১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, সোমবার, ১০:০৩

পুঁজিবাজার ধ্বংসে ভারতীয় ষড়যন্ত্র

শেয়ারবাজারের অংশীদারিত্বে চীন না ভারত?

হাসান সোহেল : পোশাক শিল্পে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ রফতানীকারক দেশ বাংলাদেশ। পাটেও ছিল বিশ্বব্যাপী খ্যাতি। সেই পোশাক খাত ও পাট-পাটজাত পণ্যের বাজার এখন ভারতের দখলে। পাশাপাশি পোল্ট্রি শিল্প, ফল ও সব্জির বাজারের অবস্থাও প্রায় অভিন্ন। এখন ডিএসই’র অংশিদারিত্ব নিয়ে নতুন করে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার দখলের চেষ্টা করছে প্রতিবেশী দেশটি। এমনিতেই শেয়ার বাজার নিয়ে মানুষের আস্থাহীনতা। তারপরও সেটাই ওপর শকুনি দৃষ্টি পড়ে গেছে ভারতের। চীনের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কৌশলগত অংশীদারিত্ব বিক্রি নিয়ে বর্তমানে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের চাপের মুখে পড়ে গেছে ডিএসই’র কর্তাব্যক্তিরা। অংশিদারিত্ব চীন না ভারতকে দেয়া হবে সে ব্যাপারে ডিএসই বোর্ড চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে আজই।
তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বিশ্বব্যাপি শেয়ারবাজার একটি স্পর্শকাতর জায়গা। বাস্তবতা বিবেচনায় না নিয়ে কোনো বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানের কাছে শেয়ার বিক্রি করা হলে এই বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা থাকবে না।

সুত্র জানায়, ডিএসইর এ শেয়ার বিক্রি নিয়ে ভারতের অন্যতম শেয়ারবাজার ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বিক্রম লিমা সম্প্রতি ঢাকায় এসে চাপ প্রয়োগ করে গেছেন। তিনি ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাজেদুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করে শেয়ারবাজারের অংশীদার হতে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করেন। এমনকি এ সময় অন্যায় ও অযৌক্তিক প্রস্তাব দিয়ে কূটনৈতিক শিষ্টাচার বর্জিত ভাষাও প্রয়োগ করেছেন। এরপরই সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) দিয়ে ডিএসই বোর্ডকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে ভারতের প্রতিষ্ঠানের কাছে অংশীদারিত্ব বিক্রির জন্য। তবে ডিএসই সদস্যরা বিএসইসিকে অযৌক্তিক বলে অভিহিত করেছেন। তাদের যুক্তি চীনা কনসোর্টিয়ামটি সর্বোচ্চ দরদাতা। তাই তাদেরই অংশীদারিত্ব পাওয়া উচিত। এছাড়া চীনা প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে শেয়ারবাজারের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধা মিলবে। আর তাই ডিএসই ও বিএসইসি দ্বন্দে কয়েকদিন থেকে দেশব্যাপি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কৌশলগত অংশীদারিত্ব পাচ্ছেন কারা? চীন নাকি ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়াম? ডিএসই’র সদস্য থেকে বিনিয়োগকারী; গত কয়েকদিন পুঁজিবাজারের সাথে জড়িতদের মাঝে বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার খোরাক যুগিয়েছে।

এদিকে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসই’র কৌশলগত বিনিয়োগকারী নির্ধারণ নিয়ে নীতি নির্ধারকদের মধ্যে দ্বন্দের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে। ইতোমধ্যে ডিএসই এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মূল্য সূচকের বড় পতন হয়েছে। সেই সঙ্গে ডিএসইতে প্রতিদিনই কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। পরিস্থিতি এড়াতে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চীনের দুই প্রতিষ্ঠান ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হচ্ছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে চলতি সপ্তাহের শুরুতে শেয়ারবাজারে বড় উত্থান ঘটে। তবে চীনের দুই প্রতিষ্ঠানকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করা নিয়ে দ্বন্দের খবরের পর থেকেই বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অন্যথায় বাজারে এমন দরপতনের কোনো কারণ নেই।
সূত্র মতে, ২০১০ সালে শেয়ারবাজার ধসের পর দাবি ওঠে স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা থেকে মালিকানা আলাদা করার। এরপর ২০১৩ সালে জাতীয় সংসদে পাশ হয় এক্সচেঞ্জ ডিমিউচ্যুয়ালইজেশন অ্যাক্ট। যার প্রেক্ষিতে মিউচুয়ালাইজেশন জন্য কৌশলগত অংশীদারের খোঁজে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। যাতে আগ্রহ দেখায় চীনের সাংহাই ও শেনঝেন স্টক এক্সচেঞ্জ নিয়ে গঠিত কনসোর্টিয়াম এবং ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জও নাসডাক এবং ফ্রন্টিয়ার নিয়ে গঠিত কনসোর্টিয়াম। এদিকে ভারতের ফ্রন্টিয়ার যে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ডিএসই’র কৌশলগত অংশীদার হতে চায় সেটা অর্থপাচারের সাথে জড়িত প্যারাডাইস পেপার্সের তালিকায় থাকা একটি প্রতিষ্ঠান। ব্রামার্স পার্টনার্স অ্যান্ড এসেট ম্যানেজমেন্ট (বাংলাদেশ) লিমিটেড নামে এ প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি ভারতের ফ্রন্টিয়ার কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে ডিএসইর ৩ শতাংশ শেয়ার কিনার জন্য দর প্রস্তাব করেছে। এজন্য তারা ৮১ কোটি টাকা দাম প্রস্তাব করেছে। প্রতিষ্ঠানটি সরাসরি নামে নয়, ফ্রন্টিয়ার বাংলাদেশ নামে তাদের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ আবেদন করেছে। করফাঁিক দিতে অফসোর কোম্পানির মাধ্যমে তারা বিভিন্ন অর্থ পাচার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আর নতুন করে এরা শেয়ারবাজারে আসায় বিষয়টি নিয়ে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন শীর্ষ অর্থনীতিবিদরা। সূত্র বলছে, তাদের কাছে শেয়ার বিক্রির চেষ্টা করছে শেয়ারবাজারের প্রভাবশালী একটি গ্রæপ। অথচ ডিএসইর শেয়ার হোল্ডাররা বলছেন, আন্তর্জাতিকভাবে সাংহাই ও শেনঝেন স্টক এক্সচেঞ্জের মান ভারতীয় ন্যাশনাল এক্সচেঞ্জের অনেক উপরে।

সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলছেন, স্টক এক্সচেঞ্জ হিসেবে চীনের কনর্সোটিয়ামটির অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারলে উপকৃত হবে দেশের পুঁজিবাজার। সাংহাই দেশি ও বিদেশী বিনোয়োগ মিলিয়ে অনেক বড়। অপাতদৃষ্টিতে ভারতের চেয়ে চিনের অবস্থান অনেক ভাল বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তাক আহমেদ সাদেক বলেন, সিকিউিরিটিজ অ্যান্ড এক্্রচেঞ্জ কমিশনের কাজ অনুমোদন দেওয়া। স্ট্রাটেজিক পার্টনার খোঁজা। অপরদিকে নেগোশিয়েট করার অধিকার ডিএসই বোর্ডের। তিনি বলেন, অংশীদারিত্ব স্ট্রক ব্রোকারস কমিউনিটির সম্পদ। যেটা বিক্রি করবে সেটার মালিকও তারা। ব্রোকার মালিকেরাই এটি পাবে। তিনি জানান, ব্রোকার মালিকদের সবাই একমত চীনের কাছে অংশীদারিত্ব বিক্রিতে।

ডিএসই সূত্র মতে, কৌশলগত অংশীদার হতে আলাদা আলাদা প্রস্তাব দেয় দুটি কনসোর্টিয়াম। এতে দেখা যায়Ñ প্রতিটি শেয়ারের জন্য চীনের কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাব ২২ টাকা। বিপরীতে ভারতের কনর্সোটিয়ামটির প্রস্তাব ১৫ টাকা। কারিগরি সহায়তায় সাংহাই ও শেনঝেনের প্রস্তাব প্রায় চার কোটি ডলার। অপরদিকে সুনির্দিষ্ট কোন প্রস্তাবই দেয় নি ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের কনর্সোটিয়াম। এদিকে চীনের কনর্সোটিয়াম অভ্যন্তরীণ সব অনুমোদন পেলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও এক্সচেঞ্জ কমিশনের অনুমোদন এখনও নেয়নি ভারতীয় কনসোর্টিয়াম।
অংশীদারিত্ব পেলে ভারতীয় কনর্সোটিয়ামটি পাঁচ বছর পর শেয়ার বিক্রি করে চলে যাওয়ার শর্ত জুড়ে দেয়। যা ডিমিউচ্যুয়ালইজেশন অ্যাক্ট পরিপন্থী। তবে চীনের এক্সচেঞ্জ দুটি চায় দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করতে। এছাড়া কৌশলগত অংশীদার হিসেবে একজন পরিচালকের জায়গায় ২ জন মনোনয়নের সুযোগ চেয়েছে ভারতীয় কনর্সোটিয়াম। অংশিদারিত্ব ক্রয়ের প্রস্তাব থেকে দেখা যায়, যোজন-যোজন ফারাক চীন ও ভারতের প্রস্তাবে। আর তাই সবকিছু বিবেচনায় চীনের কনসোর্টিয়ামের কাছে ২৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসই পরিচালনা পরিষদ। এরপরই ডিএসই চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককের সাথে কথা বলেছে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। সম্প্রতি বিএসইসির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ডিএসইর নেতাদের বিএসইসি’র খায়রুল হোসেন বলেন, ভারতের স্টক এক্সচেঞ্জকে শেয়ার দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত রয়েছে। বিষয়টি কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তা জানতে চান তিনি। এ সময়ে সুনির্দিষ্টভাবে সরকারের কিছু নির্দেশনার কথা জানান তিনি। তবে ডিএসই’র সদস্যরা বলেন, এটি সম্ভব নয়। বিএসইসির চেয়ারম্যানকে তারা বলেন, আপনি দেশ এবং স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের বঞ্চিত করবেন না। স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যরা কোনোভাবেই এই দামে ভারতকে শেয়ার দিতে চায় না। বিষয়টি আপনি বিবেচনা করবেন। তবে স্টক এক্সচেঞ্জের সদ্যদের বঞ্চিত করা হবে না বলে শেষ পর্যন্ত আশ্বাস দিয়েছেন বিএসইসির চেয়ারম্যান। এছাড়া দর প্রস্তাবে পিছিয়ে থাকা জোটের হয়ে বিভিন্ন পর্যায় থেকে চাপ তৈরি হয়। এ নিয়ে ডিএসইর বর্তমান শেয়ারধারীদের মধ্যে একধরনের অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। আর বিপাকে পরেছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পরিষদ।

ডিএসইর পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, কয়েকটি কারণে চীনের প্রতিষ্ঠানকে বেছে নেয়া হয়েছে। প্রথমত আইন ও ডিমিউচুয়ালাইজেশন স্কিম অনুযায়ী সব ধরনের নিয়ম মেনে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হতে চায় সাংহাই ও শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ। দ্বিতীয়ত শেয়ার কেনার জন্য বেশি দাম প্রস্তাব করেছে তারা। তৃতীয়ত প্রযুক্তিগত সহায়তার বিষয়টিও পরিষ্কার করেছে এ কনসোর্টিয়াম। সবশেষ যুক্তি হল কোনো ভায়ার মাধ্যমে নয়, তারা সরাসরি শেয়ার কেনার প্রস্তাব দিয়েছে। অন্যদিকে ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের নাম ব্যবহার করা হলেও সরাসরি তারা নয়। এ ক্ষেত্রে বিক্রম লিমা এক ধরনের দালালি করছেন। এছাড়া তিনি যে সব ভাষা ব্যবহার করেছেন তা কূটনৈতিক শিষ্টাচার বিবর্জিত। বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এর কৌশলগত মালিকানার বিদেশী অংশীদার বাছাই প্রক্রিয়ায় ভারতীয় দরদাতা প্রতিষ্ঠানের অবৈধ প্রভাব প্রয়োগ ও তার প্রেক্ষিতে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ডিএসই এর ওপর অনৈতিক হস্তক্ষেপ ও চাপ সৃষ্টি করার প্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। অনিয়ম ও অস্থিতিশীলতায় জর্জরিত শেয়ারবাজারে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গঠিত বিএসইসি এ অবৈধ হস্তক্ষেপ বন্ধ করে বাছাই প্রক্রিয়ায় শীর্ষস্থানপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানকে বাছাই করা ও অবৈধ চাপ সৃষ্টিকারী দরদাতাকে কালো তালিকাভুক্ত করার আহŸান জানিয়েছে টিআইবি। একই সাথে বিএসইসিতে এ ধরনের হীন প্রচেষ্টার সাথে জড়িতদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতের আহŸান জানিয়েছে টিআইবি।

এক বিবৃতিতে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, শেয়ারবাজার এর উন্নয়নকল্পে গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ডিএসই’র উন্নয়নকল্পে আধুনিক যন্ত্রপাতি, কারিগরী দক্ষতা ও উৎর্ষতা অর্জনে অভিজ্ঞ ও দক্ষ কৌশলগত বিদেশী অংশীদার বাছাই প্রক্রিয়ায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে বিএসইসি’র অনৈতিক প্রভাব সৃষ্টির প্রচেষ্টা দুঃখজনক ও অনাকাঙ্খিত। রক্ষক হয়ে বিএসইসি ভক্ষকের ভূমিকা পালন করতে পারে না; তাও দরদাতা প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগসাজসে বা প্রভাবান্বিত হয়ে।
তিনি বলেন, দর প্রস্তাব মূল্যায়নে প্রায় অর্ধেক পিছিয়ে থাকা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের এ ধরনের তদবির ও চাপ প্রয়োগ যেমন নজিরবিহীন ও আইনবিরুদ্ধ, বিএসইসি তাতে প্রভাবিত হয়ে বাছাই প্রক্রিয়াকে কলুষিত করে অযোগ্য প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে ইন্ধন যোগানো তেমনই বেআইনি ও অগ্রহণযোগ্য।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সর্বোচ্চ দরদাতাকে বাছাই না করে উপযুক্ত কারণ ছাড়া দ্বিতীয় দরদাতাকে বাছাই করা হলে তা হবে আইনের ব্যত্যয় যা পুরো প্রক্রিয়াকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। আইন অনুযায়ী ডিএসই’র জন্য শুভ ও লাভজনক হবে এমন সর্বোচ্চ দরদাতা, যোগ্য ও সুখ্যাতিসম্পন্ন কৌশলগত মালিকানার বিদেশী অংশীদার নির্বাচনে ডিএসই’কে আইন অনুযায়ী চলতে দেওয়ার পরিবেশ সৃষ্টির দিকে সরকারেরও সচেষ্ট হওয়া উচিৎ মনে করে টিআইবি।

আইন অনুযায়ী ডিএসই বোর্ড বাছাইকৃত বিজয়ী পক্ষকে নির্বাচিত করে অনুমোদনের চিঠি বিএসইসি’কে না পাঠানোর মৌখিক নির্দেশনায় ডিএসই’র শেয়ারধারীসহ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মাঝেও এক ধরণের অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। টিআইবি মনে করে, এ ধরনের ঘটনা সাম্প্রতিক অতীতে শেয়ারবাজারের অস্বাভাবিক আচরণ ও ধস এর ধারাবাহিকতা রোধে নেওয়া উদ্যোগ ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নেতিবাচক বার্তা পৌছাবে। বাজার কারসাজি, যোগসাজস ও কৃত্রিম হস্তক্ষেপের মাধ্যমে যে গোষ্ঠী বারবার বিনিয়োগকারীদের সর্বস্বান্ত করেছে, সে চক্র এ ধরনের অশুভ পাঁয়তারায় লিপ্ত কি-না তা খতিয়ে দেখার আহŸান জানাচ্ছে টিআইবি। এছাড়া পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে যেন কোন প্রকার চাপের কাছে নতি স্বীকার করতে না হয় ও ভয়-ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে দায়িত্ব পালন করতে পারে, সে পরিবেশ নিশ্চিতে সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও সৎসাহস থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে টিআইবি। এদিকে ডিএসই’কে ভারতের হাতে তুলে দিতে বিএসইসি’র অপতৎপরতা বন্ধের আহŸান আহŸান নাগরিক পরিষদের। এক বিবৃতিতে পরিষদের আহŸায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দীন বলেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কৌশলগত মালিকানা নিয়ে ভারতের যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনৈতিক চাপ প্রয়োগ শেয়ারবাজারকে দিল্লির হাতে সমর্পনের অপচেষ্টা।
শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বলেন, আজকের সভা পর্যবেক্ষণ করবে বিনিয়োগকারীরা। কোন অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত এবং অনিয়ম করা হলে বিনিয়োগকারীরা তা মানবে না। কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিহত করা হবে। কারণ অংশীদারিত্ব বিক্রি নিয়েই যদি অনিয়ম হয় তাহলে শেয়ারবাজারের অবস্থা কি হবে তা অনুমেয়। তাই কারো স্বার্থ হাসিলের সিদ্ধান্ত বিনিয়োগারীরা মানবে না। তিনি জানান, এ নিয়ে বিনিয়োগাকারীরা আজ (রোবাবর) সভা করেছি।

ঢাকা স্টক এক্্রচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, স্ট্রাটেজিক পার্টনার মানে শুধু শেয়ার ক্রয় করা নয়; কারিগরি সহায়তার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ট্রেনিং এবং লজিস্টিক সাপোর্ট পাবো। তিনি বলেন, শেয়ার বাজার ও সামগ্রিক ব্যবসা বাণিজ্যকে গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি বিচেনা করা উচিত।
তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আমার মনে হয় সর্বোচ্চ দরদাতা চীনের সেনজেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জকে কৌশলগত অংশীদার হলে ভালো হয়।
অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর আবু আহমেদ বলেন, অর্থ কেলেঙ্কারীর সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে আসলে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট তৈরি করতে পারে। এছাড়া যারা বেশি দরে প্রস্তাব করেছে তাদের কাছে শেয়ার বিক্রি করা উচিৎ। তা নাহলে দরপ্রস্তাবের কোনও যৌক্তিকতা থাকে না।

https://www.dailyinqilab.com/article/118012