১ এপ্রিল ২০২৪, সোমবার, ১২:৪৭

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার আজ থেকে বন্ধ হলো

রোববার রাত ১২টা থেকে কলিংভিসার ভিডিআর আবেদন বন্ধ

বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার আজ সোমবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ হয়ে গেল। গতকাল রোববার বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা থেকে কলিং ভিসার ভিডিআর আবেদন অটোমেটিক্যালি (সার্ভার) বন্ধ হয়ে যায়। মালয়েশিয়া সরকারের আকস্মিক শ্রমবাজার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণে এর প্রভাব ঢাকার জনশক্তি ব্যবসায়ীদের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।

তবে ৩১ মার্চের মধ্যে যেসব কর্মীর নামে কলিং ভিসার ভিডিআর আবেদন সম্পন্ন করা হয়েছে সেগুলোর জন্য আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন থেকে ভিডিআর প্রিন্ট করার সুযোগ থাকছে। শুধু তাই নয়, কলিং ভিসা সম্পন্ন হওয়া কর্মীদের মালয়েশিয়া সরকারের বেঁধে দেয়া সর্বশেষ সময় আগামী ৩১ মের মধ্যে ফ্লাইটে পাঠাতে হবে। যেসব এজেন্সি কমী পাঠাতে ব্যর্থ হবেন, তাদের কপাল পুড়তে পারে বলে মনে করছেন জনশক্তি প্রেরণের ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা।

গত ২৯ মার্চ মালয়েশিয়ার পুত্রজায়া ইমিগ্রেশনের পরিচালক (ফরেন ওয়ার্কার ডিভিশন) আইউব বিন আবদ রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়েছে, বিদেশী শ্রমিকদের কলিং ভিসার ভিডিআর আবেদনগুলো ৩১ মার্চ রাত ১২টা পর্যন্ত রিসিভ করবে। এরপর থেকে আর কোনো আবেদন তারা রিসিভ করতে পারবে না। একই সাথে চিঠিতে এ-ও বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে ৩১ মার্চের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যেসব আবেদন জমা হবে সেগুলোর প্রিন্ট ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দেয়া হবে। এসব কর্মীকে নিয়ে আসা ফ্লাইটগুলো ৩১ মে পর্যন্ত তারা রিসিভ করতে পারবে। এরপর আর কোনোভাবে বিদেশী শ্রমিকদের প্রবেশে অনুমতি দেয়া হবে না বলে মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন পরিচালকের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

গতকাল সন্ধ্যার পর মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনের দায়িত্বশীলদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা নয়া দিগন্তকে নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, সম্ভাবনাময় শ্রমবাজারটি আমাদের হাতছাড়া হয়ে গেল। কবে নাগাদ আবার এই শ্রমবাজার খুলতে পারে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।

এক প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন, মালয়েশিয়া সরকারের যে পরিমাণ লোক দরকার ছিল সেটি পরিপূর্ণ হওয়ায় তারা বিদেশী শ্রমিক আনার ওপরে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তবে তাদের ধারণা, এবার মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বিদেশী শ্রমিকদের নামে একটি অংশ অবৈধভাবে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড হয়ে প্রবেশ করায় শ্রমিকের কোটা পূরণ হয়ে যায়। যার কারণে মালয়েশিয়া সরকার বিদেশী শ্রমিক আনার ওপরে আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।

গতকাল মালয়েশিয়া থেকে একজন ব্যবসায়ী নয়া দিগন্তকে বলেন, কলিং ভিসা বন্ধ হলেও মালয়েশিয়া সরকার প্ল্যানটেশনের জন্য লোক খুঁজে পাচ্ছে না। এর ফলে এই সেক্টরে লোক নেয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে তাদের। সেক্ষেত্রে তারা এফডব্লিউসিএমএস নয়, ম্যানুয়্যালি পদ্ধতিতে বিদেশী শ্রমিক নিতে পারে। আর প্ল্যানটেশনে ফিলিপিন্সসহ অন্যান্য রাষ্ট্র্র থেকে শ্রমিক চেয়েও না পাওয়ায় তারা শেষমেশ বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকতে পারে বলে তিনি ধারণা করছেন।

উল্লেখ্য ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক যাওয়া শুরু হয়। গতকাল রোববার রাত ১২টা পর্যন্ত কলিং ভিসার আবেদন বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশের জন্য সোয়া ৪ লাখেরও বেশি কর্মীর কোটা দিয়েছিল। শুরুতে শ্রমিক যাওয়ার গতি স্লো হওয়ায় এই সুযোগে নেপাল থেকে প্রচুর শ্রমিক দেশটিতে চলে যায়। পরে অবশ্য শ্রমিক পাঠানোর কার্যক্রম জোরেশোরে শুরু হলেও দেখা দেয় নানা সমস্যা। এর মধ্যে অনেক বাংলাদেশী শ্রমিক এখন মালয়েশিয়া গিয়ে কাজ ও বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। এর জন্য মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম কাউন্সেলর বিভাগ অনেকটা দায়ী বলে আগে থেকেই অভিযোগ উঠেছিল। কারণ তারা এসব কর্মীর কাজ এবং বেতন ঠিক রয়েছে নিশ্চিত জেনেই কর্মীর নামে সত্যায়ন দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে মালয়েশিয়া যাওয়ার পর হয় এর উল্টো। অবশ্য মালয়েশিয়া হাইকমিশন থেকে দাবি করা হচ্ছে, তারা সমস্যায় থাকা শ্রমিকদের সমস্যাগুলো সমাধান করছেন।

গতকাল ঢাকার নয়াপল্টনের একটি জনশক্তি অফিসে খোঁজ নিতে গেলে জানা যায়, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধের জন্য শুধু সিন্ডিকেটকে দায়ী করা হচ্ছে। সিন্ডিকেট তো এক লাখ টাকা নিয়েছে। কিন্তু একজন শ্রমিক মালয়েশিয়ায় গিয়েছে সাড়ে ৪ লাখ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকায়। তাহলে বাকি টাকাগুলো কার পকেটে গেছে বলে উপস্থিত একাধিক মালিক প্রশ্ন তুলেন।

এ প্রসঙ্গে একজন মালিক নয়া দিগন্তকে বলেন, এবার মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারকে যারা কুক্ষিগত করেছিল তাদের মধ্যে মালয়েশিয়ায় থাকা চাইনিজ ও কিছু বাংলাদেশী এজেন্টে সিন্ডিকেট সদস্য রয়েছেন। তারা ইতোমধ্যে ভিসা ট্রেডিং করে কোটি কোটি টাকা কামাই করে রমরমা অবস্থার মধ্যে আছে। অপরদিকে ঢাকার অনেক রিক্রুটিং এজেন্সি এসব চাইনিজ ও বাংলাদেশীদের কাছে ভিসার জন্য নগদ টাকা দিয়ে বিপদে পড়েছেন। আমার জানা মতে কয়েকটি এজেন্সির মালিক আছেন, যারা কোটি কোটি টাকা লোকসান দিয়েছেন। কিন্তু মুখ দিয়ে বলতে পারছেন না। এর মধ্যে আজ থেকে মালয়েশিয়ার নিয়োগকারী কোম্পানি কঠোর হওয়ায় অনেক এজেন্সি মালিক বেকায়দায় পড়েছেন। যেমন কেউ ২০০ ভিসার চাহিদাপত্র কিনেছিলেন। কিন্তু নিয়োগকারী কোম্পানির মালিক জানেন তার কোম্পানিতে লোক লাগবে ২০ জন। এখন মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন থেকে সরাসরি লোক নিয়োগের ওটিপি মেসেজ যাচ্ছে অ্যাপ্লায়ারের কাছে। তখন ওই নিয়োগকারী প্রয়োজনীয় লোকের চাহিদা জানিয়ে বাকিগুলো ডিলিট করে দিচ্ছেন। এখন বোঝেন ওই রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকের অবস্থা কী হতে পারে? কারণ তিনি তো ২০০ শ্রমিকের চাহিদাপত্র পাওয়ার জন্য আগেই কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ফেলেছেন। পরিস্থিতি কী হয় তা বোঝা যাচ্ছে না, যোগ করেন তিনি।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/825663