২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, রবিবার, ১:৪০

সড়কে একদিনেই ঝরল ১৭ প্রাণ

সড়কে লাশের মিছিল থামছেই না। গতকাল শনিবারও বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে অন্তত ১৭ জনের। কক্সবাজারের চকরিয়ায় পর্যটকবাহী একটি মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে নিহত হন দুই বোনসহ চারজন। অপর ঘটনায় জেলার রামুতে পিকআপভ্যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দু'জনের মৃত্যু হয়। টাঙ্গাইলে ট্রাকচাপায় মা-ছেলে, ঝিনাইদহে কলেজশিক্ষক, দিনাজপুরে স্কুলশিক্ষক, রাজবাড়ীতে কলেজছাত্রী, হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে কলেজছাত্র, শরীয়তপুরে মাদ্রাসাছাত্র, মাগুরায় নছিমনচালক, রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে সাইকেল আরোহী এবং পটুয়াখালীতে এক নারী নিহত হয়েছেন।

এছাড়া পুরান ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন এক মেডিকেল ছাত্রী। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :

কক্সবাজার :পর্যটকবাহী একটি মাইক্রোবাস ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাচ্ছিল। সকাল ৮টার দিকে গাড়িটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার হারবাংয়ের গয়ালমারা এলাকায় পেঁৗছলে মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে বাঁচাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে চারজন মারা যান। নিহতরা হলেন- বগুড়ার মান্দা উপজেলার মো. জিকুর স্ত্রী আয়েশা আক্তার শিল্পী (২০), তার বোন মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের আসাদুজ্জামান বাপ্পীর স্ত্রী কুলসুম আক্তার সুমি (২৫), মাইক্রোবাসচালক ঢাকার বাসাবোর আয়েত আলীর ছেলে আমির হোসেন (৩৫) ও গোলাম কিবরিয়া (৪০) নামে আরও এক ব্যক্তি। এ ঘটনায় আহত হয়েছে শিশুসহ আরও আটজন। তাদের চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

চিরিঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ আবুল হাসেম মজুমদার চারজন নিহত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে হতাহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া মাইক্রোবাসটি উদ্ধার করা হয়েছে। আহতদের ভাষ্য অনুযায়ী, মানসিক প্রতিবন্ধী এক ব্যক্তিকে বাঁচাতে গিয়ে মাইক্রোবাসটির চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

এদিকে, রামু উপজেলার পানিরছড়া এলাকায় ভোরে মালবাহী পিকআপ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিহত হয়েছেন রামু চৌমুহনী এলাকার ফল ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন ও সবজি ব্যবসায়ী উখিয়ার ভালুকিয়া এলাকার মো. তৈয়ব।

টাঙ্গাইল :সদর উপজেলার আশেকপুর এলাকায় গতকাল দুপুরে ট্রাকচাপায় মা ও তার শিশুসন্তান মারা গেছেন। তারা হলেন- সদর উপজেলার করটিয়া এলাকার রাজীবের স্ত্রী সাথী আক্তার (৩৫) ও তার ১০ মাসের শিশু সন্তান সাথিয়ান। সদর থানার ওসি নাজমুল হক ভূঁইয়া জানান, যাত্রী নিয়ে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা টাঙ্গাইল শহর থেকে করটিয়া যাচ্ছিল। মহাসড়কের আশেকপুরে এলে পেছন থেকে একটি ট্রাক অটোরিকশাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই অটোরিকশার যাত্রী মা ও তার কোলে থাকা শিশুসন্তান মারা যায়। আহত আরও চারজনকে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঝিনাইদহ :সকালে সহকর্মী জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে মোটরসাইকেলে করে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এহতেশামুল হক নতুন। আঠারো মাইল নামক স্থানে পেঁৗছলে তাদের মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এ সময় দু'জন গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এহতেশামুল হক নতুন। আহত একই কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এহতেশামুল হক নতুন শিক্ষকতার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে ঝিনাইদহে এক অনুষ্ঠানে আসা মাউশির মহাপরিচালক প্রফেসর ড. এসএম ওয়াহিদুজ্জামান, ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজের অধ্যক্ষ ড. বিএম রেজাউল করিম, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. কামরুজ্জামান, শৈলকূপা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুস সোবাহান ও ঝিনাইদহ পৌরসভার মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু হাসপাতালে ছুটে যান।

দিনাজপুর :সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সহকর্মী মজিবর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে নশিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলাম মোটরসাইকেলে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়কের নশিপুর এলাকায় এলে একটি যাত্রীবাহী বাস তাদের মোটরসাইকেলটি ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই রফিকুল ইসলাম মারা যান। গুরুতর আহত হয়েছেন অপর শিক্ষক মজিবর রহমান। তাকে প্রথমে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সেখান থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনার প্রতিবাদে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা স্পিডব্রেকারের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে।

রাজবাড়ী :কলেজ থেকে ভ্যানে করে বাড়ি ফিরছিলেন বালিয়াকান্দি মীর মশাররফ হোসেন ডিগ্রি কলেজের উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী নাসিমা আক্তার (১৮)। পথে উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের মেছুয়াঘাট নামক স্থানে একটি নছিমনের সঙ্গে ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। নিহত নাসিমা একই ইউনিয়নের সোলাইমান হোসেনের মেয়ে। এ ঘটনায় ভ্যানের আরও দুই যাত্রী আহত হন।

বানিয়াচং (হবিগঞ্জ) :মোটরসাইকেলে বন্ধু সোহাগকে নিয়ে হবিগঞ্জ শহরে যাচ্ছিলেন কলেজছাত্র উপজেলার বিথঙ্গল গ্রামের নয়ন ঠাকুর। পথে স্থানীয় শুঁটকি ব্রিজের কাছে বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রুতগতির একটি ট্রাক মোটরসাইকেলকে চাপা দেয়। এতে মোটরসাইকেলটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নয়ন ঠাকুর মারা যান। আহত সোহাগকে মুমূর্ষু অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

শরীয়তপুর :মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট বন্দরের হ্যামিলটন ব্রিজের কাছে বেলা ১১টায় দ্রুতগামী বাসের ধাক্কায় পথচারী মাদ্রাসাছাত্র ওবায়দুর মোল্যা (১০) ঘটনাস্থলেই মারা যায়।

নিহত ওবায়দুর মুকসুদপুর উপজেলার মুনিরকান্দি গ্রামের রবিউল মোল্যার ছেলে ও পার্শ্ববর্তী মোল্যাদি মাদ্রাসার শিশুশ্রেণির ছাত্র।

মাগুরা :সদর উপজেলার বাগবাড়িয়া এলাকার একটি ভাটা থেকে ইটবোঝাই করে নছিমন চালিয়ে মাগুরা শহরের দিকে যাচ্ছিলেন চালক সুকুর আলী। পথে পারনান্দুয়ালী ব্র্যাক অফিসের সামনে একটি কাভার্ডভ্যান নঠিমনকে ধাক্কা দিলে এটি উল্টে যায়। এতে নছিমনে থাকা ইটের চাপায় ঘটনাস্থলেই সুকুর আলী নিহত হন। পুলিশ কাভার্ডভ্যানটি আটক করেছে। তবে চালক পালিয়ে গেছে।

গোদাগাড়ী (রাজশাহী) :রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কে উপজেলার বাসুদেবপুর স্লুইসগেট এলাকায় গতকাল বেলা ১১টায় ট্রাকের ধাক্কায় সাইকেল আরোহী উপজেলার সমাসপুর গ্রামের রেজাউল করিম ঘটনাস্থলেই নিহত হন।

পটুয়াখালী :শুক্রবার বিকেলে কুয়াকাটা-ঢাকা মহাসড়কের পটুয়াখালী সদর উপজেলার বসাকবাজার এলাকায় ট্রাকের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে মোটরসাইকেলে থাকা আবদুল বারেক প্যাদা, তার স্ত্রী মাকছুদা বেগম, ও মোটরসাইকেল চালক (নাম জানা যায়নি) গুরুতর আহত হন। প্রথমে তাদের পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে গুরুতর আহত মাকছুদা বেগমকে বরিশালের শেবাচিম হাসপাতালে নেওয়ার পথে সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিনি মারা যান। হতাহত দম্পতির বাড়ি গলাচিপা উপজেলার আমখোলা এলাকায়।

http://bangla.samakal.net/2017/02/26/273076