২১ অক্টোবর ২০১৭, শনিবার, ৩:২৬

ভোগান্তিতে রাজধানী বাসী

বৃষ্টিতে সড়কে জলা বদ্ধতা

হেমন্তকাল শুরু হলেও সারা দেশে আষাঢ়ের পরিবেশ বিরাজ করছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে একটানা বৃষ্টিপাত চলছে। গতকাল শুক্রবার সারা দিনই বৃষ্টি পড়েছে। এতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে পানি জমে যায়। অনেক সড়কের ফুটপাথ পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন পথচারী ও যাত্রীরা। সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় অনেকেই বাসা থেকে বের হননি। আর যারা কাজের প্রয়োজনে বের হয়েছেন তারা দুর্ভোগের শিকার হন।

ভোর রাতের কুয়াশায় ভেসে ক’দিন আগেই হেমন্ত এসেছে। আশ্বিন শেষে গতকাল ছিল কার্তিক মাসের পঞ্চম দিন; কিন্তু দিনভর বৃষ্টিতে মনে হয়েছে যেন আবারো বর্ষাকাল ফিরে এসেছে। আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট নি¤œœচাপের কারণে বৃহস্পতিবার রাত থেকে ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গতকাল সারা দিনই কখনো ভারী আবার কখনো হালকা বৃষ্টিপাত হয়েছে। আজ শনিবারও সারা দিন বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একটানা বৃষ্টির কারণে গতকাল রাজধানীবাসী চরম দুর্ভোগের শিকার হন। অনেক সড়কে পানি জমে যায়। মতিঝিল, নটর ডেম কলেজের সামনের সড়ক, ফকিরাপুল, নয়াপল্টন, শান্তিনগর, সার্কিট হাউজ রোড, কমলাপুর, গুলিস্তান, মালিবাগ চৌধুরীপাড়া, রামপুরা থেকে বনশ্রী সড়ক, মহাখালী, ধানমন্ডির মিরপুর সড়ক, মিরপুর-১০ নম্বর থেকে কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়া, মিরপুর-১ ও ২-এর সড়ক, কাওরান বাজার, বাসাবো সড়ক, আর কে মিশন রোড, পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডসহ অনেক সড়কে পানি জমে যায়। কোথাও অল্প পানি আবার কোথাও হাঁটুপানি জমে যায়। অনেক সড়কের ফুটপাথও ছিল পানির নিচে। গতকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় অনেকে বাসা থেকে বের হননি। তবে বিভিন্ন প্রয়োজনে যারা বাসা থেকে বের হয়েছেন তারা পড়েন বিপাকে। বৃষ্টির কারণে সড়কে গণপরিবহনও ছিল কম। ফলে রিকশা-সিএনজি ভাড়া দ্বিগুণ-তিন গুণ হয়ে যায়। জলাবদ্ধতার কারণে অনেক সিএনজি নষ্ট হয়ে যায়। হেঁটে যেতেও ভোগান্তিতে পড়তে হয় পথচারীদের। রাস্তা-ফুটপাথে পানি জমে থাকায় গাড়ির চাকা থেকে ছিটকে কাদাপানি লেগে অনেকের কাপড় নষ্ট হয়ে যায়।

নয়াপল্টন থেকে নটর ডেম কলেজের সামনের সড়কে দেখা যায় প্রায় হাঁটুপানি জমে গেছে। গাড়ি চলাচলের সময় পানির ঢেউ আছড়ে পড়তে থাকে। এ পানির মধ্য দিয়ে চলতে গিয়ে পথচারীরা চরম বিপাকে পড়েন। কয়েকটি সিএনজি ইঞ্জিনে পানি ঢুকে অচল হয়ে যায়।

মালিবাগ আবুল হোটেলের সামনে থেকে খিলগাঁওগামী বাইপাস সড়কটি দীর্ঘ দিন থেকেই ভেঙেচুরে একাকার হয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই এ সড়কে পানি জমে যায়। উত্তর সিটি করপোরেশন মাঝে মাঝে ইট-বালু দিয়ে গর্ত ভরাট করলেও ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে কয়েক দিন না যেতেই আগের থেকেও খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। গতকাল দেখা যায় এ সড়ক ছাড়াও আশপাশের অলিগলির সড়কেও হাঁটুপানি জমে রয়েছে। এ পানির মধ্য দিয়ে পথচারীদের চলাচলের কোনো সুযোগ নেই। রাস্তায় গর্ত থাকায় পানির মধ্য দিয়ে ধীরগতিতে গাড়ি চলাচলের কারণে সৃষ্টি হয় যানজটের।

মালিবাগ মোড়ে নবনির্মিত ফ্লাইওভারের নিচে সম্প্রতি সড়ক সংস্কার করলেও পূর্ব পাশের সড়কে বৃষ্টি হলেই পানি জমে যাচ্ছে। ফুটপাথও তলিয়ে যাচ্ছে। ড্রেন পরিষ্কার না করায় এ পানি অপসারণ হতে বেশ সময় লেগে যাচ্ছে। এতে এক দিকে যেমন পথচারী ও যাত্রীদের ভোগান্তি হচ্ছে অন্য দিকে সড়কটি আবারো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
রামপুরা থেকে মালিবাগগামী সড়কে সম্প্রতি সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে। তবে পূর্ব হাজীপাড়া অংশে এখনো আগের মতোই রাস্তায় বড় বড় গর্ত রয়েছে। বৃষ্টিতে এসব গর্তে পানি জমে যাওয়ায় গাড়ি চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
রামপুরা ব্রিজ থেকে ডেমরাগামী সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার অংশের চরম খারাপ অবস্থা। গ্রামের রাস্তা থেকেও শোচনীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে এ সড়কে। ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে পুরো সড়কেই বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। বৃষ্টিতে এসব গর্তে পানি যাওয়ায় গাড়ি চলাচলের সময় কাদাপানি ছিটকে পথচারীদের পোশাকপরিচ্ছদ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
মহাখালী থেকে সাত রাস্তাগামী সড়কে মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের সামনের সড়কে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। কিছু দিন আগে সিটি করপোরেশন এসব গর্তে ইট ফেললেও এখন আবার আগের অবস্থায় চলে গেছে। উঁচু-নিচু ঢেউয়ের মতো সড়ক দিয়ে চলতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন গাড়ির যাত্রীরা। অনেক সময় গর্তে গাড়ি আটকে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
খিলগাঁও ফ্লাইওভারের সায়েদাবাদগামী লুপ থেকে নামার পর পূর্ব দিকে বাসাবো সড়ক। এ সড়কের নন্দীপাড়া পর্যন্ত অংশের পুরোটাই যাচ্ছেতাই অবস্থা। বিশেষ করে আইডিয়াল স্কুলের সামনে এক শ’ গজের মতো রাস্তায় স্থায়ী জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। বৃষ্টি হলেই এখানে হাঁটুপানি জমে যায়। গতকাল দেখা যায়, সিএনজি অটোরিকশাসহ স্থানীয় বিভিন্ন যানবাহন পানি ও গর্তের সড়ক দিয়ে চলতে বেশ অসুবিধার শিকার হচ্ছে। আরিফুর রহমান নামে এক যাত্রী বলেন, দীর্ঘ দিন থেকেই এ সড়কটি ভেঙেচুরে গেছে। বৃষ্টি হলেই হাঁটুপানি জমে যায়। তারপরও সিটি করপোরেশনের এ দিকে কোনো নজর নেই।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/261798