১৯ এপ্রিল ২০২২, মঙ্গলবার

১৭ই রামাদান ঐতিহাসিক বদর দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা

ঐতিহাসিক বদরের শিক্ষার আলোকে যেকোন মূল্যে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে- অধ্যাপক মজিবুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মজিবুর রহমান বলেছেন, কুরআনকে বিজয়ী করার জন্য ১৭ রমযান বদরের যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল। সে দিন কুরআন বিজয়ী হয়েছিল। বদরের প্রান্তরে ১০০০ জনের বিপরীতে মাত্র ৩১৩ জন মাঠে নেমেছিল। সংখ্যা যা ই হোক না কেন আল্লাহর সাহায্যে বিজয় এসেছে। আল্লাহ সত্যকে পাঠিয়েছেন বিজয়ী হতে আর বাতিল এসেছে পরাজিত হবে। অতএব বিজয় আসবেই। তিনি বলেন, মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বেশী দরকার ঐক্যের। বাতিলরা ইসলামের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। কিন্তু ইসলামের পক্ষে ডাক দিলে বিভেদ সৃষ্টি হয়। ঐতিহাসিক বদরের শিক্ষার আলোকে যে কোন মূল্যে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।

আজ ১৯ এপ্রিল ২০২২ মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর একটি মিলনায়তনে ১৭ই রামাদান ঐতিহাসিক বদর দিবস উপলক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া এর সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও মহানগরীর সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট ড. মো. হেলাল উদ্দিন, দেলোয়ার হোসেন, মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে কামাল হোসাইন, অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান, মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য আবদুস সালাম।

অধ্যাপক মজিবুর রহমান বলেন, হালালভাবে জীবন যাপনের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। আল্লাহ তায়ালা যা হারাম করেছেন, আমাদের সমাজে তা পালনে বাধ্য করা হয়েছে। আল্লাহ সুদকে হারাম করেছেন। কিন্তু বর্তমান অর্থ ব্যবস্থায় তা থেকে মুক্ত থাকা যায় না। আল্লাহ মদকে হারাম করেছেন। কিন্তু মদ্য পানকে বৈধতা দিয়ে আইন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ৩১৩ জন সাহাবি নিয়ে সে সময়ের আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত মক্কার কাফেরদের সঙ্গে বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। আল্লাহ তাআলা এ যুদ্ধে মুসলমানদের ফেরেশতা বাহিনী দ্বারা বিশেষ সাহায্য করে বিজয় দান করেছিলেন। ২য় হিজরির রমাযান মাসের সতের তারিখে মদিনার প্রায় ১৩০ কি:মি: দূরে অবস্থিতি ঐতিহাসিক বদর প্রান্তরে মক্কার মুশরিক সম্প্রদায় এবং রাসূল সা. ও তার জানবাজ ঈমানদীপ্ত সাহসী সাহাবায়ে কেরামের মাঝে এক যুগান্তকারী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। এ যুদ্ধ ছিল অস্ত্র সম্ভার এবং জনবলে এক অসম যুদ্ধ। প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সা. এর নেতৃত্বে মুসলিমগণ অতি নগণ্য সংখ্যক জনবল আর খুব সামান্য অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে সুদূর মক্কা থেকে ছুটে আসা একদল রক্ত পিপাষু হিংস্র কাফেরদের বিশাল অস্ত্র সজ্জিত বাহিনীর প্রতিরোধ করেছিলেন এবং আল্লাহ তায়ালা সে দিন অলৌকিকভাবে মুসলমানদেরকে বিশাল সম্মানজনক বিজয় দান করেছিলেন। আজও যদি আমরা উদ্দিপ্ত ঈমানে বলিয়ান হয়ে বদরের সাহাবাদের মত ইসলামী আদর্শকে প্রতিষ্ঠা করা জন্য প্রাণন্তকর প্রচেষ্টা চালাতে সক্ষম হই, তাহলে মহান আল্লাহর ওয়াদা তিনি আমাদেরকেও সে বিজয় দান করবেন ইনশাআল্লাহ।

সভাপতির বক্তব্যে মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ইসলামের ইতিহাসে পবিত্র রমযান মাসে বদর যুদ্ধ একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা। বদরের যুদ্ধের মূল শিক্ষা মুসলমানদের জীবনে বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামের তামান্না এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগী, সত্য ও ন্যায়ের পথে জীবন উৎসর্গের জন্য তৈরি থাকতে হবে। মদিনায় ইসলামের সমৃদ্ধি ও গণজাগরণে ভীত হয়ে কাফিররা প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের পবিত্র মাসে এ যুদ্ধে লিপ্ত হয়। বদর যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয় এবং কাফিরদের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। বদর যুদ্ধ ইসলাম এবং মুসলমানদের জন্য এক ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা বহণ করে।

ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, বদরের ময়দান আজ আমাদের সামনে প্রস্তুত রয়েছে। যেখানে আবু জেহেল উতবা সায়বাদের গোষ্ঠী আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে আধুনিক সব সাঁজে ইসলাম ঈমান মুসলমানদের নির্মূল করার কাজে লিপ্ত। অন্যদিকে আমরা মুসলিমেরা আবু বকরের রা. ও সাহাবায়ে কেরামগণদের নৈতিকতা, আন্দোলন সংগ্রাম, জীবন উৎসর্গ করার মানসিকতার ধারে কাছেও যেতে পারিনি। তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য রাতের বেলার দরবেশ হয়ে দিনের বেলার সৈনিক হতে পারিনি। বদরের শিক্ষা নিয়ে যেন আমরা প্রকৃত মুজাহিদ হিসেবে তৈরি হতে পারি।