উদ্দেশ্য একটাই, আমাদের কাজকে থামিয়ে দেয়া। তিনি বলেন, আমরা কোন মানুষের কাছে অঙ্গিকারাবদ্ধ না। আমাদের ওয়াদা আল্লাহ তায়ালার কাছে। আমরা আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখি। কোন মানুষের উপর ভরসা করে কোন কাজ করি না। তিনি উল্লেখ করেন, জুলুম, নির্যাতন যত যাই হোক, জামায়াতের কল্যাণমুখি কাজের ধারা আপোষহীনভাবে চলবে।

রোববার জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে রাজধানীর একটি মিলনায়তনে কাপ্তান বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে নিহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে আর্থিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারি সেক্রেটারি মুহা. দেলাওয়ার হোসেন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সবুর ফকির, কামাল হোসাইন, ওয়ারী পশ্চিম থানা আমীর কামরুল আহসান হাসান। উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য হাফিজুর রহমান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিশে শুরা সদস্য এস এম আহসান উল্লাহ, পল্টন উত্তর থানা আমীর শাহিন আহমদ খান, ওয়ারী পূর্ব থানা আমীর মোহতাছিম বিল্লাহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

ডা: শফিকুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, গত ১২ বছর জামায়াতে ইসলামীর উপর রাষ্ট্রীয় জুলুম চলছে। আমাদের কার্যক্রম জোর করে বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা চলছে। অফিসগুলো সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। ১১ জন শীর্ষ দায়িত্বশীলকে আমাদের মাঝ থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। ফাঁসির কাস্টে ঝুলানো হয়েছে। সাড়ে ৫ শত মতো ভাইদের চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে, হাত কেটে নেয়া হয়েছে। সাড়ে ৫ হাজার মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। সাড়ে ১৭ লাখ নেতাকর্মী দফায় দফায় জেলে গিয়েছে। এ নির্যাতনের উদ্দেশ্য একটাই, আমাদের কাজকে থামিয়ে দেয়া। আমরা কোন মানুষের কাছে অঙ্গিকারাবদ্ধ না। আমরা আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখি। কোন মানুষের উপর ভরসা করে কোন কাজ করি না। তিনি বলেন, মজলুমরা মজলুমের কষ্ট বুঝে। আপনারা ক্ষতিগ্রস্থ। আমরা আপনাদের পাশে দাড়িয়েছি। তিনি আরো বলেন, আপনাদের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়া সম্ভব নয়। বিপদ মুসিবতে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। আল্লাহ তায়ালাই ক্ষতি পুষিয়ে দিবেন।

জামায়াতের আমীর বলেন, আমরা কোন দল ধর্ম বিভক্ত করে দেখি না। ১৮ কোটি মানুষের কল্যাণে, ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় কাজ করি। তিনি কুরআনের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, আমরা মানুষের কল্যাণে কাজ করি। বিপন্ন মানুষের পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করি। জুলুম, নির্যাতন যাই হোক না, আমরা যেন আপোষহীন পথে চলতে পারি, আল্লাহ যেন আমাদের সেই তৌফিক দান করেন। তিনি বলেন, জনগনের উপর মানুষের গোলামী চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। এর আমূল পরিবর্তন করতে হবে। তবে সেটা হবে কুরআনের ভিত্তিতে। তিনি আরো বলেন, আগে যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারা নিজেদের আখের গুছিয়েছে, হালাল-হারাম দেখেনি, মানুষের উপর জুলুম করতে গিয়ে আল্লাহকে সামান্য ভয়ও করেনি। তাদের দ্বারা মানুষের শান্তি হবে না। যারা সত্যিকার অর্থে আল্লাহকে ভয় করে, যাদের সকল কাজ আল্লাহর জন্য নিবেদিত হবে, তাদের দ্বারাই শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা চাই, দেশের সমস্ত ইসলামী শক্তি এগিয়ে আসুক। সবাই এসে কুরআনের পক্ষে আওয়াজ তুলুক। কালেমার পতাকাকে আমরা সবাই মিলে মুষ্টিবদ্ধভাবে আকড়ে ধরি। নিশ্চয়ই এদেশে ইসলামের বিজয় হবে, ইনশাআল্লাহ। এই বিজয়ের পথে আমরা আন্দোলন-সংগ্রামে জনগণকে আমাদের পাশে চাই। তিনি উল্লেখ করেন, আল্লাহ সমস্ত জুলুমের অবসান ঘটিয়ে সত্যের সূর্য উদিত করবেন।

সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জামায়াতে ইসলামী ৪ দফার ভিত্তিতে কাজ করে। এর অন্যতম দফা সমাজ সংস্কার ও সমাজ কল্যাণে ভূমিকা পালন করা। জামায়াত কর্মীই, সমাজ কর্মী। তাই আমরা মানুষের বিপদে সব সময় পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করি। তিনি বলেন, বিপদ মুসিবত আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা হিসেবে আসে। তাই বিপদে ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহর উপর ভরসা করলে, আল্লাহই বিপদ কাটিয়ে উঠার তৌফিক দেন।

উল্লেখ্য যে, গত ৮ জানুয়ারি ২০২২ ঢাকা ওয়ারির কাপ্তান বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা সংঘটিত হয়। অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানটি মূলত একটি কাঁচাবাজার। এখানে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর দোকান বা ক্ষুদ্র মুদি দোকান ছিলো। এখান থেকেই এসব মানুষের দৈনিক রুটি রুজির ব্যবস্থা হতো। এই দোকান গুলো পুড়ে যাওয়ার কারণে এসব দোকান মালিকগণ মানবেতর জীবন যাপন করছে। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্থ ৫৬ জন ব্যবসায়ীকে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বিশেষ আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়।