২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, মঙ্গলবার, ১২:৫৪

দুই মাসে বেড়েছে ১০০ থেকে ৩৫০ টাকা

গ্যাস সিলিন্ডারের দামে অস্থিরতা

দেশে গ্যাস সিলিন্ডারের দাম নিয়ে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ৪১টি জেলা থেকে প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, গত দুই মাসে সিলিন্ডারপ্রতি ১০০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। এই খাতের সঙ্গে জড়িত কয়েকটি কোম্পানি দাম বাড়ার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছে।

বিভিন্ন জেলার বাসিন্দারা মনে করছেন, সরকার পাইপলাইনের গ্যাসের দাম বাড়ানোয় ব্যবসায়ীরা সিলিন্ডারেরও দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তবে এলপি গ্যাস সিলিন্ডারজাত ও বিপণনকারী কোম্পানি বিএম এনার্জি (বাংলাদেশ) লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, গত জানুয়ারি মাসে কাঁচামালের দাম বেড়েছে টনপ্রতি ৫০ মার্কিন ডলার। এরপর ফেব্রুয়ারিতে বেড়েছে টনপ্রতি ৯২ ডলার। এই কারণে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাসেই সিলিন্ডারপ্রতি ৫০ টাকা করে (মোট ১০০ টাকা) বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, দুই মাসে কাঁচামালের দাম টনপ্রতি প্রায় ১৫০ ডলার বাড়ার মানে প্রতি সিলিন্ডারের গ্যাসের দাম প্রায় ১৫০ টাকা করে বেড়ে যাওয়া। তাই না বাড়িয়ে উপায় ছিল না। বসুন্ধরা ছাড়া সব কোম্পানি একই হারে দাম বাড়িয়েছে।

এলপি গ্যাস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত একটি সূত্র বলেছে, জানুয়ারি মাসে কাঁচামালের দাম বাড়লে সঙ্গে সঙ্গেই যে সিলিন্ডারের দাম বাড়ানো হয় এর মধ্যে একটা ফাঁকি আছে। কারণ, এলপি গ্যাসের কাঁচামালের দাম প্রতি মাসের ১ তারিখে ঘোষণা করা হয়। সেই দামের কাঁচামাল দেশে এনে সিলিন্ডারজাত করে যখন গ্রাহককে দেওয়া হবে, তখনই তার দাম বেশি নেওয়া উচিত। কিন্তু ওই বেশি দামের কাঁচামাল দেশে আসার আগে যে সিলিন্ডারগুলো বাজারে ছিল, সেগুলোর ওপরই দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতেও তাই করা হয়েছে। সব সময় এমনই করা হয়। কিন্তু এটা ঠিক নয়।

দেশের ৪১টি জেলা থেকে প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা জানান, গত জানুয়ারি থেকে সিলিন্ডার গ্যাসের দাম বাড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে বেশি দাম বেড়েছে ফেব্রুয়ারিতে। এই দুই মাসে প্রতিটি জেলায় সিলিন্ডারপ্রতি গড়ে ৭০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। ১২ কেজির এবং ১৫ কেজি তরল গ্যাসভর্তি সিলিন্ডারগুলোর দাম তুলনামূলক বেশি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

জামালপুরে সিলিন্ডারপ্রতি ৩৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এ ছাড়া চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, কক্সবাজার ও পাবনায় সিলিন্ডারপ্রতি গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে। সিলিন্ডারের খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করা হয়নি। যে যেভাবে পেরেছে দাম বাড়িয়েছে।

এলপি গ্যাসের দাম নিয়ে গ্রাহকের অভিযোগ সম্পর্কে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, এলপি গ্যাসের দাম নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে দুই মাসের মধ্যে একটি নীতিমালা করে তা কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই নীতিমালা কার্যকর হলে আর কোনো অভিযোগ থাকবে না বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

বরিশালে ৯০ টাকা

বরিশাল থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, এলপি গ্যাসের মূল্য সিলিন্ডারপ্রতি দুই দফায় ৯০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আগে যেসব কোম্পানির গ্যাস খুচরা বাজারে ৮৮০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন তা ৯৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে টোটাল কোম্পানির গ্যাসের। আগে যেখানে প্রতি সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি হতো ৯০০ টাকায়, এখন তা ৯০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯৯০ টাকা। নগরীরর সাগরদী চৌমাথা এলাকার গৃহিণী মহসিনা আক্তার বলেন, ‘শুনেছি আরেক দফা নাকি বাড়বে গ্যাসের দাম।’

টোটাল গ্যাসের বরিশাল অঞ্চলের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক রুবেল মল্লিক গত রোববার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন কোম্পানি তাদের ব্যবসায়িক কৌশল (পলিসি) অনুযায়ী গ্যাসের মূল্য বাড়িয়েছে। এটা চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বাড়ানো হয়েছে। সরকার সম্প্রতি সংযোগের মাধ্যমে সরবরাহ করা গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির যে ঘোষণা দিয়েছে তার সঙ্গে এলপি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কোনো সম্পর্ক নেই। গ্যাসের মূল্য আরেক দফা বাড়তে পারে, এমন আশঙ্কার বিসয়ে তিনি বলেন, ‘আপাতত আমাদের কাছে এ ধরনের কোনো নির্দেশনা নেই।’

যশোরে বেড়েছে ১০০ টাকা

যশোরে সব কোম্পানির গ্যাসের দাম সিলিন্ডারপ্রতি ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গতকাল শহরের গ্যাসের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, বসুন্ধরা ও ওমেরা ৯৫০ থেকে ১ হাজার, যমুনা, ক্লিনহিট ও বিএম ৯৮০ থেকে ১ হাজার ৫০ এবং সেনা গ্যাস ৯৩০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গ্যাস কিনতে আসা যশোর শহরের আবরপুর এলাকার বাসিন্দা নূর শাহানা বলেন, ‘১০ দিন আগেও যে গ্যাস ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকায় কিনেছি, এখন তা ১০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে করিম পেট্রোলিয়ামের ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববাজারে গ্যাসের দাম বেড়েছে জানিয়ে কোম্পানিগুলো দাম বাড়িয়েছে। আমাদের কিছু করার নেই।’

খুলনায় দেড় মাসে দুই দফা বেড়েছে

খুলনায় দেড় মাসের ব্যবধানে দুই দফা এলপি (সিলিন্ডার) গ্যাসের দাম বেড়েছে। এই মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে ৫০ থেকে ১৪০ টাকা পর্যন্ত। বাসাবাড়িতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে এমন তথ্য আগেই জানতে পেরে সিলিন্ডারপ্রতি গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে অনেকে অভিযোগ করেন। কিন্তু তারপরও থেমে থাকেনি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি। খুলনা এলপি গ্যাস ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি শেখ মো. তোবারেক হোসেন জানান, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর কোনো ঘোষণা ছাড়াই প্রথম দফা এলপি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়। ওই সময় ওমেরা ও টোটালগ্যাসের দাম বাড়ানো হয় ৫০ টাকা। এরপর চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি আরেক দফা দাম বাড়ে। এবার ওমেরা ও টোটাল কোম্পানি আগের দামের সঙ্গে যোগ করে ৯০ টাকা। তা ছাড়া ক্লিনহিট, যমুনা ও বিএম কোম্পানি দাম বাড়ায় ৯০ টাকা করে।

রাজশাহীতে ১৫০ টাকা পর্যন্ত

রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় গত ২০ দিনের ব্যবধানে সিলিন্ডারপ্রতি এলপি গ্যাসের দাম ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। নগরের সাগরপাড়া এলাকার ওহাব এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবদুল ওহাব বলেন, ‘কিছুদিন ধরে গ্যাসের বাজারে অস্থিরতা চলছে। বিভিন্ন কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটর যাঁরা এখানে আছেন তাঁরা বলছেন, কোম্পানি দাম বাড়িয়েছে। তাই আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’

রংপুরে ৬০-৭০ টাকা

রংপুরে হঠাৎই প্রতি সিলিন্ডারে ৬০-৭০ টাকা বেড়েছে। তিন দিন আগেও সিলিন্ডারপ্রতি গ্যাসের দাম ছিল ৯৩০-৯৪০ টাকা, যা গতকাল বিক্রি হয়েছে ৯৯০-১০০০ টাকা। এসব গ্যাস হলো টোটাল, বসুন্ধরা ও যমুনা। এদিকে সরকারিভাবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অধীনে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার সরকারিভাবে সরবরাহ না থাকায় তা বাজারে পাওয়া যায় না।

ব্যবসায়ীরা জানান, এক সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি করে লাভ হয় ২০-২৫ টাকা, যা দাম বাড়া না বাড়ার ওপর নির্ভর করে না। দাম বাড়লে ক্রেতাদের বেশি দামে কিনতে হয়। গ্যাস কোম্পানির মালিকদের লাভ।

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1092574