২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, শনিবার, ১০:২৯

ঠেঙ্গারচরের নাম পাল্টে ‘চরমুনির’ হচ্ছে?

রোহিঙ্গাদের ঠেঙ্গারচরে স্থানান্তর করা নিয়ে বিতর্ক ও আলোচনার মধ্যেই এই চরের নাম পরিবর্তন করার একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ঠেঙ্গারচরের নতুন নাম প্রস্তাব করা হয়েছে ‘চরমুনির’। নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) বদরে মুনির ফেরদৌসের নামের সঙ্গে মিল রেখে এই প্রস্তাব করা হয়েছে। হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে নতুন নামের প্রস্তাবটি এসেছে

মেঘনা নদীতে জেগে ওঠা ঠেঙ্গারচর হাতিয়া উপজেলার সীমানায় পড়েছে। এই চরে বন বিভাগের উদ্যোগে ২০১০-১১ সালে সরকারিভাবে বনায়ন শুরু হয়। ইতিমধ্যে ৪ হাজার ৮০০ একর জমিতে বনায়ন করা হয়েছে। ঠেঙ্গারচর নামটিও বন বিভাগের দেওয়া।

বন বিভাগের দেওয়া ঠেঙ্গারচরের নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরণ করার বিষয়ে জানতে চাইলে সদ্য বিদায়ী নোয়াখালীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই।

গত বছরের ১২ জানুয়ারি নোয়াখালীর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো চিঠিতে চরের নতুন নামকরণের (প্রস্তাব) বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, হাতিয়া উপজেলার পূর্ব দিকে চরঈশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের আওতাভুক্ত কাজিরবাজার থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে নদীতে প্রায় ১০ হাজার একর ভূমি জেগে উঠেছে। এটি ঠেঙ্গারচর নামে পরিচিত। চরের নামটি শ্রুতিমধুর ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির স্বার্থে হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এর নাম ‘চরমুনির’ রাখার প্রস্তাব করেন।

নিজের নামে চরের নামকরণের বিষয়ে নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) বদরে মুনির ফেরদৌস মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার নাম তো চরমুনির নয়।’ তিনি বলেন, এটা স্থানীয়ভাবে (উপজেলা প্রশাসন) প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরে পাঠানো হযেছে।

গত ৪ জানুয়ারি নোয়াখালীর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরে পাঠানো ‘নতুন জেগে ওঠা চরের দিয়ারা জরিপকরণ-সংক্রান্ত’ চিঠিতে ঠেঙ্গারচরকে ‘চরমুনির’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগে ২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে ঠেঙ্গারচরের নাম পরিবর্তন করে চরমুনির রাখার প্রস্তাব পাঠানো হয়। এই চিঠির পর প্রস্তাবিত চরমুনির মৌজার দিয়ারা জরিপ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরকে চিঠির মাধ্যমে অনুরোধ করেন জেলাপ্রশাসক। চিঠিতে চরমুনির-সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্যও দেওয়া হয়।
ভূমি প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বলেন, দরিয়া (নদী) থেকে জেগে ওঠা নতুন ভূমির (চর) সীমানা নির্ধারণে প্রথম জরিপ করা হয় সেটিই দিয়ারা জরিপ।

ঠেঙ্গারচরের নতুন নামকরণের বিষয়ে হাতিয়ার ইউএনও খোন্দকার মোহাম্মদ রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘চরমুনির’ নামকরণের প্রস্তাবটি তিনি হাতিয়ায় আসার আগেই পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি এখনো অনুমোদন হয়নি। কেন নাম পরিবর্তনের দরকার হলো, এই প্রশ্নে ইউএনও বলেন, এই বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।

২০১৫ সালের ডিসেম্বরে হাতিয়ার ইউএনওর দায়িত্বে ছিলেন আবু হাসনাত মো. মইন উদ্দিন। এখন তিনি চাঁদপুরের হাইমচরের ইউএনও। ঠেঙ্গারচরের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব পাঠানোর বিষয়ে তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর বদরে মুনির ফেরদৌস দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ও উন্নয়নে আন্তরিকতার পরিচয় দেন। যে কারণে স্থানীয় লোকজন তাঁর (জেলা প্রশাসক) নামে কোনো একটি চরের নামকরণ করতে দাবি তোলেন। এ জন্য ঠেঙ্গারচরের নাম পাল্টে ‘চরমুনির’ রাখার প্রস্তাব পাঠান। এর আগেও একাধিক সরকারি কর্মকর্তার নামে বিভিন্ন চরের নামকরণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

নোয়াখালী বন বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, নদীতে নতুন চর জেগে উঠলে সবার আগে স্থানীয় জেলেরা সেখানে যান। সাধারণত তাঁরা (জেলেরা) নতুন চরের ভূপ্রকৃতি বা অন্য কোনো নিদর্শন বা ব্যক্তির নামে চরের নামকরণ করেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জেলেদের দেওয়া নাম অনুসরণ করে বন বিভাগ। চর যখন বাসযোগ্য হয়ে ওঠে তখন বন বিভাগের দেওয়া নাম বদলে জেলা প্রশাসন চরের নতুন নামকরণ করে। এর কারণ ভূমি জরিপসহ অন্য কাজগুলো প্রশাসনই করে থাকে।

মিয়ানমারে দমন-পীড়নের শিকার রোহিঙ্গারা বিভিন্ন সময়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। এসব শিবিরে প্রায় ৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, এসব রোহিঙ্গাকে হাতিয়ার ঠেঙ্গারচরে স্থানান্তর করা হবে।

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1089535