২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, রবিবার, ১২:৫২

বেসরকারি ব্যাংকে জোরদার হচ্ছে পরিবারতন্ত্র

অবশেষে বেসরকারি ব্যাংকের পরিবারতন্ত্র জোরদার হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১ সংশোধন করে ব্যাংকে পারিবারিক আধিপত্য বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ব্যাংক কোম্পানি আইনটি সংশোধন করা হলে বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পরিবারের সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। বিদ্যমান ব্যাংক কোম্পানি আইনে এক পরিবার থেকে একই সময়ে কোনো ব্যাংকে দুইয়ের বেশি সদস্য পরিচালক হিসেবে থাকার সুযোগ নেই। এখন এই আইন সংশোধন করে পারিবার থেকে পরিচালকদের সংখ্যা দুই থেকে বাড়িয়ে তিন বা চারজন করা হচ্ছে। এ ছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকের পরিচালকদের মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি পরিচালক নিয়োগে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন নেয়ার বিষয়েও সংশোধন আনা হচ্ছে। মূলত বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) দাবির প্রেক্ষাপটে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। নতুন এসব বিধান অন্তর্ভুক্ত করে চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করতে চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে বৈঠকে বসবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

তবে বিএবির আরেকটি দাবি, পরিচালকদের অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিচালনা পর্ষদে থাকার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো নেয়া হয়নি। এ বিষয়টি অর্থমন্ত্রীর ওপর ছেড়ে দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

বিদ্যমান ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১’১৫(১০) ধারায় উল্লেখ রয়েছে, ‘১৫ আপাততঃ বলবৎ অন্য কোন আইন অথবা কোন ব্যাংক-কোম্পানীর সংঘস্মারক বা সংঘবিধিতে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইন কার্যকর হইবার ১ (এক) বৎসর অতিবাহিত হইবার পর হইতে কোন একক পরিবার হইতে দুইজনের অধিক সদস্য একইসময়ে কোন ব্যাংক-কোম্পানির পরিচালক পদে অধিষ্ঠিত থাকিবে না।’ এখন বিএবির দাবি প্রেক্ষাপটে এই ধারা পরিবর্তনের সুপারিশ করতে যাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সংশোধিত ধারায় উল্লেখ থাকবে ‘একই পরিবার থেকে তিন বা চারজনের অধিক সদস্য একই সময়ে কোনো ব্যাংক কোম্পানির পরিচালক পদে অধিষ্ঠিত থাকবে না’।

এখানে পরিবার বলতে স্বামী-স্ত্রী, ছেলেমেয়ে, ভাইবোন অথবা নির্ভরশীল যে কাউকে বোঝানো হয়েছে। বিএবি বলছে, পরিবারের মধ্যে সন্তান পৃথক ব্যবসা করছেন, আলাদাভাবে কর পরিশোধ করছেন। এর পরও পরিবারের সংজ্ঞার কারণে অনেক ক্ষেত্রে পরিচালক হতে পারছেন না। তাই এ ধারা পরিবর্তন করা জরুরি হয়ে পরেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকও ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে বলে জানা গেছে।

বাণিজ্যিক ব্যাংকের পরিচালকদের মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি পরিচালক নিয়োগে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন নেয়ার বিষয়েও সংশোধন আনা হচ্ছে ব্যাংক কোম্পানি আইনে। পরিচালক নিয়োগে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন বিধান বাতিল করা হচ্ছে। এর পরিবর্তে প্রতিনিধিত্বকারী ও স্বতন্ত্র পরিচালকেরা সাধারণ সভায় নির্বাচিত হওয়ার পর নিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন গ্রহণের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

জানা গেছে, বেসরকারি ব্যাংকের মালিকদের সংগঠন বিএবি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পরিচালকদের অনির্দিষ্টকালের জন্য থাকার বিধান রেখে আইন সংশোধনের জন্য সরকারের কাছে বলেছে। বিদ্যমান ১৫কক (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘আপাততঃ বলবৎ অন্য কোন আইনে অথবা কোন ব্যাংক-কোম্পানীর সংঘস্মারক ও সংঘবিধিতে ভিন্নতর যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইন কার্যকর হইবার পর কোন ব্যাংক-কোম্পানীর পরিচালক পদের সর্বোচ্চ মেয়াদ হইবে ৩ (তিন) বৎসর।
তবে শর্ত থাকে যে, কোন ব্যাংক-কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, যে নামেই অভিহিত হউক না কেন, ব্যতীত অন্য কোন পরিচালক একাধিক্রমে ২ (দুই) মেয়াদের অধিক উক্ত পদে অধিষ্ঠিত থাকিতে পারিবেন না।
(২) উপ-ধারা (১) অনুসারে কোন পরিচালক একাধিক্রমে ২ (দুই) মেয়াদে পরিচালক পদে অধিষ্ঠিত থাকিলে দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হইবার তারিখ হইতে পরবর্তী ৩ (তিন) বৎসর অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত উক্ত ব্যাংক-কোম্পানীর পরিচালক পদে পুনঃনির্বাচিত হইবার যোগ্য হইবেন না।

ব্যাখ্যা।Ñ এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে কোন একটি মেয়াদের আংশিক মেয়াদ পূর্ণ মেয়াদ হিসাবে গণ্য হইবে।’
এই ধারা কিছুটা পরিবর্তন করে পরিচালকদের মেয়াদ টানা ৬ বা ৯ বছর করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু ব্যাংকিং বিভাগ থেকে এ বিষয়ে আপত্তি প্রকাশ করা হয়েছে। তবুও ওপরের চাপে এই ধারারও পরিবর্তন আসছে। এ ধারাটি পরিবর্তন করা হলে বেসরকারি ব্যাংকের কোনো পরিচালক টানা ৯ বছর পরিচালনা পর্ষদের সদস্য থাকতে পারবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংকিং বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যমান ব্যাংক কোম্পানি আইনের এই ধারা আমরা অপরিবর্তিত রাখতে চাই। কিন্তু ওপরের চাপে তা পরিবর্তন হতে পারে। এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অর্থমন্ত্রী স্বয়ং নেবেন। এ বিষয়ে চলতি সপ্তাহে তার কাছ থেকে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এর পরই বিদ্যমান ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১ সংশোধনের কাজ শেষ করে তা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে। পরে তা সংসদে অনুমোদনও করা হবে।

তবে অর্থনীতিবিদেরা বলেছেন, ব্যাংক কোম্পানি আইনটি পরিবর্তন করার আগে আরো চিন্তাভাবনা করার প্রয়োজন রয়েছে। এ পরিবর্তনে ব্যাংকে পরিবারের আধিপত্য বিস্তার হবে কি না, তা ব্যাংকের জন্য ভালো কি না তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/198929