২ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ১২:১৩

জ্বালানি তেল, এলএনজি কিনতে উচ্চসুদে ২৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে সরকার

জ্বালানি তেল ও এলএনজি আমদানিতে উচ্চসুদে ২৪৯ কোটি ডলার ঋণ নিচ্ছে সরকার। বাংলাদেশী টাকায় যার পরিমাণ ২৭ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা (১ ডলার-১১০ টাকা হিসাব ধরে)।

ঋণ পরিশোধে অধিকতর চাপ এবং ডলারের সঙ্কটের মধ্যে প্রধানত জ্বালানি তেল ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির জন্য তিনটি প্রস্তাবের বিপরীতে একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে উচ্চসুদে এই ঋণ নেয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। গৃহীতব্য এ ঋণ সহায়তার দ্বারা আগামী নতুন অর্থবছরের (২০২৪-২৫) জন্য জ্বালানি তেল আমদানির ব্যয় নির্বাহ করা হবে।

গত রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ‘অনমনীয় ঋণ বিষয়ক স্থায়ী কমিটি’র বৈঠকে এসব ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন বলে সূত্র জানিয়েছেন।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, তিন ঋণ প্রস্তাবের মধ্যে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য জ্বালানি তেল ও এলএনজি আমদানিতে সৌদি আরবের জেদ্দাভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইটিএফসি; ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক-আইডিবির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান) থেকে ২১০ কোটি ডলার ঋণ নেয়া হবে। ছয় মাস মেয়াদি এ ঋণের সুদের হার ডলারের সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেটের (এসওএফআর) সাথে ১ দশমিক ৮ শতাংশ এবং প্রশাসনিক ফি বাবদ দশমিক ২ শতাংশ যোগ হবে।

জানা যায়, বর্তমানে এসওএফআর ৫.৩ শতাংশে বিরাজ করছে। এটি এক বছর আগের তুলনায় ১ শতাংশ বেশি এবং গত ২০২২ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুদ হার অব্যাহতভাবে বাড়ছে। তা সত্ত্বেও দর কষাকষির পরিপ্রেক্ষিতে ইতঃপূর্বে প্রদত্ত ঋণের সমপরিমাণ সুদ হারে ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে আইটিএফসি। তবুও বিশ্বব্যাংক ও এডিবির দেয়া ঋণের সুদের হারের তুলনায় এটি বেশি। জানা গেছে, আইটিএফসির ঋণ সহায়তায় ১৯৯৭ সাল থেকে জ্বালানি তেল কিনছে বিপিসি। এ ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য জ্বালানি তেল আমদানিতে আইটিএফসি থেকে ইতঃপূর্বে ১৪০ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে বিপিসি। সুদের হার নতুন প্রস্তাবের অনুরূপ। গৃহীত এ ঋণ থেকে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮২ কোটি ডলার ব্যয় হয়েছে। অবশিষ্ট ৫৮ কোটি ডলার আগামী মে ও জুনে জ্বালানি তেল আমদানিতে ব্যয় হবে। ফলে আগামী জুলাইয়ে জ্বালানি তেল আমদানিতে কোনো অর্থ অবশিষ্ট থাকছে না। প্রাথমিক সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) এবং বাংলাদেশ তেল-গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) সমহারে এ ঋণ ব্যবহার করবে। বৈঠকে এলএনজি আমদানির জন্য ১০ কোটি ডলারের পৃথক আরেকটি ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। আইটিএফসির সিন্ডিকেটেড মুরাবাহা অপারেশনের আওতায় এ ঋণে সহযোগী অর্থায়নকারী হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচ কোটি ডলার ঋণ দেবে। সুদের হার প্রথমটির অনুরূপ।

এ ছাড়া বৈঠকে দেশের পল্লী ও শহরাঞ্চলে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর গৃহায়ন প্রকল্প (দ্বিতীয় ধাপ) বাস্তবায়নে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি) থেকে ২৮ কোটি ৯৫ লাখ ২০ হাজার ডলারের পৃথক একটি ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রথম প্রকল্পটিও একটি সংস্থা বাস্তবায়ন করেছিল।
এ দিকে এর আগে চলতি অর্থবছর বাজেটের সময় অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছিল, দেশী-বিদেশী ঋণের উচ্চ সুদের হার সরকারের ঋণ গ্রহণের ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে। যা সরকারের অর্থ ব্যবস্থায় একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে বলা হয়েছে- সরকারের অর্থ ব্যবস্থায় আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক উভয় বাজারে উচ্চ-সুদের হার, যা সরকারের ঋণ গ্রহণের ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে। অবকাঠামো, সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং সরকারের অন্যান্য উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে এই পরিস্থিতি মধ্যমেয়াদে আরো চ্যালেঞ্জিং হবে।

অর্থ বিভাগের করা সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে এই আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। অর্থ বিভাগের করা এক প্রক্ষেপণে বলা হয়েছে, ছয় বছরের ব্যবধানে বাজেট বাস্তবায়নে নেয়া ঋণের সুদ ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেতে যাচ্ছে। এর মধ্যে বিদেশী ঋণের সুদ বাড়বে সবচেয়ে বেশি। এই ব্যয় বৃদ্ধির হার ৪ গুণেরও বেশি। অন্য দিকে দেশের অভ্যন্তরীণ খাত থেকে নেয়া সুদ ব্যয় বাড়বে প্রায় দ্বিগুণ।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/825891