২৯ এপ্রিল ২০২৪, সোমবার, ৮:০৯

তীব্র তাপপ্রবাহ

বিপাকে খেটে খাওয়া মানুষ

তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। টানা দাবদাহে নাজেহাল অবস্থা কর্মজীবী ও সাধারণ মানুষের। সব থেকে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষেরা। তীব্র রোদের কারণে তারা কাজ করতে পারছেন না। জীবিকার তাগিদে গরম উপেক্ষা করে বের হলেও তাদের অনেকেরই হাঁসফাঁস অবস্থা। কাজে নেমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন কেউ কেউ। হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুও হচ্ছে। বিশেষ করে রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুরসহ খেটে খাওয়া মানুষের জন্য দুর্বিষহ অবস্থা তৈরি করেছে এই তাপপ্রবাহ।

মো. শফিকুল ইসলাম রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। থাকেন মোহাম্মদপুরে। মিরপুরের কাজীপাড়ায় কথা হয় তার সঙ্গে।
বলেন, গরমে আয় কমেছে। বেরোনো যায় না। আগে যেমন কামাই ছিল, এখন তেমন অবস্থা নাই। অনেক কষ্টে চলতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ১২টায় বাসা থেকে বের হয়েছি। রিকশা চালিয়ে দিনে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা উঠে। আগে ৮০০ থেকে ১২শ’ টাকা পর্যন্ত ভাড়া মিলতো। এখন তীব্র গরমে কাজ করতে পারছি না।

রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন আলী আজগর। তিনি বলেন, গরমে থাকা যায় না। বাসাতেও গরম লাগে। আগে রিকশা চালিয়ে ৮০০ থেকে ১২শ’ টাকা পেতাম, এখন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা হলেই চলে যাই। গরমে চালানো যায় না, অতিরিক্ত খারাপ লাগে। প্রতি মাসে তার রুম ভাড়া বাবদ সাড়ে ৪ হাজার টাকা গুনতে হয় উল্লেখ করে বলেন, আমি ঢাকায় একাই থাকি। কষ্ট করে হলেও রুম ভাড়া দেয়া লাগবে। রাস্তাঘাটে তো আর থাকতে পারবো না।

কাওরান বাজারে ছেঁড়া জুতা-সেন্ডেল মেরামত করেন অজিত চন্দ্র দাস। গরমে দোকানে লোক না আসায় তার আয় কমে অর্ধেক হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগের থেকে ইনকামটা কম। দিনে বড়জোড় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় করি। গরমের আগে কাজ অনেক ভালো ছিল। দিনে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকার মতো থাকছে।

ঘড়ির কাঁটায় তখন সাড়ে ৪টা। কাওরান বাজারে দাঁড়িয়ে মাথায় একটি ডালি নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন মিজানুর। বাজার করতে আসা লোকজনের মালামাল তিনি ডালিতে করে বাসায় পৌঁছে দেয়াই তার কাজ। তিনি বলেন, গরম আসার পরে টাকা রাখতেই পারি না। দুই-একটা খ্যাপ নিয়ে গেলে অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। আগে কাঁঠালবাগান, বাংলামোটর, ফার্মগেট, ইস্কাটন, মগবাজার যেতাম। এখন এসব এলাকায় কাজ পাই না।

শেওড়াপাড়ায় ফুটপাথে ১৫ বছর ধরে মালামাল বিক্রি করেন কামাল উদ্দীন। সকাল পেরিয়ে দুপুর গড়ালেও এখন পর্যন্ত কোনো ক্রেতা পাননি তিনি। বলেন, মানুষ তো বাইরেই বেরোচ্ছে না। ফুটপাথের কলা বিক্রেতা মো. মহিউদ্দীন বলেন, রোদের তাপে কলার খোসা কালো হয়ে যাচ্ছে। মানুষ ভালো দাম দিয়ে কলা কিনতে চাইছে না। গরমে ছড়ি থেকে কলা ঝরে যাচ্ছে। এতে আমরা লোকসানে পড়ছি।

https://mzamin.com/news.php?news=107609