২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, শনিবার, ৯:৪৪

‘বন্দুকযুদ্ধ’ ও ‘ক্রসফায়ারে’ দুই দিনে একজন করে নিহত

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ কিংবা ‘ক্রসফায়ারে’ গড়ে দুই দিনে একজন প্রাণ হারাচ্ছেন। গত এক মাস ১৮ দিনে এভাবে নিহত হয়েছেন ২৬ জন। তবে এদের বেশির ভাগের বিরুদ্ধেই মামলা রয়েছে বলে দাবি আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর। তাদের ভাষ্য মতে, নিহতদের মধ্যে রয়েছে হত্যা মামলার আসামি, সন্ত্রাসী, চরমপন্থী, উগ্রবাদী, ডাকাত ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মামলার আসামি।

মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জানুয়ারি মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন ১৬ জন। এর মধ্যে ১৫ জন ‘ক্রসফায়ারে’ এবং একজন গুলিতে। অধিকার বলেছে, এগুলো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন ১৭ জন।

ফেব্রুয়ারিতে নিহত হয়েছেন ১১ জন। ১৯ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর মতিহার থানার বুধপাড়া এলাকায় নিহত হয়েছেন কাউসার হোসেন নামে এক ব্যক্তি। র‌্যাব জানিয়েছে, কাউসারের বিরুদ্ধে চারটি মামলা রয়েছে। সন্ত্রাসীরা র‌্যাবের ওপর আক্রমণ করলে সেখানে বন্দুকযুদ্ধ হয়। ঘটনাস্থলে কাউসার গুলিবিদ্ধ হন। ১৭ ফেব্রুয়ারি রাত আড়াইটার দিকে রাজবাড়ীর পাংশার বনপাড়া গ্রামে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মোয়াজ্জেম ফকির (৩৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। মোয়াজ্জেম উপজেলার পাট্টা ইউনিয়নের মধ্যপাট্টা গ্রামের মজিদ বাউলের ছেলে। পুলিশ দাবি করেছে, মোয়াজ্জেম চরমপন্থী সংগঠনের সদস্য এবং তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ সাতটি মামলা রয়েছে।

গত ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ রাজধানীর গোয়ালনগর, কক্সবাজার ও বগুড়ায় জেএমবি সদস্যসহ তিনজন নিহত হন। রাজধানীতে নিহত হন সাগর ওরফে জুলহাস ওরফে সিফাত ওরফে ডাকাত সাগর (৩০), বগুড়ায় নিহত হন আবু মুসা ওরফে আবুজার ওরফে আবু তালহা ওরফে রবিন ওরফে সামিউল (৩২) এবং কক্সবাজারে নিহত হন আবদুস সাত্তার ওরফে সব্বির আহমদ।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান জানান, একদল লোক তাঁতীবাজারে ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছেÑ এমন খবরের ভিত্তিতে পুলিশ সেখানে অভিযানে যায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাতদল পুলিশকে ল্য করে গুলি করে ও ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন গুরুতর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, নিহত ব্যক্তি ডাকাত সাগর বলে স্থানীয়রা শনাক্ত করেছেন।

বগুড়ার কাহালুতে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নব্য জেএমবির পাবনা, কুষ্টিয়া, নাটোর ও সিরাজগঞ্জ জেলার প্রধান সমন্বয়ক আবু মুসা ওরফে আবুজার ওরফে আবু তালহা ওরফে রবিন ওরফে সামিউল নিহতপ্রণ বলে পুলিশের দাবি। সোমবার গভীর রাতে উপজেলার পাতাঞ্জ গ্রামে কথিত এই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। পুলিশের দাবি, নিহত মুসা গুলশান হামলার মামলায় গ্রেফতার নব্য জেএমবির অন্যতম প্রধান নেতা রাজীব গান্ধীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী।

কক্সবাজারের মহেশখালীর হোয়ানক নয়াপাড়ার পূর্ব পাশের পাহাড়ে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আবদুস সাত্তার ওরফে সাব্বির আহমদ নামে একজন নিহত হন। পুলিশের দাবি, নিহত আবদুস সাত্তার একজন সন্ত্রাসী। তার নামে মহেশখালী থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি মুন্সীগঞ্জে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন শাহজালাল মিঝি নামে এক যুবক। পুলিশ বলেছে, তার বিরুদ্ধে ২২টি মামলা ছিলো। তাকে গ্রেফতারের পর রাতে অস্ত্র উদ্ধারে গেলে তার সহযোগীরা হামলা চালায়। এ সময় উভয়ের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন শাহজালাল। ১৫ ফেব্রুয়ারি পাবনার বেড়া উপজেলার দরিরচর এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন নিজাম নিস্তার নামে এক যুবক। তিনি এমপি লিটন হত্যায় সন্দেহভাজন ছিলেন বলে জানা যায়। পুলিশ দাবি করেছে, তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ বেশ কয়েকটি মামলা ছিল।

মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড অব্যাহতভাবে চলতে থাকায় দেশের আইন ও বিচারব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে এবং মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/198608