২১ আগস্ট ২০১৭, সোমবার, ৯:১৪

গুদামে নেই পর্যাপ্ত মজুদ খাদ্য সংকটের আশংকা

দেশব্যাপী বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিতে খাদ্য সংকটের আশংকা করছেন কৃষিবিদরা। একদিকে গুদামে অপর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ অন্যদিকে বন্যায় ভেসে গেছে ৩৩ জেলার জমির ফসল। এই অবস্থায় দীর্ঘ মেয়াদী খাদ্য সংকট হলে তা উত্তোরণের পথও আপাততঃ সরকারের নেই। ফলে আগামী দিনের সংকট মোকাবেলায় এখনি খাদ্য মজুদের দিকে নজর বাড়ানো দরকার বলে তারা মনে করছেন।
এদিকে বন্যায় বাংলাদেশের প্রায় দুই ডজন জেলার কয়েক লাখ হেক্টরের বেশি ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় খাদ্য সঙ্কটের পড়ার আশঙ্কা করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। তবে সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, কয়েক দিনের মধ্যে পানি নেমে গেলে কৃষকদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে আবারও স্বাভাবিক কৃষি উৎপাদন সম্ভব। সেটা করা গেলে তেমন সমস্যা হবে না। তবে বন্যার যে লক্ষণ তাতে সহসাই পানি নামবে না বলে মনে করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞ ড. আসাদুজ্জামান। তার ধারণাকে ভিত্তি দিচ্ছে বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসও।
সরকারি উন্নয়ন গবেষণা সংস্থা বিআইডিএসের সাবেক গবেষণা পরিচালক আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, যদি অগাস্ট মাসের মধ্যে বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে যায় তাহলে সরকারি সহায়তায় কৃষকদের পুনরায় মাঠে নামিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব। কিন্তু চলমান বন্যার লক্ষণে এটা আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে খাদ্য সঙ্কট এড়াতে সরকার ‘প্রয়োজনীয় উদ্যোগ’ নিচ্ছে না বলে মনে করেন তিনি।
ড. আসাদুজ্জামান বলেন, দেশের জনগণের খাদ্য নিরাপত্তার দিকে মনোযোগী না হয়ে আদালতের একটি রায় নিয়ে সরকার ব্যস্ত।
তিনি আরো জানান, আমাদের জানামতে, সরকারি গুদামে মাত্র আড়াই লাখ টনের মতো খাদ্য মজুদ রয়েছে। অথচ আমাদের কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ লাখ টন মজুদ রাখা উচিৎ।
অন্যদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের গত ১০ অগাস্টের তথ্য মতে, সরকারি গুদামে খাদ্যশস্যের মোট মজুদ চার লাখ ৩৪ হাজার টন। এর মধ্যে চাল রয়েছে দুই লাখ ৮৭ হাজার টন এবং গম রয়েছে এক লাখ ৪৭ হাজার টন। এছাড়া বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় আছে ৮৩ হাজার টন খাদ্যশস্য।
বন্যার বিপদ টের পাচ্ছেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামও। তিনি জানিয়েছেন, এবার ১৫ লাখ টন চাল এবং ৫ লাখ টন গম বিদেশ থেকে আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। খাদ্য মজুদের এই অবস্থায় আমনের চারা লাগানোর সময়ে দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা এখন প্লাবিত।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, রোপা আমনের চলতি মওসুমে সারা দেশে তিন কোটি ১০ লাখ ৫৫৪ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। এরমধ্যে ৩৩ জেলায় চার লাখ ৫০ হাজার ৭২৯ হেক্টর জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. তাজুল ইসলাম পাটোয়ারি জানান, এখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শস্য ক্ষেত্রে রোপা আমন, আমন বীজতলা, শাক-সবজি, বোনা আমন ও আউশ ধান রয়েছে। এরমধ্যে কিছু এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। তবে পানি নেমে না যাওয়া পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিরূপণ করা যাচ্ছে না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, কিছু এলাকার আমন ধান পানিতে তলিয়ে গেলেও পানি সরে যাওয়ার পর তা টিকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ধান নষ্ট হলেও নতুন বীজ বপনের জন্য হাতে এখনও কিছুদিন সময় আছে।
যেসব জেলা থেকে সারা দেশে চাল সরবরাহ করা হয়, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম দিনাজপুর জেলা। দিনাজপুর ও তার পাশের ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় মিলিয়ে মোট এক লাখ ৬৩ হাজার হেক্টর জমির ধান বন্যার পানিতে তলিয়েছে

 

http://www.dailysangram.com/post/296925-