১ এপ্রিল ২০২৪, সোমবার, ১২:২৮

বিজাতীয় উৎসবের ফাঁদে মুসলিম যুব প্রজন্ম

-আলী আহমাদ মাবরুর

রোজার মাস চলছে। ২৫ মার্চ, ২০২৪। অন্য সব দিনের মতোই রোজা রেখে দিনটি শুরু করেছি। কিন্তু অনলাইনে আসতেই দেখি হোলি উৎসবের অনেক ভিডিও। প্রথমে ভেবেছিলাম, প্রতিবেশী দেশের কোনো ছবি বা ভিডিও। কিছু সময় পরেই ভুল ভাঙলো। এগুলো আমাদের দেশের, প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়েরই ভিডিও চিত্র। যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ইফতার অনুষ্ঠান আয়োজনে প্রতিবন্ধকতা, কুরআন তেলাওয়াতের আসর অনুষ্ঠানে বিপত্তি, কিংবা যে বিশ্ববিদ্যালয়ে কাওয়ালি গানের মঞ্চ পর্যন্ত গুড়িয়ে দেয়া হয়, সেখানে অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে এবং নির্বিগ্নে দোল উৎসবটি চলছে। শুধু ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় নয়, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে, আরো কিছু প্রতিষ্ঠানে এবং রাজপথে প্রকাশ্যে দোল উৎসব চলেছে। ছেলে মেয়ে একে অপরকে রং মাখিয়ে দিচ্ছে।

অথচ দোল পূর্ণিমা উৎসব বা হোলি উৎসব সকল মানুষের উৎসব নয়। এটি একদমই সনাতন ধর্মাবলম্বী তথা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি ধর্মীয় আয়োজন। তার প্রমাণ হলো, দোলযাত্রা ও গৌর পূর্ণিমা উপলক্ষে সোমবার, ২৫ মার্চ রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিভিন্ন মন্দিরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পূজা, হোম যজ্ঞ, প্রসাদ বিতরণসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দোল উৎসব ও কীর্তনের আয়োজন করা হয়। সেদিন সকালে হোলি উৎসবের সূচনাই হয়েছিল পূজা ও কীর্তনের মধ্য দিয়ে।

সুনির্দিষ্টভাবে বললে দোলযাত্রা হিন্দু বৈষ্ণবদের উৎসব। বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী, এ দিন শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনে রাধিকা এবং তার সখীদের সঙ্গে আবির খেলেছিলেন। সেই ঘটনা থেকেই দোল খেলার উৎপত্তি। এ কারণে দোলযাত্রার দিন এ মতবাদের বিশ্বাসীরা রাধা-কৃষ্ণের বিগ্রহ আবিরে রাঙিয়ে দোলায় চড়িয়ে নগর কীর্তনে বের হন। এ সময় তারা রং খেলার আনন্দে মেতে ওঠেন। তাই কোনো ধরনের বিতর্ক ছাড়াই একদম সন্দেহাতীতভাবে বলা যায় এটি হিন্দুদের একটি উৎসব। তাই হিন্দুরা এই দিবসটি পালন করলে বা হোলি খেললে কারোই কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

কিন্তু সেখানেই বেধেছে বিপত্তি। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমের এই দেশে দোল উৎসবে অংশ নেয়া বড়ো একটি অংশ মুসলিম, যারা আমার বা আপনার মতোই কোনো মুসলিম ঘরের সন্তান। বাংলাদেশের দোল উৎসব নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন পড়লাম, ভিডিও দেখলাম। ইউটিউবে ভøগও দেখা হলো। পরিস্থিতি ভয়াবহ। অন্য যে কোনো বারের তুলনায় এবারের দোল উৎসবে অংশ নেয়া মুসলিম যুবক যুবতীর সংখ্যা অনেক বেশি। রোজার মাসও এত বিরাট সংখ্যক মুসলিম যুব প্রজন্মেও দোল উৎসবে অংশগ্রহণের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি। শুধু তাই নয়, ভিডিওতে দেখলাম দোল উৎসবে অংশ নেয়া অনেকেই স্বীকারোক্তিও দিলেন যে তারা নিজেরা রোজাও রেখেছেন এবং রোজা রেখেই তারা দোল উৎসবে এসেছেন। এক্ষেত্রে তাদের কিছু মন্তব্য আসলেই ভয় জাগানিয়া।

একজন বলেছে, “মজা করতে এসেছি। যদিও রোজা আছি। রোজাটাই এবারের উৎসবের জন্য সমস্যা। রোজা তো ধর্মের জায়গায়। ধর্ম যার যার হতেই পারে কিন্তু উৎসব সবার।” আরেকজন বললেন, “রোজা রেখে এসেছি তাতে কি কোনো সমস্যা আছে? যদিও রোজা সংযমের কথা বলে কিন্তু মাঝে মাঝে এরকম ফুর্তি করাই যায়। এতে রোজা অবশ্য একটু হালকা হয়, তবে সমস্যা নেই- আশা করি আল্লাহ তা বুঝবেন।” অপরজন বললেন, “সারা বছর ধরে এই দিনটির জন্য আমরা অপেক্ষা করে থাকি। ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতার বাইরে গিয়ে, একটি সার্বজনীন উৎসব হিসেবে এই উৎসবে আমরা অংশ নেই।” উদ্বেগজনক বিষয় হলো- এগুলো কোনো অমুসলিম বা হিন্দুর কথা নয় বরং মুসলমান যুবক যুবতীদের কথা, যারা বাহ্যত রোজা রেখেছেন আবার একইসাথে দোল উৎসবেও অংশ নিয়েছেন।
বিষয়টি শুধু অংশ নেয়াতেই সীমাবদ্ধ নয়। যে ধরনের পোশাক পরিধান করে মুসলিম তরুণীরা সেখানে গিয়েছে, যেভাবে হোলি মেখেছে তার সাথে ইসলামের দূরতম সম্পর্কও নেই। অনেকে তীর্থ স্থান ভ্রমণের মতো সেদিন একটির পর একটি মন্দির পরিদর্শন করেছে এবং ধাপে ধাপে হোলি খেলায় অংশ নিয়েছে। তাদের কাছে এগুলো নিছক মজা আর আনন্দ বিনোদনের বিষয়। ধর্মকে ছাপিয়ে উৎসবকে সার্বজনীন করার যে প্রয়াস বিগত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশে চালানো হচ্ছে তারই করুণ পরিণতি হলো এই বাস্তবতা। যারা ভাবছেন, ‘এমনটা অন্য কারো পরিবারে ঘটছে, আমার পরিবারটি এমন নয়’- তারাও ভুলের মধ্যেই আছেন। বস্তুত, আমার-আপনার কারো পরিবারই এই সংকটের ঝুঁকির বাইরে নেই।

যে সংকটের কথা বলছি, তা নিয়ে কিংবা এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেকগুলো বিষয়ের অবতারণা করা যায়। একটি হলো রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। দুরভিসন্ধি না থাকলে এক ধর্মের আচারাদি বা উৎসব আয়োজনে অন্য ধর্মাবলম্বীদের অংশগ্রহণে উৎসাহ দেয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। অথচ আমাদের এখানে তাই করা হয়েছে। এতে করে ধর্মগুলোর মাঝখানে যে দেয়ালটি ছিল তা আমাদের অজান্তেই ভেঙে পড়ছে। রাসূল (সা.) যেখানে অন্য ধর্মের প্রতীকী পোশাক বা নিদর্শনও এড়িয়ে যেতে বলেছেন সেখানে আমরা এখন অন্য ধর্মের আচারাদি পালন করে যাচ্ছি কোনো ধরনের দ্বিধা ছাড়াই।

কেবল দোল উৎসবই নয়; যে কোনো ঘটনা বা দিবসকে কেন্দ্র করেই উৎসব আয়োজন বা নাচানাচি করা এখন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য অধ্যাপক দ্বীন মোহাম্মাদ নুরুল হককে বরণ করে নেয়া উপলক্ষে বিশ^বিদ্যালয়ের স্টাফদের উদ্দাম নৃত্য অনেককেই হতবাক করেছে। সোনালী ব্যাংক এর একটি আয়োজনে একজন কর্মকর্তার হিন্দি গানের তালে তালে নাচও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ভাইরাল হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাসের ভেতর একইভাবে হিন্দি গানের সুরে নাচ ও গানের আয়োজন করা হচ্ছে। ছাত্র, ছাত্রী ও শিক্ষিকা- সবাই মিলে একসাথে নাচানাচি করছে- এমন দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসেছে। শিক্ষিকার সাথে ছাত্রের ঘনিষ্ঠ হয়ে নৃত্য করার ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে। শুধু জেনারেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই নয়, মাদরাসার মতো জায়গাতেও এ ধরনের উৎসব আয়োজন হয় এবং সেখানে মায়েরা এমনকি বোরকা পরিহিতা মায়েরাও অংশ নিচ্ছে এবং নিজেদের মেয়েদেরকে অংশ নিতে উৎসাহ প্রদান করছেন। এ ধরনের আরো বেশ কিছু ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর এগুলো নিয়ে বেশ আলোচনা ও সমালোচনাও হয়েছে।

সত্যি কথা হলো, রাজনীতি থেকে ইসলামপন্থীদের কোণঠাসা করার মধ্য দিয়ে যে প্রক্রিয়ার সূূচনা হয়েছিল তারই পরবর্তী ধাপ হিসেবে শিক্ষা কার্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক থেকে ধর্মীয় উপকরণ বাদ দেয়া হয়েছে। আর সাংস্কৃতিকভাবে মুসলিমদেরকে বিপর্যস্ত করা, ইসলামী সংস্কৃতির উপকরণগুলো মুছে ফেলে সেখানে বিধর্মী সংস্কৃতি প্রবেশের এই প্রয়াস বহু বছর ধরেই চলছে। নাটক ও সিনেমায় ইসলামপন্থীদের নেতিবাচক চরিত্রে উপস্থাপন করা হচ্ছে। মিডিয়ায়, টকশোসহ নানা আলোচনায় প্রকাশ্যে ইসলামিক আচারাদিকে আরবের সংস্কৃতি হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। আর এক্ষেত্রে আমাদের ব্যর্থতা হলো আমরা নিজেদের সন্তানদের মধ্যে ইসলামিক বোধটি সেভাবে তুলে ধরতে পারিনি। এ কারণে, তারা কোনো উৎসবে যাওয়ার ক্ষেত্রে ধর্মকে এখন কোনো প্রতিবন্ধকতা বলে আর মনে করছে না। তাদের ভেতর পর্দা সম্বন্ধে সঠিক বোধ নেই। আল্লাহ ভীতি নেই। আখেরাত সম্বন্ধে কোনো সচেতনতা নেই। ধর্ম তাদের অনেকের কাছেই নিছক একটি খোলস মাত্র যা চাইলেই পাল্টে ফেলা যায়।

সাম্প্রতিক সময়ে বেইলী রোড অগ্নিকা-ের ঘটনার পর অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামক একজন তরুণীর ধর্ম পরিচয় নিয়ে যে কা-টি ঘটলো তাও ভীষণই উদ্বেগজনক। এরকম ঘটনা এটিই প্রথম কিংবা অন্য কেউ তার ইসলাম ধর্মের পরিচয় লুকিয়ে চাকরি করছে না কিংবা মন্দিরে ঘুরাফেরা করছে না তা মনে করারও কোনো কারণ নেই। মুসলিম তরুণ তরুণী অন্য ধর্মের উৎসবে যেতে আগ্রহ বোধ করছে কারণ সে অন্য ধর্মের ইভেন্টগুলোকে উৎসব হিসেবে গণ্য করতে পারছে। কিন্তু মুসলিমদেরও দুই ঈদসহ আরো কিছু বিশেষ দিন আছে সেগুলোতে আনন্দ করার অবকাশও আছে। কিন্তু কেন তারা এ দিনগুলোকে উৎসব হিসেবে বিবেচনা করছে না- সে প্রশ্নের উত্তর আমাদের বের করতে হবে। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের ধর্মীয় যে কোনো উৎসবকে জাতীয় সংস্কৃতিতে রূপান্তর করার অভিপ্রায়ে যে প্রচারনাটি চালাচ্ছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমরা কেন নিজেদের ধর্মীয় উৎসবগুলোকে জাতীয় সংস্কৃতির রূপে উপস্থাপন করতে পারছেন না- তাও চিন্তার দাবি রাখে। এক্ষেত্রে বোদ্ধা, প্রশাসন কিংবা মিডিয়ার ওপর দায় চাপানো যায়। কিন্তু আমাদের দিক থেকেও কিছু করার ছিল কিনা তাও আত্মপর্যালোচনার দাবি রাখে।

ইসলামকে বোঝার ক্ষেত্রে আমাদের অনেক ধরনের কমতি আছে। রাসুলে করিম (সা.) এর জীবনে তাঁর শৈশবের ঘটনাগুলো অনুসন্ধান করলে দেখা যায়, মূর্তিপূজা হয় এ ধরনের যেকোনো আয়োজন থেকে আল্লাহ পাক তাঁর রাসূল (সা.) কে হেফাজত করেছিলেন। আল্লাহর নামে কুরবানি হয়নি এমন কোনো হারাম গোশত রাসূল (সা.) কখনো খাননি। যখনই মূর্তি পূজো বা হারাম খাওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি হতো, তখন আল্লাহ তাআলা রাসূলকে (সা.) কোনো না কোনোভাবে হেফাজত করতেন। হয়তো নবীজী (সা.) মুর্ছা যেতেন অথবা তিনি অসুস্থ হয়ে পড়তেন কিংবা অন্য কিছু ঘটে যেতো। আমরা সেই নবিরই উম্মত। কিন্তু খেয়াল করলে দেখা যাবে, আমরা এই ধরনের বাছবিচারগুলো সেভাবে করছি না। বিজাতীয় উৎসব ও আচারাদি থেকে নিজেদেরকে হেফাজত করার জন্য সেই অর্থে কোনো সতকর্তাও অবলম্বন করছি না।

এটি খুবই স্বাভাবিক যে, ছোটবেলা থেকে একটি শিশুকে যদি আপনি ইসলাম ও ইসলামী বিধান, পর্দা, তাকওয়া ও আখেরাত ভীতি না শেখাতে পারেন, পরিপূর্ণভাবে মোটিভেশন না দিতে পারেন, তাহলে বড়ো হওয়ার পরও এসব ব্যাপারে তার কোনো আগ্রহ বা সচেতনতা থাকবে না। ফলে, খুব সহজেই অন্য ধর্মের বা বিজাতীয় সাংস্কৃতিকে সে নিজের বলে ধরে নেবে। ইতোমধ্যেই সনাতন ধর্মের অনেক ধরনের সাংস্কৃতিক প্রভাব আমাদের মধ্যে চলে এসেছে। আমাদের বিয়েশাদি, গায়ে হলুদের মতো উৎসবে নানা ধরনের পোশাক, শাড়ি লেহেঙ্গা বা অন্যান্য পোশাক বাছাই করার ক্ষেত্রে এক ধরনের হিন্দুত্ববাদী প্রভাব কাজ করে। উৎসব আয়োজনে যেভাবে ঢোল বাজিয়ে ও মুখোশ পড়ে নাচগান করা হচ্ছে, তা কী আদৌ ইসলামী সংস্কৃতির সাথে যায়? অথচ এগুলো আমাদের স্বাভাবিক কার্যক্রমের অংশ হয়ে যাচ্ছে। এসব পরিবারে অনেক মুরুব্বি আছেন, তারা ধর্মচর্চাও করেন কিন্তু তারা তাদের পরিবারগুলোকে এসব বিজাতীয় অনাচার থেকে মুক্ত রাখার ক্ষেত্রে তেমন কোনো উদ্যেগই নিচ্ছেন না।

দুর্ভাগ্যজনক আরেকটি বাস্তবতা হলো, আমাদের অভিভাবক বা আমাদের সন্তানদের বড়ো একটি অংশই আসলে নানা ইস্যুতে ইসলামের ইউনিক অবস্থান সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখেন না। তাই, ভিন্ন ধর্মের সংস্কৃতিগুলো তাদের ঘরে ও মনে কোন দিক থেকে অনুপ্রবেশ করছে তাও তারা ধরতে পারেন না। পাশাপাশি, তাদের মধ্যে একজনের সহজতা চলে আসছে। সন্তানদের প্রতি বাড়তি স্নেহ এবং অতিরিক্ত ভালোবাসা অনেক সময় অভিভাবকদের অন্ধ করে দিচ্ছে। অন্য কেউ তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও সন্তানদের প্রতি অতিরিক্ত আস্থা ও ইতিবাচক ধারণার কারণে তারা বিষয়গুলোকে নিয়ে সজাগ হচ্ছেন না।

তাছাড়া ইসলামী রাজনৈতিক দল, সামাজিক বা সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ অন্যান্য ইসলামিক কাঠামোগুলোর বেশিরভাগই নির্দিষ্ট কিছু ইস্যুতে আঁটকে যাওয়ার কারণে সামাজিক এসব অবক্ষয় এবং পারিবারিক পর্যায়ে ইসলামিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি অনেক সময়ই যথাযথ গুরুত্ব পায় না। কিন্তু ইসলাম বিরোধী মহল বিরতিহীনভাবে তাদের প্রয়াস চালিয়ে যাওয়ায় আমাদের রাজপথ, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্রমাগত ইসলামবিরোধী উপকরণগুলো অনুপ্রবেশ করে যাচ্ছে। যিনি যে ধর্ম বিশ্বাস করেন, তার আলোকে উৎসবে ও আচারাদিতে তিনি অংশ নিতেই পারেন। কিন্তু অন্য ধর্মাবলম্বীদেরকে এসব উৎসবে যুক্ত করে দেয়ার জন্য যে তৎপরতা চালানো হচ্ছে তা কেবল অসাম্প্রদায়িক চেতনা থেকেই করা হয় না- বরং এর নেপথ্যে আরো গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে।

আমাদের দেশে বিগত কয়েক বছর ধরে ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ এই শিরোনামে একটি আওয়াজ তোলা হয়েছে। এর মাধ্যমে সকল ধর্মীয় উৎসবগুলোতে অন্য সব ধর্মের মানুষের যাওয়ার একটা সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। কার্যত, এটাও বড়ো আকারের একটি দুরভিসন্ধি নিয়ে করা হয়েছে- যার মূল উদ্দেশ্যই হলো, ইসলাম আর অন্য ধর্মগুলোর মাঝখানে যে দেয়ালগুলো আছে তা গুঁড়িয়ে দেওয়া। যে বিষয়গুলোতে ইসলামের সুস্পষ্ট অবস্থান আছে তা দুর্বল করে দেয়া। যেহেতু এ ভূখন্ডে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ তাই ইসলামকে কলুষিত করার জন্য কিংবা ইসলামের অনুসারীদের বিপথগামী করার জন্য অন্য ধর্মের ধর্মীয় সংস্কৃতি বা বিজাতীয় সাংস্কৃতিক উপকরণগুলোকে খুবই ধীরে ধীরে অনেকটা স্লো পয়জনিং এর মতো করে মুসলমানদের জীবনে অনুপ্রবেশ করিয়ে দেয়া হচ্ছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে নিকট ভবিষ্যতে আমরা অজান্তেই নিজেদের স্বতন্ত্র ধর্মীয় অবস্থান অনেকটাই হয়তো হারিয়ে ফেলবো। আল্লাহ তাআলা সে ধরনের ভয়ংকর পরিস্থিতি থেকে আমাদের হেফাজত করুন। আমিন

https://www.dailysangram.info/post/552770