৩১ ডিসেম্বর ২০১৬, শনিবার, ২:২৫

বছর না যেতেই ডিজাইন পরিবর্তনে প্রকল্প প্রশ্নবিদ্ধ: মেয়াদ ৭ মাস বাকি, অগ্রগতি মাত্র ৬ শতাংশ ; ১০৪ কোটি টাকা ব্যয় ও ২ বছর মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব ; খাতওয়ারি ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব কমিশনের কাছে অত্যধিক

প্রকল্প ব্যয় ২৫ কোটি টাকার বেশি হলে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের বিধান রয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু প্রকল্প সমীক্ষা ছাড়াই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা থেকে পাস করানোর জন্য নামকাওয়াস্তে প্রস্তাবনা দাখিল করা হয়। পরে এসব প্রকল্প প্রকৃত আকারে নিতে গিয়ে ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবনা আনা হয় অনুমোদনের পর বছর পার না হতেই। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কক্সবাজার জেলাধীন ক্ষতিগ্রস্ত পোল্ডারগুলোর পুনর্বাসনে নেয়া প্রকল্পটির ক্ষেত্রে একই চিত্র পাওয়া গেছে। প্রকল্পের মেয়াদ মাত্র সাত মাস বাকি থাকলেও কাজের বাস্তব অগ্রগতি মাত্র ৬ শতাংশ। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রকল্প বাস্তবায়নের এক বছরের মধ্যে ডিজাইন পরিবর্তন প্রশ্নবিদ্ধ।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বঙ্গোপসাগরের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি এবং জলোচ্ছ্বাস, সাইক্লোন ও মহাসেনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে কক্সবাজার উপকূলের বিভিন্ন পোল্ডার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পোল্ডারের অভ্যস্তরে বসবাসকারী জনগণের জানমাল রক্ষাসহ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অব্যাহত রাখার জন্য ২৫৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্প অনুমোদন দেয় হয় ২০১৫ সালের মার্চে। আগামী ২০১৭ সালের জুনে প্রকল্প শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু ২০১৬ সালের নভেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি হলো মাত্র ৬ শতাংশ। জুনে ছিল এই হার ৩ শতাংশ। আর এ জুন পর্যন্ত অর্থ ব্যয় হলো প্রায় ৬ কোটি টাকা। প্রকল্পের সময় শেষ হতে ৭ মাস বাকি। এ সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কোনো কাজই করা সম্ভব না।
এক পর্যালোচনা থেকে জানা গেছে, এই জেলার মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে ও খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৬০ দশকে ও পরবর্তী সময়ে ২০টি পোল্ডার নির্মাণ করা হয়। পোল্ডারগুলো নির্মাণের কারণে প্রায় ৬২ হাজার ৬৯৫ হেক্টর জমি সাগরের লোনা পানির হাত থেকে রক্ষা পায়। ১৯৯১ সালের ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে পোল্ডারগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে এলাকার সাধারণ মানুষ লবণাক্ত পানি প্রবেশের কারণে জানমাল ও ফসলের ক্ষতিসহ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
প্রকল্প বিশ্লেষণে দেখা যায়, তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্পে প্রায় আড়াই বছরে তেমন কোনো কাজই হয়নি। এখন বাস্তবায়নকারী সংস্থা মেয়াদ আরো দুই বছর বৃদ্ধিসহ ব্যয় ১০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠিয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগে। আড়াই বছর কাজ না করে এখন শিডিউল রেইট পরিবর্তনের প্রসঙ্গ তোলা হয়েছে। এতে করে ব্যয় বাড়ছে ১১.৫৩ শতাংশ। এমনকি তারা এখন নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধিরও সুর তুলেছে। আর ডিজাইন পরিবর্তন করা হয়েছে প্রকল্প চলাকালে এক বছর পর। এই পরিবর্তনের কারণে ব্যয় বাড়ছে ২৪ থেকে ২৮ শতাংশ। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, যে হারে কাজ হয়েছে গত দুই বছরের বেশি সময়ে, সেটা দেখে মনে সংশয় রয়েছে যে, আগামী দুই বছরেও কাজ সম্পন্ন করতে পারবে কি না বাস্তবায়নকারী সংস্থা।
দেখা যায়, গত দুই বছরে বাঁধ ও ঢাল নির্মাণ আংশিক হয়েছে। কী পরিমাণ কাজ হয়েছে তা উল্লেখ করা হয়নি। তবে ব্যয় হয়েছে এই কাজের পেছনে ৬ কোটি টাকা। বাঁধ নির্মাণের পরিমাণ ১ কিলোমিটার কমলেও প্রতি মিটার নির্মাণ ব্যয় ৪৫৫ টাকা বেড়েছে। বাঁধের ঢাল সংরক্ষণ ও ঢাল সংরক্ষণ মেরামত ব্যয় মূল প্রস্তাবনায় ছিল প্রতি মিটার ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। এখন নতুন প্রস্তাবনায় এই ব্যয় ৬৭ হাজার টাকা বাড়িয়ে প্রতি মিটার ধরা হয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। এই ব্যয় পরিকল্পনা কমিশনের দৃষ্টি অত্যধিক। এটি যৌক্তিক করার জন্য তারা পরামর্শ দিয়েছেন। দু’টি পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো নির্মাণের জন্য প্রথমে ব্যয় ধরা হয় ২ কোটি টাকা। কিন্তু এখন সেই ব্যয় বাড়িয়ে প্রায় ৫ কোটি টাকা করা হয়েছে। ফলে এককপ্রতি ব্যয় বেড়েছে দেড় কোটি টাকা। এটাকেও কমিশন অত্যধিক বলেছে।
http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/183313