২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, শুক্রবার, ১২:১৪

রাজনৈতিক কারণে পানির প্রাকৃতিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে

** ভারতের আচরণ খুবই দুঃখজনক --- ড. এস আই খান

ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে বা কোনো দেশের সীমানার কারণে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ভারত চুক্তি লংঘন করে পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বাংলাদেশ ও নেপালকে বঞ্চিত করছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে নদী রক্ষা যাত্রা ও সমাবেশ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তারা এ কথা বলেন। বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশনএইড আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যতম শীর্ষনেতা ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। অ্যাকশনএইডের পরিচালক আসগর আলী সাবরীর পরিচালনায় উক্ত অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন পঞ্চগড়-১ আসনের এমপি নাজমুল হক, বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ও নদী বিশেষজ্ঞ ড. এসআই খান, জাতীয় নদী কমিশনের চেয়ারম্যান আতাহারুল ইসলাম, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, নেপালের পানি বিশেষজ্ঞ ডি এন গুপ্ত, পদ্মাপাড়ের মৎস্যজীবী তাহসেন আলী প্রমুখ।

রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে বা কোনো দেশের সীমানার কারণে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মন্তব্য করে ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পানির গুরুত্ব নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। পানি আমাদের অধিকার, পানির অপর নাম জীবন। এই পানি এক দেশ থেকে আরেক দেশে প্রবাহিত হবে, এটা তার প্রাকৃতিক অধিকার।

এক সময়ের এই কৃষিবিজ্ঞানী বলেন, আমাদের দেশে দিন দিন পানির সমস্যা আরও গভীর ও জটিল হচ্ছে। ছোটবেলা আমরা দেখেছি আষাঢ় মাস এলে পানি আসে। পুরো এলাকা পানিতে ভরে যায়। কিন্তু এখন সেই পরিমাণ পানি নেই। আগে যেসব এলাকা পানিতে ডুবো ডুবো থাকতো, নৌকা চলতো, এখন মানুষ সেখানে গরু চরায়।

নাজমুল হক প্রধান এমপি বলেন, নদীর জন্য আমাদের অবশ্যই ভাবা উচিত। বাঁচতে হলে অবশ্যই নদী নিয়ে কাজ করতে হবে।

বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ও নদী বিশেষজ্ঞ ড. এসআই খান বলেন, নদী ও পানি আমাদের সবার সম্পদ। কিন্তু পানি নিয়ে ভারতের আচরণ খুবই দুঃখজনক। আমাদের ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমেই নেমে যাচ্ছে। আগামীতে পরিস্থিতি খুবই খারাপ হবে। সমস্যা সমাধানে আমাদের এখনই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যাওয়া উচিত।

আতাহারুল ইসলাম বলেন, এক সময় আমাদের দেশে ২৪ হাজার কিলোমিটার ওয়াটার বডিজ ছিল। এখন শুষ্ক মওসুমে তা নেমে এসেছে ৪ হাজার কিলোমিটারে। তিনি বলেন, নদী আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। একশ’ বছর আগেও এদেশে প্রায় হাজারের উপরে নদী ছিল। এখন এ সংখ্যা নেমে এসেছে মাত্র ৩/৪শ’তে।

এনজিওকর্মী শামসুল হুদা বলেন, পানি সম্পর্কিত আলোচনা শুধু একটি দেশকেন্দ্রিক হলে হবে না। আলোচনাগুলো হতে হবে আঞ্চলিক সব দেশ ও পক্ষ নিয়ে।

নেপালের ডি এন গুপ্ত বলেন, নদী না বাঁচলে আমরা কেউ বাঁচবো না। আমাদের অনেক হিস্যা পাওনা বাকি আছে। আমাদের সঙ্গে পানি নিয়ে যে চুক্তি হয়েছে তার কোনোটাই ভারত পালন করছে না। একটি যৌথ নদী কমিশনের মাধ্যমে তিন দেশের একসঙ্গে কাজ করা উচিত।

অনুষ্ঠানে মৎস্যজীবী তাহসেন আলী বলেন, আমি পদ্মা নদীর একজন মৎস্যজীবী। ১৯৬০ সালে রাজশাহীতে পদ্মায় মাছ ধরতাম। আমাদের দিন ভালো যাচ্ছিল। এরপর যখন ভারত ফারাক্কা বাঁধ চালু করলো, তখন থেকেই পদ্মা ক্রমেই শুকিয়ে যাচ্ছে। এখন মাছ ধরা তো দূরের কথা, নদীতে নৌকাই চলে না। আগে যেখানে ২০-২৫ ফুট পানি ছিল, সে স্থানে এখন ৩-৫ ফুটও পানি নেই।

http://www.dailysangram.com/post/273085