২ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ১২:২৬

চট্টগ্রামে তীব্র লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন

‘কয়েকদিন ধরে কারেন্টের যন্ত্রণায় আছি। প্রতিদিন ১৪-১৫ বার লোডশেডিং হচ্ছে। দিন রাতের অর্ধেকের বেশি সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। এমনকি গতকাল সেহেরির সময়ও বিদ্যুৎ ছিল না। সেহেরি ইফতার কিছুই মানছে না লোডশেডিং। এর আগে অন্তত ওই সময় সমস্যা করতো না। আর এখন তো পুরোপুরি গরম আসেনি। এখন যদি এই অবস্থা হয় সামনে কী অবস্থা হয় কে জানে।’ সোমবার বিকালে মানবজমিনকে এমনটা বলছেন চট্টগ্রাম নগরের অক্সিজেন এলাকার বাসিন্দা উম্মে সালমা। শুধু এই এলাকায় নয়, নগরীর প্রায় সব এলাকায়ই একই দৃশ্য। মফস্বলের অবস্থা আরও খারাপ।

গরমের মধ্যে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ।
এদিকে রোজার শেষের দিকে এসে এই বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে ঈদ মার্কেটেও প্রভাব পড়েছে। সাধারণত ইফতারের পর থেকে সেহেরির আগ পর্যন্ত শপিংমল, মার্কেটগুলোতে ঈদের কেনাকাটা চলে হরদম। এরমধ্যেই বিদ্যুতের আসা-যাওয়া চলছে। এতে আইপিএস ব্যাটারি ঠিকমতো চার্জফুল করতে যথাযথ সময় পাচ্ছে না। জেনারেটর চালাতে সময় নিচ্ছে মোটামুটি। বিদ্যুতের এই আসা-যাওয়ার খেলার মধ্যকার সময়ে দোকানি-ক্রেতা উভয়েই অতিষ্ঠ। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বুলবুল চৌধুরী বলেন, ‘টেরিবাজার জনতা ব্যাংকের নিচে সরু একটি গলিতে বাচ্চার কেনাকাটা করতে গিয়েছিলাম দুপুরে। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেছে। ভিড়ের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে আসার অবস্থা। কোনোরকম কেনাকাটা করে বাসায় ফেরার পথে দেখি এলাকায়ও একই অবস্থা। বিদ্যুৎ নাই।’ নগরের মুরাদপুর এলাকার বাসিন্দা তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘গত দু’দিন ধরে এত বেশি লোডশেডিং হচ্ছে যা বলার ভাষা নেই। গতকাল ৭-৮ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ ছিল না। আমরা না হয় মানিয়ে নিলাম। কিন্তু বাচ্চাগুলোর অবস্থা খারাপ। তারা গরমে ছটপট করছে।’ স্থানীয় সাংবাদিক আবু আজাদ বলেন, ‘কম্পিউটারে বসছি আর উঠছি। প্রতি ঘণ্টায় লোডশেডিং। এখনই এই অবস্থা, সামনে কি যে হয়?’

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে অবস্থিত এস আলম গ্রুপ ও চীনা কোম্পানির যৌথ মালিকানাধীন এস এস পাওয়ার প্ল্যান্ট শনিবার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেয়। ওই পাওয়ার প্ল্যান্টটি ১৩২০ মেগাওয়াটের। অন্যদিকে টানা অনাবৃষ্টির কারণে কাপ্তাই হ্রদের পানি দ্রুত শুকিয়ে যাওয়ায় ২৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ধস নামে। ফলে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ কম যাওয়ায় এখানে সরবরাহও কমে গেছে। যদিও সোমবার সকালে এস এস পাওয়ার প্ল্যান্টের ২টি ইউনিটের মধ্যে একটা সচল হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়লা ও জ্বালানি সংকট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত করার অন্যতম কারণ। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো মূলত গ্যাস, তেল ও ফার্নেস অয়েল দিয়ে চলে। ঠিকমতো কয়লা আমদানি করা না গেলে চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ সংকট সামনে আরও প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। আরেকটা সূত্র বলছে, চাহিদার চেয়ে গ্যাসের সরবরাহ কম। তাই গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। এতে কিছুটা ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। বিদ্যুৎ খাতে দিনে গ্যাসের চাহিদা ২৩২ কোটি ঘনফুট। এবার গ্রীষ্মে পিডিবি অন্তত ১৫০ কোটি ঘনফুট সরবরাহের দাবি জানিয়েছে। এখন সরবরাহ করা হচ্ছে ৮৮ কোটি ঘনফুট। ফলে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেকের বেশি বসিয়ে রাখতে হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম পিডিবি’র প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম মানবজমিনকে বলেন, ‘আমাদের এখানে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। আর এখন গরম বাড়ছে। যে কারণে লোডশেডিং বাড়ছে। আজকেও ১০০ মেগাওয়াট শর্টেজ আছে। এস আলমের বিদ্যুৎ কেন্দ্রেও কিছুটা ঝামেলা হয়েছিল। সবমিলিয়ে এখন এই অবস্থা।’ তিনি বলেন, সমপ্রতি জ্বালানি সংকটের ফলেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে সমস্যা হচ্ছে। তবে এটি স্থায়ী সংকট নয়। দেখা যাচ্ছে কাল সংকট ছিল আবার জ্বালানি চলে আসলে সমাধান হয়ে যাবে। দেখা গেল, জ্বালানি শিপমেন্ট যে সময় আসার কথা সে সময় না এসে দু’দিন দেরি হলো। যেহেতু নদীপথে জ্বালানি আসে সেহেতু এদিক ওদিক হতে পারে। কবে নাগাদ সমাধান হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা মূলত এনএলডিসির (ন্যাশনাল লোড ডেসপ্যাচ সেন্টার) বরাদ্দ অনুযায়ী বিতরণ করে থাকি। যখন বরাদ্দ পর্যাপ্ত থাকে তখন বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি থাকে না। তাদের মাধ্যমেই আমরা জানি উৎপাদন ঘাটতি আছে কি নেই। তবুও আমরা যে যার অবস্থান থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছি। আশা করছি, দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি হবে। এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, রোববার চট্টগ্রামের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের চেয়ে ২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।

 

https://mzamin.com/news.php?news=104267