৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, রবিবার, ১০:৪৯

ট্রেজারি বন্ডের মাধ্যমে রিজার্ভ কিনে ৬০০ কোটি ডলারের তহবিল গঠনের উদ্যোগ: তহবিলের নামকরণ করা হয়েছে ‘সভরেন ওয়েলথ ফান্ড’; পিপিপি ও ইকুইটি প্রকল্পে এ তহবিল বিনিয়োগ করা হবে

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার কিনে একটি বড় তহবিল গঠন করা হচ্ছে। ট্রেজারি বন্ডের মাধ্যমে এ অর্থ কেনা হবে। বিশাল আকারের এ তহবিলের নামকরণ করা হয়েছে,‘সভরেন ওয়েলথ ফান্ড’ বা সার্বভৌম সম্পদ তহবিল। প্রাথমিক এ তহবিলের আকার নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় যা প্রায় ৪৮ হাজার কোটি টাকা। ৬০০ কোটি ডলার তহবিলের মধ্যে ৫০০ কোটি ডলার থাকবে অনুমোদিত মূলধন। এবং বাকি ১০০ কোটি ডলার থাকবে পরিশোধিত মূলধন আকারে। তবে প্রাথমিকভাবে এ তহবিলের আকার ১০০ কোটি ডলার দিয়ে শুরু করা হতে পারে। তহবিলের পুরো অর্থই বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে নেয়া হবে।
এই তহবিল গঠনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘দেশের সামস্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পাশাপাাশি অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির গতি ত্বরান্বিত রাখা’। মূলত দু’টি খাতে এ তহবিলের অর্থ ব্যবহার করা হবেÑ এর একটি হচ্ছে ‘প্রবৃদ্ধি সহায়ক ভৌত অবকাঠামো প্রকল্পগুলোয় এ প্রকল্পগুলো-পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) হিসেবে গৃহীত প্রকল্প হতে হবে। এবং অন্য একটি খাত হচ্ছেÑ বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ বা ইকুইটি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে। এ তহবিল থেকে অর্থায়ন হওয়া প্রকল্পের মেয়াদ অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদি হতে হবে। এবং প্রকল্প চলাকালে পুরো সময় ধরেই যেন আর্থিক রিটার্ন সমৃদ্ধ হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। তবে এ তহবিল থেকে সামাজিক অবকাঠামো খাতের কোনো প্রকল্পে বিনিয়োগ করা যাবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশেষ কমিটি গত সপ্তাহে এ তহবিল গঠনের সুপারিশ করেছে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, সার্বভৌম সম্পদ তহবিল হচ্ছে এমন একটি তহবিল, যা বৈদেশিক মুদ্রার মওজুদ থেকে অর্থ নিয়ে গঠন করা হয়। এর সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছে এভাবে, ‘সাধারণত একটি অর্থনীতিতে নির্ধারিত মেয়াদের দায় পরিশোধের জন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সঞ্চিত হতে থাকলে, উদ্বৃত্ত রিজার্ভ বিশেষ উদ্দেশ্যে পৃথক করে যে বিনিয়োগ তহবিল গঠন করা হয় তাই সার্বভৌম সম্পদ তহবিল বা সভরেন ওয়েলথ ফান্ড (এসডব্লিউএফ)।’
এ সম্পর্কিত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বাজেটে যথাযথ আর্থিক সংস্থান রেখে ট্রেজারি বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে কিনে এ তহবিল গঠিত হবে। তহবিলের আইনি ও সাংগঠনিক কাঠামো নির্ধারণসহ বিনিয়োগ প্রস্তাব মূল্যায়ন পদ্ধতি, অর্থছাড় ও আদায় পদ্ধতি, হিসাবায়ন ও নিরীক্ষা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রভৃতি সম্পর্কে দক্ষ ও অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞদল কর্তৃক ব্যাপক বিশ্লেষণান্তে সুনির্দিষ্ট কাঠামো, নীতিমালা ও কর্মপদ্ধতি প্রণয়নের মাধ্যমে ‘সার্বভৌম সম্পদ তহবিল’ গঠনপ্রক্রিয়া শুরু করা যেতে পারে।’
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাজেট উদ্বৃত্ত সম্পন্ন ও প্রাকৃতিক তেল বা খনিজ সম্পদসমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশগুলো এ তহবিল সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। তবে বাজেট ঘাটতির পাশাপাশি তেল বা খনিজ সম্পদবহির্ভূত পণ্য ও সেবা রফতানির এবং স্থানান্তরিত আয় (ট্রান্সফার ইনকাম) আহরিত বৈদেশিক সম্পদের উদ্বৃত্ত সম্পন্ন এমন কিছু কিছু দেশেও (যেমন চীন) বৈদেশিক রিজার্ভের একটি অংশ বিনিয়োগের জন্য পৃথক করে সার্বভৌম সম্পদ তহবিল গঠন করেছে।
এই তহবিল গঠনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ সম্পর্কিত সুপারিশে উল্লেখ করা হয়েছে, তহবিল পরিচালনায় সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য উপযুক্ত জবাবদিহিতা ও যথাযথ দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের হিসাবপত্র নিরীক্ষা করা এবং তহবিল ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ আইন, বিধিবিধান ও সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করছে কি না তা দেখার জন্য শক্তিশালী নিরীক্ষা ব্যবস্থার বিধান রাখতে হবে। তা ছাড়া তহবিলের ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ এবং জনস্বার্থ রক্ষায় তহবিলের সব ধরনের কার্যক্রম স্বচ্ছতার সাথে পরিচালনার লক্ষ্যে অর্থায়নকৃত প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য (আর্থিক সম্ভাব্যতা রিপোর্ট অভ্যন্তরীণ আয়হার, প্রকল্পের অন্যান্য অংশীদারদের তথ্য ইত্যাদি) এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম সম্পর্কিত তথ্য, (পর্ষদের কার্যবিবরণী, বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সুপারিশ প্রতিবেদন, বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন ইত্যাদি) সর্বসাধারণের জানার জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার বিধান রাখা উচিত হবে।
http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/193278