১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, রবিবার, ৯:৪২

চালের দামে স্বস্তি নেই

কোনোভাবেই চালের দামের লাগাম টানা যাচ্ছে না। ভরসা ছিল আমনের ফসল। কিন্তু মৌসুম শেষ হলেও সুখবর নেই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষের জন্য। এখনও বাড়তি দামেই কিনতে হচ্ছে চাল। আবারও আশা বোরোর ফসল। এভাবে একটি মৌসুম শেষে মরীচিকার মতো অন্য মৌসুমের স্বপ্ন সামনে আসছে। কিন্তু চালের দামে স্বস্তি নেই। ভারত থেকে আমদানি করা চালেরও দাম বাড়ছে। এ অবস্থা নিম্ন আয়ের মানুষের সুরক্ষায় সরকারের ওএমএস ও ভিজিএফ ও ভিজিডিসহ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানোর পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের। রাজশাহী ও নওগাঁ থেকে প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট

দফায় দফায় বাড়ছে দাম
আব্বাস আলী (নওগাঁ)
নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চাল বাজার ঘুরে জানা যায়, স্বর্ণা ৫০ কেজি ওজনের বস্তার দাম ২ হাজার টাকা, রনজিত ২ হাজার ৩০০ টাকা, জিরাশাইল ২ হাজার ৭০০ টাকা, ৪৯ চাল ২ হাজার ৩০০ টাকা, ভারতীয় কাটারি ২৫ কেজি ওজনের বস্তা এক হাজার ৪০০ টাকা। প্রতি কেজি চাল খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২-৫ টাকা লাভে। বর্তমান বাজারে এলসির আমদানি করা কোনো চাল নেই।

দেশে কয়েক দফায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে ধানের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এতে বাজারে ধানের সংকট দেখা দেয়। যেটুকু ধান বাজারে পাওয়া যায় বড় বড় মিল মালিকরা তাদের মিল সচল রাখতে বাজার থেকে বেশি দামে ধান কিনে রেখেছেন বলে জানা যায়। ধানের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে এ সুযোগে কিছু ব্যবসায়ীরা চালের উৎপাদন কমিয়ে দেয়। ফলে বাজারে চালের দামও বৃদ্ধি পায়। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সমস্যার মধ্যে পড়তে হয় সাধারণদের। নওগাঁর মানুষরা মোটা চালের ভাত খেতে অভ্যস্ত নয়। নেহায়েত গরিব না হলে কেউ আমদানি করা মোটা চাল কিনতে চায় না। তাই কষ্ট করে হলেও চিকন চালের ভাত খেতে পছন্দ করেন তারা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় ২ লাখ ১৪০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ করা হয়েছিল। বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি বাদে ১ লাখ ৬১ হাজার ৭০২ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হলেও লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৯৭ হাজার হেক্টর জমি। ক্ষতির কারণে লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হয়েছে।
মান্দা উপজেলার মহানগর গ্রামের কৃষক বকুল হোসেন বলেন, দুই বিঘা জমিতে আমনের আবাদ করেছিলাম। ধানের ফলন হয়েছিল বিঘাপ্রতি ১৫-১৬ মণ। ধানে রোগ বালাইয়ে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। আমন স্বর্ণা-৫ জাতের ধানের দাম মান ভেদে বর্তমান বাজারে এক হাজার থেকে এক হাজার ৫০ টাকা। পুরনো ধানের বাজার (জ্যৈষ্ঠ) দাম এক হাজার ৩০০ টাকা থেকে এক হাজার ৩৫০ টাকা। তবে ফলন ভালো এবং ভালো দাম পাওয়ায় খুশি। দীর্ঘদিন বাদে কৃষকরা ধানের ভালো দাম পাচ্ছে।

নওগাঁ জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন তরফদার বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশে প্রায় ৫০ লাখ টন খাদ্য ঘাটতি আছে। ভারত থেকে চাল আমদানি করায় বাজার কিছুটা স্থিতিশীল আছে। গত এক সপ্তাহ আগে ভারতে চালের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৩৬-৩৭ টাকা। এখন সেই চাল প্রায় ৩৮-৩৯ টাকা। বাজারে ধান সংকট এবং দাম বেশি।
ভারতীয় চালে ঊর্ধ্বগতি
আনু মোস্তফা ও তানজিমুল হক (রাজশাহী)
রাজশাহীতে চালের দাম একমাস থেকে স্থিতাবস্থায় রয়েছে। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানিকৃত চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে রাজশাহী অঞ্চলে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে আরও ২ টাকা করে বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ধান সংকটের কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে ধানের দাম বাড়ার কারণে কৃষকরা উচ্ছ্বসিত। গত বছরের তুলনায় ভালো দাম পাচ্ছে এবার।

রাজশাহীর চালের মোকাম হিসেবে খ্যাত কাদিরগঞ্জ চালপট্টির আড়তগুলো বৃহস্পতিবার সকালে ঘুরে দাম সম্পর্কে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। কাদিরগঞ্জ পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সমিতির কোষাধ্যক্ষ মেসার্স নিউ আদর্শ শস্য ভাণ্ডারের মালিক জসিম উদ্দিন মণ্ডল জানান, মিনিকেট চাল (৮৪ কেজি বস্তা) বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৬০০ থেকে ৪ হাজার ৭০০ টাকায়। কেজিতে এ চালের দাম পাইকারি হিসাবে পড়ছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫৭ থেকে ৫৮ টাকা। মিনিকেট ভালোমানের (৫০ কেজি বস্তা) চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৯০০ থেকে তিন হাজার টাকায়। কেজিপ্রতি পড়ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। আর এ চালের দাম খুচরা বাজারে আরও ২ থেকে ৩ টাকা বেশি। বিআর-২৮ জাতের চাল পাইকারি ৫৩ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে এ চালের দাম ৫৮ টাকা। আর এ জাতের ভালোমানের চালের দাম পাইকারি হিসেবে ৫৬ থেকে ৫৭ টাকা। তবে খুচরা বাজারে এ চালের দাম কেজিতে আরও ২ টাকা বেশি। আর এ জাতের চাল বেশি বিক্রি হয় বলে জানান ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন মণ্ডল। এ ছাড়া পারিজা পাইকারি হিসেবে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩৯ থেকে ৪০ টাকা ৫০ পয়সা। তবে খুচরা বাজারে দাম আরও ২ টাকা বেশি। কাদিরগঞ্জ পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সোলাইমান আলী জানান, পারিজা জাতের চাল চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে দেশে আসছে। এ জাতের চালের দাম কয়েকদিন আগে কেজিপ্রতি ৩৮ টাকা থাকলেও বর্তমানে তা পাইকারি এবং খুচরা বাজারে ২ টাকা করে বেড়েছে। তবে এ জাতের চালের বিক্রি অনেক কম। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে অন্তত ২ টাকা করে বাড়বে বলে তিনি মন্তব্য করেন। গোদাগাড়ী উপজেলার কাদিপুর এলাকার কৃষক আজমল হক সুমন বলেন, আমন মৌসুমে আট বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। ডিসেম্বরে কিছু ধান বিক্রি করি। এরপর সোমবার (১২ ফেব্র“য়ারি) একশ’ মণ ধান বিক্রি করেছি। দামও পেয়েছি অনেক বেশি। এ কারণে চলতি বোরো মৌসুমে ১৫ বিঘা জমিতে ধানচাষ করেছি।

https://www.jugantor.com/todays-paper/economics/18892