পদ্মা শুকিয়ে ধুধু বালুচর। চলতে পারছে না ছোট নৌকাও
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, রবিবার, ২:০৪

পদ্মা শুকিয়ে মরুভূমি

শুকনো মৌসুমের শুরুতেই পানি শূন্যতা, বালুর চরে আটকে যাচ্ছে সব

পদ্মার পাড় ঘেঁষেই অবস্থিত রাজশাহী শহর। এ নদীর পাড়ে বর্ষা মৌসুমে দাঁড়ালে প্রাণ খুলে গাইতে ইচ্ছা করে ‘সর্বনাশা পদ্মা নদী, তোর কূলকিনারা নাই’। অথচ শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই পদ্মা নদী এখন পানিশূন্য। তাকালেই মনে পড়ছে রবীন্দ্রনাথের কবিতা— ‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটুজল থাকে’। কিন্তু এখন পদ্মায় হাঁটুজলও নেই। পদ্মা নদীর বালুর স্তরে স্তরে আটকে আছে মাঝিদের নৌকা। বিশাল বালুরাশির ওপর দিয়ে চলছে গরু-মহিষের গাড়ি। অথচ বছর দশেক আগেও এই সময় পদ্মায় পানি থাকত। এখন তা শুধুই স্মৃতি। জলরাশির অপার সৌন্দর্য হারিয়ে পদ্মা এখন ধু-ধু মরুভূমি। পদ্মার এই করুণ পরিণতিতে অনেক আগেই শুকিয়ে গেছে বরেন্দ্র অঞ্চলের খাল-বিল, নদী-নালা। একই সঙ্গে দ্রুত নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। পদ্মা পানিশূন্য হওয়ার পাশাপাশি ভূগর্ভের পানির স্তরও নামছে নিচে। ঠিকমতো পানি মিলছে না গভীর নলকূপে। দেখা দিয়েছে সেচ ও পানীয় জলের সংকট। পদ্মা শুকিয়ে যাওয়ায় এরই মধ্যে মৎস্য সম্পদ ও পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে গোটা বরেন্দ্র অঞ্চল। এদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে শুষ্ক মৌসুম শুরুর আগেই পানিশূন্য হয়ে যাচ্ছে পদ্মা। এর ফলে চর ও বরেন্দ্র এলাকায় সৃষ্টি হচ্ছে বৈরী আবহাওয়া। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে এ অঞ্চলের মানুষের একদিকে যেমন স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে এর বিরূপ প্রভাব কৃষিতে পড়ায় মানুষ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বর্তমানে বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর গড়ে ১১০ ফুট নিচে অবস্থান করছে। দিন দিন তা আরও নিচের দিকেই যাচ্ছে। ফলে এ অঞ্চলে হাজার হাজার গভীর নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে রাজশাহী অঞ্চলে শুরু হয়ে গেছে জমিতে বোরো ধান লাগানোর কাজ। ভূগর্ভের পানি নিচে চলে যাওয়ায় পানি সংকট দেখা দিচ্ছে কৃষিকাজেও। কৃষকদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পানি সেচ। তারা আশঙ্কা করছেন, চলতি বোরো মৌসুমে সেচের অভাবে চাষাবাদে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে উজানে ভারতের অব্যাহত পানি প্রত্যাহারের ফলেই পদ্মার এই করুণ দশা। অথচ ফারাক্কা বাঁধের কারণে প্রতি বছর বন্যায় ডুবছে ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। সে কারণে নেপালের গান্ডাক নদীর দুই পাশেও দেখা দিচ্ছে বন্যা। ফলে ফারাক্কা বাঁধের কারণে বিরূপ প্রভাব পড়ছে তিন দেশেই। জানা গেছে, শুধু ফারাক্কা নয়, কানপুরে গঙ্গা ব্যারাজ ও হরিদ্বারে গঙ্গার পানি প্রত্যাহারে নির্মিত কৃত্রিম খালসহ অসংখ্য স্থাপনা নির্মাণ করেছে ভারত। ফারাক্কার উজানে উত্তর প্রদেশের কানপুরে গঙ্গার ওপর আরও একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া উত্তর প্রদেশ ও বিহারে সেচের জন্য প্রায় ৪০০ পয়েন্ট থেকে পানি সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এসব পয়েন্ট থেকে হাজার হাজার কিউসেক পানি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় ফারাক্কা পয়েন্টে পানির প্রবাহ কমে গেছে। এ বিষয়ে বিশিষ্ট পানি-গবেষক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কৃষি সব সময় পানির ওপর নির্ভরশীল। বরেন্দ্র অঞ্চল শুষ্ক হওয়ার কারণে বোরো চাষের জন্য বেশি পানির প্রয়োজন হয়। পদ্মা নদীতে যদি পানি থাকে তবে গভীর নলকূপ ব্যবহার করে খুব সহজেই সেচের চাহিদা মেটনো সম্ভব হয়। কিন্তু পদ্মা শুকিয়ে যাওয়ায় এর প্রভাব ব্যাপকভাবে কৃষিতে পড়ছে। কৃষকরা পানি সংকটে ভুগছেন। এর ফলে বোরো ধানে আশানুরূপ ফলন নাও আসতে পারে।