ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে দীর্ঘ যানজট ; নয়া দিগন্ত -
১৭ আগস্ট ২০১৮, শুক্রবার, ৭:৩২

ঈদযাত্রার আগেই সড়ক মহাসড়কে অচলাবস্থা

পবিত্র ঈদুল আজহার যাত্রা এখনো শুরু হয়নি। এরই মধ্যে সড়ক-মহাসড়কে যান চলাচল ব্যবস্থাপনা নাজুক হয়ে পড়েছে। সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট। এই পরিস্থিতি এড়াতে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডের যানবাহন বিকল্প সড়ক বি.বাড়িয়া-নরসিংদী হয়ে ঢাকায় এসেছে। ফেরিঘাটে ৭-৮ দিন ধরে আটকে আছে যানবাহন। ভুক্তভোগীরা বলেছেন, অব্যবস্থাপনা এবং ঘাটে ঘাটে তল্লাশির নামে যানবাহন দাঁড় করানোর ফলেই এই তীব্র যানজট।

সারোয়ার নামের এক বাসচালক গতকাল ভোরে মোবাইলফোনে জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। দাউদকান্দির গোমতি টোল প্লাজা থেকে ইলিয়টগঞ্জ পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট। এরপরে সড়কের আরো কোনো কোনো অংশে তীব্র যানজট রয়েছে। দাউদকান্দির জিংলাতলা থেকে কাঁচপুর ব্রিজ পর্যন্ত সড়কে কোথাও কোথাও এই যানজট লেগে আছে। তিনি কক্সবাজার থেকে ঢাকায় আসছিলেন। যানজটের কারণে তিনি বি.বাড়িয়া হয়ে নরসিংদীর ওপর দিয়ে ঢাকায় আসেন। তিনি বলেন, এই সড়কের অন্তত ২০টি স্থানে পুলিশি চেকপোস্ট রয়েছে। সেখানে গাড়িগুলো আটকে তল্লাশির নামে অহেতুক সময়ক্ষেপণ করা হয়। যে কারণে গাড়ির গতি কমে যায় এবং যানজটের সৃষ্টি হয়। সারোয়ার বলেন, ঢাকায় আসতে রাস্তার দুই স্থানে দু’টি পরিমাপক যন্ত্র রয়েছে। এই যন্ত্রে গাড়ির ওজন মাপতে দীর্ঘক্ষণ সময়ক্ষেপণ করা হয়। যে কারণে যানজট আরো তীব্র হয়। একই সঙ্গে হয়রানির শিকার হন যাত্রী ও পরিবহন চালকরা। সারোয়ার জানান, এই সড়কে উল্টো রাস্তায় গাড়ি চলছে। পুলিশকে টাকা দিয়ে উল্টো রাস্তায় ঢুকছে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, পিকআপসহ ছোট ছোট গাড়ি। ফলে কোনো কোনো সময় এ কারণে যানজট আরো বাড়ছে। রাস্তা একেবারেই অচল হয়ে পড়ছে।
এ দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের কারণে গতকাল কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আসতে সময় লেগেছে ৭ ঘণ্টা। লাগার কথা ২ ঘণ্টা। আহমেদ আতিক নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, যারা যানজট নিয়ন্ত্রণ করবে তারাই যানজট সৃষ্টি করছে। ঈদ ঘনিয়ে আসলে যানজট আরো বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন ভুক্তভোগীরা।

এ দিকে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি ও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটেও তীব্র যানজট। শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি ঘাটের উভয়পাশে হাজারখানেক গাড়ি আটকে আছে বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে। এরমধ্যে অধিকাংশই ট্রাক। ঢাকার দিকে আসছে এমন ৭০০’র উপরে ট্রাক আটকে আছে। যারমধ্যে ৮-৯ দিন আগের ট্রাকও রয়েছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, একটি সিন্ডিকেট এই ঘাটে কৃত্রিম যানজট সৃষ্টি করে রেখেছে। তারা নাব্যতা সঙ্কটের অজুহাত দেখিয়ে ফেরিগুলো ছাড়ছে না এবং ফেরিতে কম গাড়ি লোড করছে। ফলে যাত্রীবাহী গাড়িগুলো ৭-৮ ঘণ্টা অপেক্ষা করে পার হতে পারলেও আটকে আছে ট্রাকগুলো। দিন যত যাচ্ছে গাড়ির জট ততই বাড়ছে। টার্মিনালের খোলা জায়গায় গাড়ির স্থান না হওয়ায় এখন সড়কের পাশে লাইন করে রাখা হচ্ছে গাড়ি। অধিকাংশই পণ্যভর্তি ট্রাক। দিন যত যাচ্ছে ট্রাকের খরচও বাড়ছে। ফলে এসব যানবাহনের মালিকরা উদ্বিগ্ন। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, ঈদের ঠিক আগে পুরোপুরি অচল হয়ে পড়তে পারে ফেরিঘাটগুলো। ফলে ঈদে ঘরমুখো মানুষের বাড়ি ফেরা অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ দিকে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের অনেক এলাকার ফেরিঘাটে ওঠার সংযোগ সড়ক ডুবে গেছে। ফলে ওইসব এলাকায় যানযোগাযোগ অনেকটা বিচ্ছিন্ন। বিশেষ করে ভোলা ও বরিশালের কয়েকটি স্থানে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিপ্লবী পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, ইচ্ছে করেই সড়ক-মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি করা হচ্ছে। যাদের যানজট নিরসনের দায়িত্ব তারাই যানজটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কোথাও কোথাও। তিনি বলেন, সব দোষ পড়ে পরিবহন শ্রমিকদের ওপর। কিন্তু যারা মূল সমস্যা সৃষ্টিকারী তারা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/342156