২ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ১২:১৬

ঈদ বাজারে মধ্য নিম্নবিত্তের নাভিশ্বাস

ঈদ বাজারে ব্যয় সঙ্কুলান করতে না পারায় মধ্য নিম্নবিত্তের নাভিশ^াস উঠেছে। সন্তানদের মুখে হাসি ফোটাতে তাই মার্কেট বিপণিবিতান বাদ দিয়ে তারা ভিড় করছেন ফুটপাথে। তারা বলছেন, আয়ের চেয়ে ব্যয় বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন। ফলে ঈদের কেনাকাটা তাদের পক্ষে অনেকটা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে করে নিজেরা কিছু না কিনেও সন্তানদের জন্য কেনাকাটা করতে নিম্নবিত্তের সারিতে যুক্ত হয়ে ফুটপাথে যাচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছরের চেয়ে এবার প্রতিটি খাতে খরচ বেড়েছে। তাই কাপড়ের দামও বাড়াতে হয়েছে। তাদের ভাষ্য এবার কাপড়ে গড়ে সর্বনিম্ন ২০ শতাংশ দাম বেড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে মধ্য ও নিম্নবিত্তদের ওপর।
অন্য দিকে বাজার পর্যবেক্ষকদের ধারণা, এবারের ঈদে পোশাক-পরিচ্ছদ থেকে সবকিছুর দামই ৩০-৪০ শতাংশ বেড়েছে। সে তুলনায় মধ্যবিত্তের আয় বাড়েনি। তাই শখ ও সামর্থ্যরে সমন্বয় করতে গিয়ে তারা নিম্নবিত্তের বাজারে ভিড় করছে।

বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদবাজারে মূল্যস্ফীতির প্রভাব শুধু বিত্তশালী কিংবা মধ্যবিত্তের পণ্যেই নয়, নিম্নবিত্তের জামা-কাপড়, জুতা-স্যান্ডেল, কসমেটিকসহ সবকিছুতেই পড়েছে। ফলে নামিদামী শপিংমল, বিপণিবিতান ও মার্কেটগুলোতে বেচাকেনা জমে উঠলেও মধ্য ও নিম্নবিত্তরা ফুটপাথে ভিড় করছেন।

দোকানিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ছোট মার্কেট ও ফুটপাথের দোকানগুলোতে আগে শুধুমাত্র নিম্নআয়ের মানুষ ঈদ কেনাকাটা করলেও এবার মধ্যবিত্তের দেখা মিলছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অনেকেই সারা বছর সাধারণ মার্কেট থেকে পোশাক-পরিচ্ছদ কিনলেও সাধারণ ঈদের আগে নামিদামী শপিংমল ও বিপণিবিতান থেকে নিউ ফ্যাশনের শখের জিনিসপত্র কিনেন। কিন্তু এবার তারা সে পথ বিমুখ হওয়ায় সবাইকে নতুন হিসাব কষতে হচ্ছে।

গুলিস্তানের ফুটপাথে শপিং করতে আসা সানোয়ার জানান, তিনি বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। কিন্তু আয়ের চেয়ে ব্যয় বাড়ায় এখন ফুটপাথে শপিং করতে এসেছেন। তিনি জানান, অবস্থা এমন যে খেয়ে বাঁচা দায়। তারমধ্যে সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে কাপড় কিনতে আসতে হয়েছে। তিনি বলেন, ফুটপাথে কাপড় কিনতে লজ্জা লাগছে। কিন্তু কি করব। উপায় তো নেই। তাই সম্মানের চিন্তা বাদ দিয়ে এসেছি।

রাজধানীর তালতলা মার্কেটে সন্তানদের নিয়ে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন রোকশানা। পছন্দের সাথে সামর্থ্যরে সমন্বয় না হওয়ায় ঘণ্টা দুয়েক ঘুরে কিছুই কিনতে পারেননি। মার্কেটে দীর্ঘ সময় হেঁটে শিশু সন্তানরা ক্লান্ত হয়ে পড়ায় গোপনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে খালিহাতে বাড়ি ফিরেেেছন এই নারী। তিনি বলেন, ধারণা ছিল নির্ধারিত বাজেট দিয়েই ঈদের কেনাকাটা সারতে পারবেন। কিন্তু ঈদ মার্কেটে এসে তার সে ভুল ভেঙেছে। পছন্দ অনুযায়ী, এসব জিনিস কিনতে বাজেটের দেড়গুণ টাকা লাগবে। তাই বাজেট কাট করে শুধু সন্তানদের জন্য সামান্য শপিং করেছেন।

অন্য দিকে নিউ মার্কেটের সামনে ফুটপাথে কেনাকাটা করছিলেন নাবিল আহমেদ। সাথে স্ত্রী ও দুই সন্তান। তার দিকে তাকিয়ে ধারণা করা যায় তিনি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর। কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, তার ছোট একটা ব্যবসা আছে। তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে। কিন্তু সব কিছুর দাম বাড়াতে এবার আর চলে না। তাই বাধ্য হয়েই মার্কেটে না গিয়ে ফুটপাথে এসেছেন। তিনি জানান, ফুটপাথ আর আগের মতো নেই। এখানেও দাম অনেক। তারপরও কোনোমতে বাজেট দিয়ে কভার করা যাবে বলে মনে হচ্ছে।

বিক্রেতারা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির বাজারে সংসার চালাতে নাভিশ্বাস ওঠা নিম্ন আয়ের বেশির ভাগ মানুষেরই ঈদ কেনাকাটার আনন্দ পুরোপুরিই উবে গেছে। সংসারের বিভিন্ন খাতের বাজেট কাটছাঁট করেও তারা পরিবারের শিশু-কিশোর সদস্যদের ঈদ কেনাকাটা সারতে ব্যর্থ হচ্ছেন। তাই দোকানে মানুষের ভিড় হলেও বিক্রি কম।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/825890