২ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ১২:১১

চট্টগ্রামে ভয়াবহ গ্যাসসঙ্কট ও বিদ্যুতের লোডশেডিং

গ্যাসনির্ভর বেশিরভাগ বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সিইউএফএল-কাফকো বন্ধ

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে গ্যাসসঙ্কট ও বিদ্যুতের লোডশেডিং ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বন্ধ রয়েছে গ্যাসনির্ভর অধিকাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা সিইউএফএল ও বহুজাতিক সার কারখানা কাফকো। এছাড়া পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ২৪২ মেগাওয়াট ক্ষমতার পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে চার নম্বর ইউনিটে মাত্র ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়েছে, বন্ধ রয়েছে বাকি চারটি ইউনিট। পবিত্র রমজান মাসে একদিকে দিনভর লোডশেডিংয়ে রোজাদাররা গলদঘর্ম অবস্থা হচ্ছে, অন্যদিকে রাতে তারাবির নামাজ আদায় করতে গিয়ে ঘর্মাক্ত হয়ে যাচ্ছে মানুষের শরীর। ভ্যাপসা গরম ও বিদ্যুতের আসা যাওয়ার ভেল্কিবাজিতে বিদ্যুৎ যন্ত্রণা অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।

সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলে সচল বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ২৫টি। আর এসবের বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা চার হাজার ৩৪৪ মেগাওয়াট। গতকাল সোমবার এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রে দিনের বেলায় ১৬৮৪ মেগাওয়াট, সান্ধ্যকালীন পিক আওয়ারে ২০৮১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। উৎপাদিত বিদ্যুতের মধ্যে আবার দিনের বেলায় ১০৭০ মেগাওয়াট এবং রাতের বেলায় ১২৭৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এসেছে কয়লাভিত্তিক মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বাঁশখালীর এসএস পাওয়ার হতে। বন্ধ রয়েছে রাউজানের ২১০ মেগাওয়াট করে উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন দু’টি ইউনিট, শিকলবাহা ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, শিকলবাহা পিকিংসহ বেশ ক’টি বিদ্যুৎকেন্দ্র।

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি তেল না পাওয়ায় অধিকাংশ তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। পিডিবির তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রামের বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে আনোয়ারা ৩০০ মেগাওয়াট (ইউনাইটেড) বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১৬ মেগাওয়াট, শিকলবাহা ১০৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১৭ মেগাওয়াট, জুলদা ১০০ মেগাওয়াট করে ক্ষমতাসম্পন্ন তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে একটিতে দিনের বেলায় ৩৬ মেগাওয়াট ও সান্ধ্যকালীন ৫৮ মেগাওয়াট এবং অপর ২টিতে ১২ মেগাওয়াট করে, দোহাজারি কালাইশ ১০২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৩৪ মেগাওয়াট, কর্ণফুলী পাওয়ার লিমিটেডের ১১০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রে দিনের বেলায় ২২ এবং সান্ধ্যকালীন ১৭ মেগাওয়াট, এনলিমা এনার্জির ১১৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন ছিল মাত্র ১৭ মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎসঙ্কটে চট্টগ্রামের শিল্প কারখানার উৎপাদনে যেমন বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে, তেমনি জনমনে তীব্র অস্বস্তি শুরু হয়েছে।
এদিকে গতকাল সোমবার পেট্রোবাংলা জানিয়েছে, চট্টগ্রামের বৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র ২১০ মেগাওয়াট করে উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন রাউজান তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ২টি ইউনিট এবং শিকলবাহা ৪০ ও ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র গ্যাসসঙ্কটে শাটডাউনে রয়েছে। এছাড়া দেশের অন্যতম সার কারখানা রাষ্ট্র্রায়ত্ত সিইউএফএল এবং বহুজাতিক সার কারখানা কাফকো গ্যাসসঙ্কটে শাটডাউনে রয়েছে।

পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী গতকাল চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ দেয়া হয়েছে ২২৪.৩ মিলিয়ন ঘনফুট। সূত্রমতে, চট্টগ্রামের গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে গ্যাসের চাহিদা ১৮৫ মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে গ্যাস সরবরাহ দেয়া হচ্ছে মাত্র ৩৭.৪ মিলিয়ন ঘনফুট।
পিডিবি সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামে প্রায় ১৫ শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। গতকাল সোমবার দিনের বেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ মিলে ১২ শ’ মেগাওয়াটের কাছাকাছি। পিডিবির হিসেবে এর আগের দিন রোববার দিনের বেলায় চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ মিলে ১১৬৩ মেগাওয়াট। সূত্রমতে, এর মধ্যে আবার শিল্প কারখানার জন্য বরাদ্দ প্রায় আড়াই শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রিজার্ভ রাখতে হয়। পিডিবির হিসেবে রোববার চট্টগ্রামে লোডশেডিং ছিল ২২০ মেগাওয়াট। আর গতকাল সোমবার বেলা ১১টা নাগাদ শেডিং ছিল ১১২ মেগাওয়াট। তবে পিডিবির হিসাবের সাথে বাস্তবতার বড় ধরনের ফারাক দেখা যাচ্ছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/825898