১৯ অক্টোবর ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৪১

এক সপ্তাহে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৪১৯ : মৃত্যু ২

থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় রাজধানীর সর্বত্রই মশা। আগে তো সন্ধ্যার পর ছিল মশা, এখন ২৪ ঘণ্টাই অতিষ্ঠ করে ছাড়ে। রাজধানী ঢাকায় গত সাত দিনে ৪১৯ জন আক্রান্ত হয়েছে ডেঙ্গু জীবাণুবাহী এডিস মশার কামড়ে এবং মারা গেছে দুইজন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানীবাসীর অনেকেই ডেঙ্গু জীবাণুবাহী এডিস মশা সম্বন্ধে খুব বেশি সচেতন নন। ফলে নিজেদের অজান্তেই নিজের বাসায় কিংবা আশপাশে মশা জন্মানোর জন্য পানি জমা হয়ে যাচ্ছে এবং এডিসের মতো মারাত্মক জীবাণুবাহী মশা জন্মাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের অন্যতম দায়িত্ব মশা মেরে ঢাকাবাসীকে স্বস্তি দেয়া। কিন্তু তারা এ কাজটি দক্ষতা অথবা আন্তরিকতার সাথে করছেন না। ফলে মশা জন্ম নিচ্ছে, কামড়ে মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলছে এবং এডিস মশা ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে। ডেঙ্গু জ্বরে মারাও যাচ্ছে মানুষ।
রাজধানীবাসীর অনেকে মনে করেনÑ সিটি করপোরেশন কিছু দিন পর পর নামে মাত্র ফগিং করে থাকে। ফগিং মেশিন থেকে প্রচণ্ড ধোঁয়া বেরুচ্ছে ঠিকই; কিন্তু মশা মরছে না। তারা বলছেন, এমন হতে পারে ফগিং মেশিনে মশার কোনো ওষুধ নেই, অন্য কিছু দিয়ে কেবল ধোঁয়া ছড়িয়ে রাজধানীবাসীকে সান্ত¡না দিচ্ছে। তবে ফগিং করার পরও মশা মরছে না: এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের কাউকে পাওয়া যায়নি মন্তব্য করার জন্য।

অক্টোবরের শুরু থেকে মওসুমি বায়ু বাংলাদেশ থেকে চলে যাওয়ার পর পরই পশ্চিমা ও পুবালি বায়ুর সংমিশ্রণের কারণে সারা দেশে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, থেমে থেমে বৃষ্টি এডিস মশা বেড়ে ওঠার জন্য আদর্শ পরিবেশ। এ পরিবেশে অন্য মশারও জন্ম হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতর গত সাত দিনের একটি পরিসংখ্যান দিয়ে বলছে, গত সাত দিনে রাজধানী ঢাকায় ৪১৯ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। অবস্থা জটিল হওয়ার কারণে এর মধ্যে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। বেশির ভাগ জ্বর শনাক্ত করতে দেরি হয়। হাতুড়ে চিকিৎসকের পাল্লায় পড়ে অথবা নিজেরা ওষুধ (অ্যান্টিবায়োটিক অথবা এনএসএআইডি) খেয়ে ফেলে। এ কারণে অবস্থা খুব জটিল হয়ে যায়। পরে হাসপাতালে নেয়া হলেও রোগী বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, গত ১৩ অক্টোবর পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে মারা গেছে একজন এবং আরেকজন মারা গেছে গত ১৫ অক্টোবর ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে।
গত ১৫ অক্টোবর সবচেয়ে বেশি ৭৮ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ ছাড়া ১৮ অক্টোবর ৪৫ জন, ১৭ অক্টোবর ৪১ জন, ১৬ অক্টোবর ৪৬ জন, ১৪ অক্টোবর ৭১ জন, ১৩ অক্টোবর ৭০ এবং ১২ অক্টোবর ৬৮ জন ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে। এ সংখ্যা কেবল সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর তথ্য। তবে চিকিৎসকের প্রাইভেট চেম্বারে কত রোগী এসেছে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে তার পরিসংখ্যান এখানে নেই। প্রাইভেট চেম্বারের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অথবা জেনারেল প্র্যাকটিশনাররা বলছেন, তারাও প্রতিদিন ডেঙ্গু জ্বরের বেশ কিছু রোগী পাচ্ছেন। বেশির ভাগই সুস্থ হয়ে যাচ্ছে। ফলে এদের আর হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় না।
উল্লেখ্য, ২০০২ সালে দেশের সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়। ওই বছর ছয় হাজার ২০০ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। ডেঙ্গু জ্বরে বেশি মৃত্যু হয় ২০০০ সালে। ২০১৬ সালে ছয় হাজার ৬০ জন আক্রান্ত হলেও চিকিৎসার সহজলভ্যতা, মানুষের মধ্যে সচেতনতার কারণে মৃতের সংখ্যা ছিল ১৪। ২০১৭ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় দুই হাজার ৭৬৯ এবং মারা যায় আটজন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ডেঙ্গু জ্বর হলে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত ১০৪-১০৫ ডিগ্রি (ফারেনহাইট) পর্যন্ত উঠতে পারে। সাথে মাথাব্যথা, মাংসপেশি, চোখের পেছনে ও হাড়ে প্রচণ্ড ব্যথা, ত্বকে লালচে ছোপ (র্যা শ) দেখা দেবে। এ সময় রোগীকে প্রচুর তরল খাবার খাওয়াতে হবে এবং মশারির ভেতরে বিশ্রামে রাখতে হবে। জ্বরে শুধু প্যারাসিটামল ব্যবহার করা যেতে পারে। কোনো অবস্থাতেই এসপিরিন (এনএসএআইডি) জাতীয় ওষুধ দেয়া যাবে না। হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হলে দাঁতের মাড়ি, নাক, মুখ ও পায়খানার রাস্তা দিয়ে রক্তপাত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিলম্ব না করে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/358203