২৭ মে ২০১৮, রবিবার, ১১:৩৯

রমজানে যানজট ও গণপরিবহণ সংকট: ভোগান্তি ও প্রতারণার ফাঁদে যাত্রীরা

যানজট, গণপরিবহণ সংকট সাথে অতিরিক্ত ভাড়া তো আছেই। রমজান মাসেও গণপরিবহনে ভোগান্তির শেষ নেই। একটু আরামের আশায় সিটিং সার্ভিস বাসে উঠতে গিয়েও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও ২৮ শতাংশ যাত্রী গণপরিবহনে দাঁড়িয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের শিকার হচ্ছেন ৯৮ শতাংশ যাত্রী। রমজানে নগরীতে যাতায়াতকারী যাত্রীদের ভোগান্তি নিয়ে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির এক জরিপে এই চিত্র উঠে এসেছে।
রমজান এলেই মানুষের ব্যস্ততা বাড়ে। নগরীর ফুটপাতগুলো দখল করে নেয় হকাররা। শুধু ফুটপাত নয়, রাস্তাও তাদের দখলে চলে যায়। এতে করে যানবাহন চলাচলে বিঘœ ঘটে সৃষ্টি হয় যানজটের। সকাল থেকে এ যানজট শুরু হয়ে চলে বিকাল পর্যন্ত। গতকালও এর ব্যতিক্রম ছিল না। প্রচন্ড তাপদাহে যানজটে আটকা পড়ে যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। পুলিশ জানায়, সরকারী অফিস আদালত বন্ধ থাকার পরেও গতকাল রাস্তায় যানবাহনের চাপ ছিল বেশি। বিশেষ করে মার্কেট ও বিপনীবিতাণকে কেন্দ্র করে গাড়ির চাপ ছিল অত্যাধিক। তাতে যানজটের সৃষ্টি হয়ে সোনারগাঁও মোড়, ফার্মগেইট, বাংলামোটর, মালিবাগ মোড়, বেইলী রোড, পল্টন, গুলিস্তান, নিউমার্কেট, ধানমন্ডি, জিগাতলা, গ্রিন রোড, কাঠালবাগান, মহাখালী, তেজগাঁও সাতরাস্তা, কাওরানবাজারসহ নগরীর ব্যস্ততম এলাকাগুলোতে যানজটে আটকা পড়ে শত শত গাড়ি। এতে করে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। ইফতারির আগে সবাই একযোগে ঘরে ফেরার চেষ্টায় বিকালে রাস্তায় আবার নতুন করে চাপের সৃষ্টি হয়। অবশ্য আগেভাগেই সব চাপ এক সাথে কমে যায়।
যাত্রীকল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পবিত্র রমজানের শুরু থেকে পরিবর্তিত অফিস সময় অনুযায়ী যাতায়াতে নগরীর যাত্রী সাধারণ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এই সময় সকাল ৭টা থেকে বেলা ১১টা, দুপুর ২টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত নগরীতে চলাচলকারী বাস-মিনিবাসের প্রায় ৯৬ শতাংশ সিটিং সার্ভিসের নামে দরজা বন্ধ করে যাতায়াত করছে। এতে নগরীর মাঝপথের যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এসব বাস সরকার নির্ধারিত ভাড়ার পরিবর্তে কোম্পানি নির্ধারিত অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। এতে নিম্নআয়ের লোকজনের যাতায়াত কষ্টকর হয়ে উঠেছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পর্যবেক্ষণকালে ৩১০টি বাস ও এর ৫৫৭ জন যাত্রী, ২১৪টি অটোরিকশা ও ১৮৫ জন যাত্রী, ৫৬ জন ট্যাক্সিক্যাব যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়। জরিপে অংশ নেওয়া ৮২ শতাংশ যাত্রী রমজানে গণপরিবহন ব্যবস্থায় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ৯২ শতাংশ যাত্রী প্রতিদিন যাতায়াতে দুর্ভোগের শিকার হন। ৬২ শতাংশ যাত্রী চলন্ত বাসে ওঠানামা করতে বাধ্য হন। ৯৩ শতাংশ যাত্রী জানান, হয়রানির শিকার হলেও অভিযোগ কোথায় করতে হয় তা জানেন না তারা। তবে ৮৮ শতাংশ যাত্রী মনে করেন, অভিযোগ করে কোনও প্রতিকার পাওয়া যায় না বলেই অভিযোগ করা হয় না।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, যাত্রী সাধারণের অফিসযাত্রা এবং অফিস ছুটি শেষে ইফতারকে কেন্দ্র করে ঘরমুখো যাত্রাকে টার্গেট করে নগরীতে চলাচলকারী বেসরকারি বাসের সবকটি এখন রাতারাতি সিটিং সার্ভিস বনে গেছে। এসব বাস বিশেষত ইফতারের সময় যাত্রীদের ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দ্রুত গন্তব্যে যাত্রা করছে। একমাত্র বিআরটিসি বাস ও হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানির বাস মাঝপথের যাত্রীদের বাদুড়ঝোলা হয়ে যাতায়াতের একমাত্র ভরসা হয়ে ওঠেছে। যাত্রী ভোগান্তির এ চিত্র মিডিয়ায় গুরুত্ব পেলেও মালিক সমিতি বা সংশ্লিষ্ট কোনও সরকারি-বেসরকারি কর্তৃপক্ষের তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি।

জরিপে আরও উল্লেখ করা হয়, নগরীতে চলাচলকারী সিএনজি অটোরিকশার ৯৪ শতাংশ চুক্তিতে চলাচল করছে। ৯৮ শতাংশ মিটারের অতিরিক্ত ভাড়া বা বকশিশ দাবি করছে। আগে ১০ টাকা বকশিশ চাইলেও রমজানে ৩০-৫০ টাকা বেশি চাওয়া হচ্ছে। যাত্রীদের কাঙ্খিত গন্তব্যে যেতে রাজি হয় না ৯০ শতাংশ অটোরিকশা। পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, শনির আখড়া, গুলিস্তান, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, পোস্তগোলা, শাহবাগ, ফার্মগেট, মিরপুর-১০, মহাখালী, আগারগাঁও, ধানমন্ডি, বনানী, বারিধারাসহ নগরীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ এলাকার রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও ট্যাক্সিক্যাবের দেখা মেলে না। এতে পাঠাও, উবারসহ অ্যাপসভিক্তিক পরিবহনগুলো যাত্রীদের কিছুটা স্বস্তি দিতে পাশে দাঁড়াচ্ছে। প্রয়োজন অনুযায়ী যাত্রী ছাউনি না থাকা বা যাত্রী ছাউনিগুলো বেদখলে থাকায় বৃষ্টিতে নাজুক পরিস্থিতিতে পড়ছেন যাত্রীরা।

https://www.dailyinqilab.com/article/133466