১৭ আগস্ট ২০১৮, শুক্রবার, ৭:৪৪

লাইফ লাইনে শুক্রবার আতঙ্ক

শুক্রবার এলেই আতঙ্কে ভোগেন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা। এ আতঙ্কের নাম যানজট। প্রতি শুক্রবারই সাপ্তাহিক সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে এটি। ঘরমুখো মানুষের সংখ্যা বেশি হওয়ায় এদিন যানবাহনের চাপ নিতে পারছে না এ মহাসড়কে থাকা দুই লেনের মেঘনা ও গোমতী সেতু।

প্রতি বৃহস্পতিবার রাত ৮-১০টায় শুরু হওয়া এ যানজট চলে পরদিন শুক্রবার বিকাল ৪-৬টা পর্যন্ত। কখনও কখনও তা শনিবার বিকেল পর্যন্ত চলে। মাঝে মধ্যে কাঁচপুর থেকে দাউদকান্দি-ইলিয়টগঞ্জ-মাধাইয়া পর্যন্ত ৫০-৬০-৭০ কিলোমিটার সড়কজুড়ে বিস্তৃত হয় এ যানজট। ফলে চার লেনে উন্নীত মহাসড়কের সুফল পাচ্ছেন না যাত্রীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর থেকে কুমিল্লার মেঘনা সেতুর টোলপ্লাজা থেকে ইলিয়টগঞ্জ পর্যন্ত যানজট সৃষ্টি হয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে যানজটের মাত্রাও বেড়ে ৫২ কিলোমিটার দীর্ঘ হয়। যানজটের কারণে ঢাকা-কুমিল্লার দুই ঘণ্টার রাস্তার যাতায়াতে সময় লাগছে সাত থেকে আট ঘণ্টা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।
এ বিষয়ে দাউদকান্দি মডেল থানার ওসি (তদন্ত) নুরুল ইসলাম বলেন, ট্রাফিক সপ্তাহে মামলার ভয়ে ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামানো হয়নি। ওইসব গাড়ি এখন সড়কে নেমেছে। এ ছাড়া কুরবানির গরুবাহী গাড়ির চাপও বেড়েছে মহাসড়কে। এছাড়া রফতানি পণ্য সঠিক সময় বন্দরে পৌঁছে দেওয়ার কারণে ট্রাক কাভার্ডভ্যানের চলাচল বেড়েছে।

সরকারি কর্মচারী আব্দুর রহমান। ঈদ যাত্রার যানজটের ধকল থেকে রক্ষা পেতে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সায়েদাবাদ থেকে বাসে স্ত্রী সন্তানদের তুলে দিয়েছিলেন। তিন ঘণ্টা পর জানতে পারেন যানজটে থেকে মুক্তি পেয়ে বাস কুমিল্লার পথে। চাঁদপুরের কচুয়া থেকে ছেড়ে আসা সুরমা পরিবহন বাসের চালক সাইফুলের ভাষ্য, ভোর সাড়ে ৪টায় কচুয়া থেকে ছেড়ে দাউদকান্দির আমিরাবাদে সকাল ৬টা ১০ মিনিটে পৌঁছে যানজটে পড়েন তিনি। ১৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে দাউদকান্দি টোল প্লাাজায় পৌঁছাতে দুই ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে তার। যারা পরিবার এবং শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে যাতায়াত করেন তাদের ভোগান্তি আরও বেশি।

হাইওয়ে পুলিশের (ওসি) আবুল কালাম আজাদ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ১০-১১টায় ঘরমুখো মানুষের চাপ বাড়তে থাকে। সপ্তাহের অন্যদিনের চেয়ে ওইদিন গাড়ির চাপ ৩০-৪০ শতাংশ বেড়ে যায়। কখনও তা স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়। তিনি জানান, ঢাকা থেকে আট লেন মহাসড়ক এসেছে কাঁচপুর সেতু পর্যন্ত। কাঁচপুর সেতু চার লেনের। মেঘনা ও দাউদকান্দি সেতু দুই লেন করে। তাই কাঁচপুর সেতু পার হওয়া অতিরিক্ত যানবাহন এবং কাঁচপুর সেতুর পর দুই লেনের সিলেট মহাসড়ক ও চার লেনের মদনপুর সড়ক থেকে আসা যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ দুই লেনের মেঘনা সেতু নিতে পারে না। এই সংযোগস্থলে যানজট সব সময়ই লেগে থাকে।
ওসি আরও জানান, যানজট দেখলেই চালকরা নির্ধারিত লেন বাদ দিয়ে উল্টো পথে চলাচল শুরু করেন। এতে যানজট প্রকট হয়। মহাসড়কে কুমিল্লার দাউদকান্দির ইলিয়টগঞ্জ থেকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর পর্যন্ত গত ৪ দিন ধরেই যানজটের কবলে পড়ছেন যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকরা। দাউদকান্দি টোল প্লাজায় পণ্যবাহী ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের ওজন স্কেলে সময়ক্ষেপণ এবং টোল আদায়ে বিলম্বের কারণে এ যানজট সৃষ্টি হচ্ছে বলে যানবাহন চালক ও যাত্রীরা জানান। অভিযোগ রয়েছে, টোল প্লাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেসব পরিবহন ওজনের আওতায় আসে না, সেগুলোকেও অযথা সড়কে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে রাখেন। ফলে এক লেনের সড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। এতে যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগের পাশাপাশি চরম বিপাকে পড়েন কোরবানির পশু ব্যবসায়ীরা। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে জানান, ট্রাকবোঝাই গরু ও ছাগল নিয়ে সময়মতো হাটে যেতে না পারলে ব্যবসায় চরম লোকসান গুনতে হবে। ব্যবসায়ী মো. আলমগীর হোসেন বলেন, যানজটে একই স্থানে প্রচÐ রৌদ্রে গরু নিয়ে ৩ ঘণ্টা বসে পশুদের খাবার ও পানি নিয়ে চরম সঙ্কটে আছি। এভাবে চলতে থাকলে গরু মারা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে অ্যাম্বুলেন্সে রোগী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়া যাত্রীদের আরও বেশি দুর্দশায় পড়তে হয়। গতকাল দুপুরে সরেজমিন মহাসড়কের মেঘনা টোল প্লাজা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, যানজটের এক ভয়াবহ দৃশ্য। প্রচন্ড দাবদাহের মধ্যে বিভিন্ন যানবাহনের ভেতরে থাকা হাজার হাজার যাত্রীরা চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। চট্টগ্রামগামী যাত্রী আমজাদ মিয়া জানান, তাদের বাসটি গতকাল যানজটের কারণে সিমরাইল মোড় থেকে মেঘনা সেতু এলাকা পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রায় ৬ ঘণ্টা সময় লেগেছে। গাড়ি চলাচল করেছে কচ্ছপ গতিতে।

https://www.dailyinqilab.com/article/148209