২০ আগস্ট ২০১৭, রবিবার, ৯:৪২

বাসের টিকিট উধাও ভিড় বাড়ছে কমলাপুরে

উত্তরবঙ্গের বন্যা প্লাবিত মহাসড়কে খানাখন্দে ভরপুর। থাকবে সড়কের পাশে পশুর হাটের যানজট। তাই ঈদ যাত্রায় ঘরমুখো মানুষের এবার প্রথম পছন্দ রেলযাত্রা। অন্যদিকে ঈদের চার দিন আগের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হয়েছে গতকাল। ঈদের দিন ঘনিয়ে আসায় টিকিট প্রত্যাশীদের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে কমলাপুর রেলস্টেশনে। তবে বিপরীত চিত্র বাসটার্মিনালে। অগ্রিম টিকিট বিক্রির প্রথম দিনেই প্রায় সব পরিবহনের টিকিট উধাও হয়ে গেছে। গতকাল অগ্রিম টিকিট বিক্রির দ্বিতীয় দিন কিছু পরিবহনের টিকিট পাওয়া গেলেও যাত্রীদের অভিযোগ কাঙ্ক্ষিত দিনের টিকিট পাচ্ছেন না। আবার পেছনের সারির সিট বেশি। এছাড়া রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে কোনো অগ্রীম টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে না। একই চিত্র সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালেও।

সরজমিন দেখা যায়, দ্বিতীয় দিনের মতো গতকাল কমলাপুর রেলস্টেশনে সকাল আটটা থেকে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। এদিন ২৩টি কাউন্টার থেকে ২৮শে আগস্টের ৩১টি ট্রেনের ২২ হাজার ৪৯৬টি টিকিট বিক্রি করা হয়। ভোর থেকে স্টেশনে টিকিট প্রত্যাশীদের ব্যাপক ভিড় লক্ষ্য করা যায়। অনেকে গভীর রাত থেকে টিকিটের জন্য অপেক্ষা করেছেন। এদিন টিকিট কাউন্টারের দীর্ঘ সারি স্টেশনের সিঁড়ি ছাড়িয়ে বাইরে গিয়ে ঠেকেছে। দিনাজপুরগামী একতা এক্সপ্রেসের টিকিট প্রত্যাশী বেসরকারি চাকরিজীবী জাকির হোসেন মানবজমিনকে বলেন, ঈদের সময় ট্রেনে খুব ভিড় হয় বলে প্রতি বছর বাসে যাতায়াত করি। কিন্তু এবার আগে থেকেই রাস্তা ভাঙাচোরা ছিল। এছাড়া, বন্যার কারণে রাস্তাঘাট খানাখন্দে ভরা থাকবে বলে যানজট এবং দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। তাই ট্রেনে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই ভোরে অন্ধকার থাকতেই এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। টিকিট প্রত্যাশী অনেকেই বলছেন, অন্যবারের চেয়ে মানুষের উপস্থিতি তুলনায় বেশি। অপর এক যাত্রী মোমিনুল হক জানান, বন্যা-বৃষ্টির কারণে সড়কের বেহালদশা। এজন্যই হয়তো মানুষ অন্যবারের চেয়ে বেশি ট্রেনের টিকিটের প্রতি আগ্রহী। তিনি বলেন, আমি সকাল ৮টার পর এসেছি। যে পরিমাণ ভিড় দেখছি শেষ পর্যন্ত ২৮ তারিখের টিকিট পাবো কি না সেটা নিয়ে সন্দিহান। রংপুর এক্সপ্রেসের অপর এক যাত্রী শারমিন আক্তার বলেন, টিকিটের জন্য দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। টিকিট প্রত্যাশী অনেক হওয়ার পরও ২৩টি কাউন্টারের মধ্যে মাত্র দুটি রাখা হয়েছে নারীদের জন্য। নারীদের জন্য কর্তৃপক্ষের আরও বেশি কাউন্টার রাখা উচিত ছিল।

একাধিক যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোরবানির ঈদে ঘরমুখো মানুষের পাশাপাশি মহাসড়কে কোরবানির পশুবোঝাই ট্রাকের চাপ থাকবে অনেক বেশি। তাই সড়কপথে যানজটও হবে অনেক বেশি। যে কারণে ঈদে ঘরমুখো মানুষের অনেকেই এবার ট্রেনযাত্রায় আগ্রহী।
কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। এতে ট্রেন যাত্রায় টিকিট প্রত্যাশীদের ভিড় বাড়ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আমাদের নিরাপত্তা কর্মীদের সহযোগিতায় টিকিট প্রত্যাশীরা সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কিনতে পারছেন। তিনি বলেন, আমরা প্রতিদিন ২২ হাজার ৪৯৬টি টিকিট বিক্রি করছি। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ অনলাইন, ৫ শতাংশ ভিআইপি, ৫ শতাংশ রেলওয়ে কর্মকর্মতা-কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ। বাকি ৬৫ শতাংশ টিকিট কাউন্টার থেকে সাধারণ যাত্রীদের জন্য বিক্রি করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, শনিবার বিক্রি করা হয়েছে ২৮শে আগস্টের অগ্রিম টিকিট। ক্রমান্বয়ে ২০, ২১ ও ২২শে আগস্ট বিক্রি করা হবে যথাক্রমে ২৯, ৩০ ও ৩১ আগস্টের টিকিট। এছাড়া, ঈদ শেষে ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরু হবে আগামী ২৫শে আগস্ট থেকে। ক্রমান্বয়ে ২৬, ২৭, ২৮ ও ২৯শে আগস্ট বিক্রি করা হবে যথাক্রমে ৪, ৫, ৬ ও ৭ই সেপ্টেম্বরের ফিরতি টিকিট। তবে ১ থেকে ৪ঠা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মৈত্রী এক্সপ্রেস চলাচল করবে না। বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ফিরতি টিকিট বিক্রি করা হবে রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, দিনাজপুর ও লালমনিরহাট স্টেশন থেকে।

অন্যদিকে, ঈদ যাত্রার অগ্রিম টিকিট দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্রি করা হয়েছে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে। তবে অগ্রিম টিকিট বিক্রির প্রথম দিন শুক্রবারই প্রায় সব টিকিট শেষ হয়ে গেছে। গতকাল গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে কাউন্টারগুলো প্রায় ফাঁকা দেখা গেছে। উত্তরাঞ্চলের পরিবহনগুলোতে কিছু টিকিট থাকলেও অধিকাংশই দেখা গেছে পেছনের সিটের। তবে দক্ষিণাঞ্চলের কিছু নিম্নমানের পরিবহনের অগ্রিম টিকিট পাওয়া গেছে। এই অঞ্চলের প্রথম শ্রেণির পরিবহনগুলোতে উত্তরাঞ্চলের মতো টিকিট খরা দেখা গেছে।

রংপুরের যাত্রী ইলিয়াস হোসেন মানবজমিনকে বলেন, কাউন্টারে কোনো লাইন নেই। তবে টিকিট পেয়েছি ৩০শে আগস্টের গাড়ির পেছনের সিটের। কোনো গাড়িতেই ভালো সিট পাওয়া যায়নি। পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাবো তাই বাধ্য হয়ে পেছনের সিটই কিনতে হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের যাত্রী ষাটোর্ধ্ব রহিম মিয়া জানান, যেদিন বাড়ি যাবো সেদিনের টিকিট না পাওয়ায় খালি হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে। টার্মিনাল ঘুরে অন্য কোনো পরিবহনে টিকিট না পেলে এবার বাড়ি যাওয়া হবে না বলে জানান তিনি।
টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, উত্তরাঞ্চরের পরিবহনগুলোয় টিকিট না থাকলেও দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা যথেষ্ট টিকিট পেয়েছেন। পুরো টার্মিনালে অগ্রীম টিকিট বিক্রির দ্বিতীয় দিনে কোনো ধরনের ভিড় লক্ষ্য করা যায়নি।
একাধিক কাউন্টার মাস্টার জানান, দক্ষিণাঞ্চলের প্রত্যেকটি গাড়িতে ৫/৬টা আসন খালি রয়েছে। কুষ্টিয়াগামী বাসের ৩০শে আগস্টের টিকিট প্রত্যাশী কায়সার আলম বলেন, কোনো লাইন ছাড়াই ৫৫০ টাকায় কুষ্টিয়াগামী গাড়ির অগ্রিম টিকিট পেয়েছি। এখন খুশি লাগছে।

শ্যামলী পরিবহনের এক কর্মকর্তা জানান, আমরা ২৬শে আগস্ট থেকে ১লা সেপ্টেম্বরের অগ্রিম টিকিট দিচ্ছি। তবে উত্তরবঙ্গে বন্যা হওয়ায় ৮ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে এখন সময় লাগে ১৬ ঘণ্টা। তাই বাসের ট্রিপ অর্ধেকে নেমে আসায় উত্তর অঞ্চলের যাত্রীদের প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
অন্যদিকে, পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর গাড়িতেও তেমন কোনো ভিড় লক্ষ্য করা যায়নি। রাজধানীর গাবতলী ও কল্যাণপুর বাসস্টান্ড ঘুরে দেখা যায়, সব কাউন্টারই প্রায় ফাঁকা। কোনো কাউন্টারে অগ্রিম টিকিটও নেই। দুই একটি গাড়ির টিকিট পাওয়া গেলেও পেছনের সারিতে। কাউন্টার মাস্টারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল সকালের দিকে গাবতলীর হানিফ কাউন্টারে কিছুটা ভিড় থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টিকিট না পেয়ে টিকিট প্রত্যাশীরা ফিরে যান। ময়নাল নামের এক টিকিট প্রত্যাশী জানান, ৩১শে আগস্ট রাতের টিকিট কিনতে এসেছিলাম কিন্তু পাইনি। এমনকি পরদিন সকালের টিকিটও নেই। তাই বাধ্য হয়ে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছি। শফিকুল ইসলাম নামের অপর এক টিকিট প্রত্যাশী বলেন, ১লা সেপ্টেম্বর সকালের টিকিট কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু টিকিট পেয়েছি রাতের গাড়ির। তাও আবার পেছনের সারির।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=79609