২০ আগস্ট ২০১৭, রবিবার, ৯:৩৬

আমনের বড় ক্ষতির শঙ্কা

রংপুরে কিছু স্থানে বানের পানি নেমে যাওয়ার পর দেখা গেছে বালুতে ঢেকে গেছে আমনের চারা ও ফসলি জমি। কোথায় কোথায় আমন চারা পচেঁ যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। দেশের মধ্যাঞ্চলে বিভিন্ন জেলায় পানিতে ডুবে আছে, মাঠ, পুকুর, গ্রাম। রোপা আমন ক্ষেত থেকে শুরু করে, বিভিন্ন সবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে পানিতে। এমনকি শত শত পুকুরও ভেসেগেছে বানের পানিতে। ভাঙনের শব্দে নির্ঘুম রাত কাটছে বানভাসিদের।

বদরগঞ্জ (রংপুর) সংবাদদাতা জানান, রংপুরের বদরগঞ্জের চাষির মুখে হাসি নেই। বন্যার পানি নেমে গিয়ে বেরিয়ে আসছে আমন ধানের মরা গাছ। আর বন্যার পানির তোড়ে ভেসে আসা বালুতে ঢেকে গেছে আমনের চারা ও ফসলি জমি। কোথায় কোথায় আমন চারা পচেঁ গেছে। বেরুচ্ছে দুর্গন্ধ। কৃষক দিশেহারা বোধ করছেন।

উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ ও কৃষি কর্মকর্তা কনক চন্দ্র রায় বলেন, এখানে ১৯ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ করা হয়। চলতি বন্যায় ৮ হাজার ৫০০ হেক্টর আমন ক্ষেত তলিয়ে যায়। প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে আমরা ধারণা করছি এর মধ্যে ৬ হাজার ৫৭৫ হেক্টর ক্ষেতের ধান পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু ধানের ক্ষেত এখনো পানিতে তলিয়ে আছে।

উপজেলার রামনাথ ইউনিয়নের বইপাড়া গ্রামের কামরুজ্জামান বলেন, ধান চারা পচে এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। একই কথা বলেন, রামনাথপুর ইউনিয়নের ঘাটাইল গ্রামের রুহুল আমিন। দামোদরপুর ইউনিয়নের আমরুলবাড়ি হাটখোলাপাড়া গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন, তার ৭ বিঘা জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে যায়। সব ধান চারা পচে গেছে।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বন্যাকবলিত রয়েছে জেলার ৩ লাখ মানুষ। ঝুঁকিতে রয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো। বাঁধের বিভিন্ন স্থানে পানি চুঁইয় বের হওয়ায় বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা করছে মানুষ। তবে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমান আতঙ্কিত না হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেছেন, যমুনা নদীতে পানি কমতে শুরু করেছে। বাঁধে ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করা হয়েছে।

চাটমোহর (পাবনা) সংবাদদাতা জানান, পাবনার চাটমোহরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। বাড়ছে প্লাবিত এলাকা। চাটমোহর পৌর ভবন বন্যার পানিতে প্লবিত হয়েছে। বড়াল,গুমানী ও চিকনাই নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫টি ইউনিয়নের ৫০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,সড়ক,বাড়িঘর এবং ফসলি জমি।

বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি গত ২৪ ঘন্টায় ১৭ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনায় কমলেও বাড়ছে বাঙালি ও করতোয়া নদীর পানি। শনিবার বাঙালি নদীর পানি বিপদ সীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

সিংড়া (নাটোর) সংবাদদাতা জানান, নাটোরের সিংড়ায় বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অর্ধলক্ষ মানুষ।

সদরপুর (ফরিদপুর) সংবাদদাতা জানান, ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার পদ্মা-আড়িয়াল খাঁয় গত ২৪ ঘন্টায় বন্যার পানি ৮ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল শনিবার বিপদসীমার ৬৩ সে. মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। উপজেলার ৫টি ইউয়িনের নতুন-নতুন এলাকা বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। পদ্মা-আড়িয়াল খাঁর চরাঞ্চলের নারিকেলবাড়িয়া, চরনাছিরপুর ও চরমানাইর ইউনিয়নের ৪১টি গ্রাম, ঢেউখালী ও আকটেরচর ইউনিয়নের ৭টি গ্রাম সম্পূর্ণ বন্যা কবলিত হয়েছে।

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, একদিকে বন্যার পানির তোপ আর অন্যদিকে নদী ভাঙনের ভয়াল বাস্তবতায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে জেলার হাজারো মানুষ। ঘিওর জেলার বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক অবনতি হয়েছে। পদ্মা-যমুনার পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির ফলে জেলার ঘিওর, দৌলতপুর, শিবালয় ও হরিরামপুর উপজেলার দেড় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় উপজেলা সদরের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বিভিন্ন ইউনিয়ন। বন্যার কারণে জেলার ৮৭ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৮ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ও মাদ্রাসায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

শিবালয় (মানিকগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, শনিবার থেকে যমুনার পানি আরিচা পয়েন্টে কমতে শুরু করলেও শিবালয় উপজেলার অভ্যন্তরে তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলার ৬০ শতাংশ বাড়ি-ঘর, গ্রামীণ জনপদ, কাঁচা-পাকা সড়ক, হাট-বাজারসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।

শেরপুর প্রতিনিধি জানান, শেরপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ, দশআনী ও মৃগী নদীর পানিবৃদ্ধির ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় জেলার তিন উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের ৮০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

‘৮ দিন ধইরা নৌকায় আছি’

বানের পানি সব ভাসাইয়া নিয়া গ্যাছে। ঘর-বাড়িতে কমর থাকি বুক পানি। পোলাপান লইয়া নৌকার উপর আছি ৮ দিন ধইরা। পানি অল্প কমলেও বাড়িতে তো ফিরবার পাইতাছি না। খুবই কষ্টে আছি। হটাত্ কইরা বাড়িতে বানের পানি ওঠায় এক কাপড়েই জীবন লইয়া নৌকাতে উঠছি।

শনিবার কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের দুর্গম মশালের চরের জমিলা খাতুন (৪০) ইত্তেফাক কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি ফজলে ইলাহী স্বপনকে এভাবেই তার কষ্টের কথা জানিয়েছেন। শুধু জমিলাই নন, আজিরন নেসা (৫৫), আসমা খাতুন (৪৫), ফরিদা বেগমসহ (৩৫) এরকম অবস্থা চরটির প্রায় অর্ধ শতাধিক পরিবারের সাড়ে তিন শতাধিক নারী-পুরুষ-শিশুর।

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী থেকে জানান, ফুলে-ফেঁপে উঠেছে পদ্মা। তারপরও গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় রাজশাহীতে পদ্মার পানি বিপদসীমার ১১৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। রাজশাহীতে পদ্মার বিপদসীমা ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। শুক্রবার সন্ধ্যায় পানির উচ্চতা ছিলো ১৭ দশমিক ৩৩ মিটার। প্রতিদিন ১৩ থেকে ২০ সেন্টিমিটার করে পদ্মার বৃদ্ধি পাচ্ছে। কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, ঢল আর টানা বৃষ্টির পানিতে জেলার ভারত সীমান্তবর্তী পাঁচটি উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় সদ্য রোপনকৃত জমির ফসল নষ্ট হয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন এসব এলাকার কৃষকরা। অনেকে ঋণ নিয়ে ধান চাষ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন।

http://www.ittefaq.com.bd/wholecountry/2017/08/20/124573