২৪ মে ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:২৭

বিদেশী নিয়ন্ত্রণে পোশাক শিল্প

বাংলাদেশের পোশাক খাত দিন দিন প্রতিবেশি দেশের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। দেশের সবচেয়ে বড় রফতানী খাত তৈরি পোশাক শিল্প এখন চরম সঙ্কটে। এ শিল্পের সাথে জড়িয়ে আছে দেশের ৪০ লাখ শ্রমিক। বৈদেশিক মুদ্রার ৮০ ভাগের বেশি অর্জিত হয় এ খাত থেকে। প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান খাত এটিই। কিন্তু সরকারের উদাসীনতা এবং গার্মেন্ট মালিকদের অর্থলিপ্সা ও মালিকদের যথাযথ প্রদক্ষেপের অভাবের কারণে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে তৈরি পোশাক শিল্প। এই অবস্থায় উদ্বিগ্ন দেশের সাধারণ গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা। দেশে তৈরি পোশাক ব্যবসার লাভের অংশ হুন্ডি ও ভুয়া এলসির মাধ্যমে টাকা যাচ্ছে ভারতে। আর সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। পূর্বের তুলনায় বর্তমানে এই চক্রান্ত আরও গভীর হয়েছে। তাই উদ্বেগও বেড়েছে যা ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যেই এখন স্বীকার করছেন। বর্তমানে দেশে বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত বায়িং হাউজের সংখ্যা ৯১১টি এবং বিজিবিএ’র ১৭৯টি। এ দুই সংগঠনের আওতাধীন নয়, এমন বায়িং হাউজ রয়েছে প্রায় ৮ শতাধিক। দেশে তৈরি পোশাক কেনাবেচায় নিয়োজিত আছে দু’হাজারের বেশি বায়িং হাউজ। সেই হিসাবে দেশে প্রায় ৭০ শতাংশ বায়িং হাউসের মালিক ভারতীরা। যা বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পোশাক শিল্পের চ্যালেঞ্জ এবং উত্তরণের উপায় শীর্ষক গবেষণা প্রবন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর পরিচালক ড. শফিক উজ জামানও বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় রফতানী খাত তৈরি পোশাক শিল্প এখন চরম সঙ্কটে।
তিনি বলেন, আমাদের পোশাক শিল্পের আরেকটি দুর্বলতা হলো গুটিকয়েক বাজার নির্ভরতা। সাম্প্রতিক দুর্ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিদেশী ক্রেতারা নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন এবং কমপ্লায়েন্স না মানলে পণ্য ক্রয় না করার হুমকি দিয়েছেন। ক্রেতা গোষ্ঠী বাংলাদেশে পৃথিবীর সবচাইতে নিম্ন মজুরির শ্রম ক্রয় করে ১০ ডলারের শার্ট ৪০ ডলারে বিক্রি করে সর্বোচ্চ মুনাফা করছেন। বাংলাদেশের মত দরিদ্র দেশ আমেরিকায় পোশাক রফতানীতে ফ্রান্সের চাইতে পাঁচগুন বেশি ট্যাক্স দেয়। অর্থাৎ বাংলাদেশ ৫ বিলিয়ন ডলার রফতানি করে যে ট্যাক্স দেয়, ফ্রান্স ৩০ বিলিয়ন ডলার রফতানি করে একই পরিমাণ রাজস্ব বা ট্যাক্স দেয়। অর্থাৎ যদি ফ্রান্সের সমান ট্যাক্স দিতো তাহলে বাংলাদেশ প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করতে পারতো যা দিয়ে ৪০ লক্ষ পোশাক শ্রমিকের নিরাপত্তা অনেকাংশে নিশ্চিত করা যেত। অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প খাতে বর্তমানে প্রায় ২৫ হাজার বিদেশী কর্মরত আছে। এদের মধ্যে ২০ হাজারই ভারতীয়। একেক কারখানায় ১০ থেকে ২০ জন ভারতীয় মিলে গড়ে তুলেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। অপেক্ষাকৃত অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে দাবিদার এসব কর্মকর্তা এতটাই দাপুটে অবস্থানে রয়েছে যে, মালিকরা চাইলেও তাদের মাঝে বা তাদের ওপরে কোনো বাংলাদেশীকে বসাতে পারে না। তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিজের বিশ্বস্ত কোনো বাংলাদেশী বা আত্মীয়স্বজনকে বসাতে চাইলে একযোগে প্রতিরোধ গড়ে তোলে তারা। পেশাগত কারণেই আমেরিকা-ইউরোপে অবস্থানরত ভারতীয় বংশোদ্ভূত ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সাথে তাদের সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। তারপর কৌশলে নিজ কর্মস্থল কারখানাটি বিক্রি করে দেয় ভারতীয়দের কাছে। নিজেদের অস্থাভাজন এই মিড লেবেল ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে তারা একের পর এক নামকরা কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছে, আবার কৌশলে কিনেও নিচ্ছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, একদা বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্পের অহঙ্কার হিসেবে পরিচিত এসকিউ, ক্রিস্টাল, মাস্টার্ড, হলিউড, শান্তা, রোজ, ফরচুনা, ট্রাস্ট, এজাক্স, শাহরিয়ার, স্টারলি, ইউনিয়ন প্রমুখ দেশসেরা গার্মেন্ট কারখানার মালিক এখন ভারতীয়রা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিজ দেশের ওই ম্যানেজারদের যোগসাজশে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ, আমেরিকান, কানাডিয়ান নাগরিকেরা কিনে নিয়েছে এসব কারখানা।

গার্মেন্ট মালিকরা জানিয়েছেন, দেশের ২০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি শিল্প গার্মেন্ট খাতের ওপর সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু করেছে প্রতিবেশী দেশটি। এ দেশীয় এজেন্টদের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয়েছে শ্রমিক অসন্তোষ। পাশাপাশি তীব্র আক্রমণ করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় গণমাধ্যমের মাধ্যমে। বিদেশিরা শুধু দেশের নাগরিকদের কর্মসংস্থানেই সংকট সৃষ্টি করছেন না, একই সঙ্গে তাঁরা দেশের প্রচলিত আইন উপেক্ষা করে রাজস্বও ফাঁকি দিচ্ছেন। বর্তমান আইনে বিদেশিদের অর্জিত আয়ের ৩০ শতাংশ কর দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশি কোনো প্রতিষ্ঠান অবৈধ কিংবা ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া বিদেশিদের নিয়োগ দিলে ওই কোম্পানির প্রদেয় আয়করের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ বা কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান আছে। তবে এ জরিমানা কাউকে কখনো করা হয়েছে কি না তা কেউ জানাতে পারেনি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ নিয়ম মানছেন না বিদেশীরা।
সূত্র জানায়, আমাদের মোট রফতানি আয়ের প্রায় ২০ শতাংশ আয়ই সাভার, আশুলিয়া এবং কাঁচপুরের পাঁচ শতাধিক গার্মেন্ট কারাখানার উৎপাদিত পণ্য রফতানি করে অর্জিত হয়। আর টাকার অংকে এর পরিমাণ হবে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ। আর এ কারণেই পার্শ্ববর্তী ভারতসহ আরো কয়েকটি দেশ আমাদের এই অঞ্চলের গার্মেন্ট শিল্পকে টার্গেট করেছে।
অপরদিকে ভারতীয়রা বেশ আট-ঘাট বেঁধেই এদেশের গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংসে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে চলছে। জন্মসূত্রে ভারতীয় হলেও বাংলাদেশে তারা বসবাস করে নিজ দেশের মতোই। ভিসা-টিকিটের বালাই নেই। ইচ্ছেমতো এ দেশে আসে, ইচ্ছে হলেই ভারতে যায়। বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিয়ত লাখ লাখ ডলার নিয়ে গেলেও সরকারকে কোনো ট্যাক্স দেয় না। সরকারি বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্যও তাদের ঘাটায় না। তাদের সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের কথিত ‘প্রাণ’(?)। মার্চেন্ডাইজার, প্রোডাকশন ম্যানেজার, জেনারেল ম্যানেজার, ফাইন্যান্স ম্যানেজার, অ্যাকাউন্টস ম্যানেজার, ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং ম্যানেজার, কোয়ালিটি কন্ট্রোলার প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ভারতীয় নিয়োজিত। অর্ডার আনা থেকে শুরু করে পণ্য প্রেরণ পর্যন্ত সব গুরুত্বপূর্ণ কাজই হয়ে থাকে অপেক্ষাকৃত ‘অধিক’(?) যোগ্যতাসম্পন্ন এসব কর্মকর্তার হাত দিয়ে। কারখানার মালিক ও সাধারণ শ্রমিকদের মাঝে ‘সেতুবন্ধনের’(?) কাজটিও করে থাকে তারা। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রফতানী বাণিজ্যে ৮০ শতাংশ অবদান রক্ষাকারী বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প খাতের বেশির ভাগ উদ্যোক্তারই সার্টিফিকেট গত শিক্ষা কম। তাদের কারখানার বড় বড় কর্মকর্তারা হচ্ছে ভারতীয়রা। এরাই মন চাইলে কারখানার ভালো করছে, আবার মনের মধ্যে কোনো দুরভিসন্ধি এলে মালিকপক্ষকে কৌশলে পথে বসিয়ে দিচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান খাত দেশের তৈরি পোশাক শিল্প নিয়ে চলছে নানামুখী ষড়যন্ত্র। দেশের চলমান অবস্থায় গার্মেন্ট সেক্টরের এই অস্থিরতার পেছনে ইন্ধন দেয়ার জন্য সরকার মালিক বা শ্রমিকদের পক্ষ থেকেও বরাবরই অস্বীকার করা হচ্ছে। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে দেশের উদীয়মান এই শিল্পকে ধ্বংস করতে অস্থিরতা তৈরি করে প্রকৃত অর্থেই ফায়দা লুটছে কারা?

সচেতন মহল এটাও মনে করছেন বর্তমান গার্মেন্ট শিল্পের মতো এ ধরনের অনেক ষড়যন্ত্র আমাদের নিকট অতীতে পাট শিল্পকে নিয়েও হয়েছে। আর একারণেই বাংলাদেশ এখন পাটের কোন শিল্প নেই অথচ এই পাট শিল্পটি এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করছে আমাদেরই প্রতিবেশী ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। সেখানে বাংলাদেশের পাটের মাধ্যমেই অনেক শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। অথচ পাট উৎপাদন করেও আমরা এই শিল্প ধরে রাখতে পারি নাই। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত আট থেকে ১০ বছরে যেসব কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ হয়েছে তার বেশির ভাগই ছিল কমপ্লায়েন্ট। এসব কারখানায় কর্মপরিবেশ ভালো, নিয়মিত বেতন-ভাতা দেয়া হয়, ওভার টাইম দেয়া হয়, টিফিন থেকে শুরু করে বেশির ভাগ সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রেই এসব কারখানার শ্রমিকরা সন্তুষ্ট। অথচ কখনো রাস্তায় সড়ক দুর্ঘটনায় শ্রমিক মৃত্যুর অজুহাতে, কখনো শ্রমিক গুম কিংবা টয়লেটে ভূত থাকার মতো গুজব ছড়িয়ে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করানো হচ্ছে এসব কারখানায়।

অপরদিকে যেসব কারখানায় নিয়মিত বেতন-ভাতা দেয়া হয় না, কাজের পরিবেশ নিম্নমানের এবং কথায় কথায় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটছে- শ্রমিক অসন্তোষ বা ভাঙচুরের ঘটনা এসব কারখানায় অনেক কমই ঘটছে। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তৈরি পোশাক শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল উদ্যোক্তা জানান, যেসব কারখানা বড় ও কমপ্লায়েন্ট সেগুলোর কাজের ভলিউমও বেশি। মোটা অঙ্কের বেতন দিয়ে বিদেশী কর্মকর্তাদের এখানে নিয়োগ করা হয়। তাদের অনেক সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়। কিন্তু কোনো কারণে মালিকের ওপর ক্ষুব্ধ হলে কিংবা কারখানার মালিক হওয়ার খায়েশ হলে তারা শ্রমিক অসন্তোষের মতো ঘটনা ঘটিয়ে কারখানা ধ্বংস করে দেয়। স্থানীয় মাস্তান, রাজনৈতিক টাউট, ঝুট ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পক্ষকে লেলিয়ে দেয় কারখানার বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে ছোটখাটো কারখানাগুলো নিজেরা কোনো কাজ আনতে পারে না। অন্য কারখানার কাজ তারা সাব কন্ট্রাক্টে করে থাকে। এসব কারখানায় মোটা অঙ্কের বেতন দিয়ে বিদেশীদের (ভারতীয়দের) পোষা হয় না। ফলে উসকানি দেয়া হয় না, ভাঙচুরও হয় না। জানা গেছে, বাংলাদেশে আটটি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল বা ইপিজেডে এখন অনুমতি নিয়ে বৈধভাবে কাজ করেন তিন হাজারের মতো বিদেশী। বিনিয়োগ বোর্ডের অনুমতি নিয়ে দেশে কাজ করেন ১৩ হাজার বিদেশী কর্মী। আর এনজিও ব্যুরোর অনুমতি নিয়ে কাজ করা বিদেশী কর্মীর সংখ্যা ৫০০। সব মিলিয়ে সাড়ে ১৬ হাজার বিদেশী কর্মী সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অনুমতি নিয়ে বাংলাদেশে বৈধভাবে কাজ করছেন। তবে বাস্তবে এ সংখ্যা বহুগুণ বেশি। বাংলাদেশে আসলে কতসংখ্যক বিদেশী নাগরিক কাজ করেন, তার সঠিক তথ্য সরকারের কোনো বিভাগের হাতেই নেই।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ২০১৫ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৫ লাখ ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে কাজ করেন। তারা তাদের দেশে এক বছরে ৩ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার সমান। বাংলাদেশ ভারতে পঞ্চম রেমিট্যান্স প্রদানকারী দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই সহজেই অনুমান করা যায়, বিনিয়োগ বোর্ড থেকে যেসব ভারতীয় কর্মী ওয়ার্ক পারমিট নিয়েছেন, তার বাইরে বহুগুণ বেশি রয়েছেন, যারা অবৈধভাবে বাংলাদেশে আছেন। আর তাদের অর্জিত অর্থ অবৈধ পথে হুন্ডির মাধ্যমেই পাচার করা হয়ে থাকে।

ভারতের রুপির অবমূল্যায়নের কারণে দেশের গার্মেন্ট শিল্পে প্রবৃদ্ধি কয়েক মাসে বেশ কমে গেছে বলে দাবি করেন বিজিএমইএ’ মিডিয়া অফিস। রুপির বিপরীতে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এই শিল্পের প্রবৃদ্ধি গত কয়েক মাসে বেশ কমেছে। আগে যেখানে প্রবৃদ্ধি হতো ১০ থেকে ১৫ শতাংশ, তা গত কয়েক মাসে হয়েছে মাত্র ২ শতাংশ। ভারতের রুপির অবমূল্যায়নের রুপির ২৭ শতাংশ অবমূল্যায়ন হয়েছে। টাকার মান ৮ শতাংশ বেড়েছে। এতে ভারত ৩৫ শতাংশ বেশি সুবিধা পাচ্ছে। ভারত তার ১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়ার্কার রাইটস কনসোর্টিয়াম (ডব্লিউআরসি) নামের একটি প্রতিষ্ঠান তাদের এক বিশ্লেষণে দেখিয়েছে, প্রতিটি পোশাকে মাত্র দশ সেন্ট বাড়িয়ে দিলেই বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পকে বিশ্বমানের করা সম্ভব। ন্যূনতম মজুরী প্রসঙ্গে লিখেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস। এছাড়া বিবিসি’ও শ্রমিকদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে সংবাদ প্রচার করে বিভিন্ন সময়। অথচ এরা বলছে না, আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের বাড়তি দামে বাংলাদেশ থেকে পোশাক কিনতে। অথচ আন্তর্জাতিক ক্রেতারা প্রতিটি পোশাক ৪ থেকে ৮ গুণ পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি করে। বাংলাদেশ থেকে একটি পোশাক ১০০ ডলারে কিনলে সেটি ইউরোপ-আমেরিকার দোকানে বিক্রি হয় ৪শ থেকে ৮শ ডলারে। বিপুল অঙ্কের লাভ করলেও এদের বাড়তি দাম দেয়ার জন্য চাপ না দিয়ে উল্টো বাংলাদেশের গার্মেন্ট মালিকদের ওপর চাপ দিচ্ছে। বাংলাদেশের গার্মেন্ট খাত ধ্বংসের পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই তারা এসব কাজ করছে। বিনিয়োগ বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, গত কয়েক বছরে ভারতীয় নাগরিকরা বাংলাদেশের ৩৫টি তৈরি পোশাক কারখানায় ৮ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। বাংলাদেশে কারখানা খুলে বসা ভারতের উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে শাহী এক্সপোর্টস, হাউজ অব পার্ল ফ্যাশনস, জে জে মিলস, আমবাত্তুর ক্লথিং ইত্যাদি। পোশাক শিল্প দেশের শিল্পায়নে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ৪০ লক্ষ শ্রমিককে উৎপাদনশীল কাজে অন্তর্ভূক্ত করে দারিদ্র বিমোচনে অবদান রেখেছে। এ শিল্পের সম্ভাবনা প্রচুর। পোশাকের চাহিদা কোনদিনই কমবে না। বর্তমানে বিশ্বে এই পণ্যের বাজার ৪৫০ বিলিয়ন ডলারের। চীন একাই ১৬০ বিলিয়ন ডলার বা ৩৫.৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। সে তুলনায় বাংলাদেশের অংশ ৫.৪ শতাংশ (২৪.৪৯ বিলিয়ন ডলার)।

 

http://www.dailysangram.com/post/331564