২০ আগস্ট ২০১৭, রবিবার, ৯:৩২

কক্সবাজার খাদ্য গুদাম থেকে দেদারসে চাল-গম পাচার

বেপরোয়া সিন্ডিকেট

কক্সবাজার সদর খাদ্য গুদাম থেকে দেদারসে চাল-গম পাচার করছে চিহ্নিত চোরাকারবারি সিন্ডিকেট। গত দুই মাসেই খাদ্য গুদাম থেকে প্রায় ১০০ মেট্রিক টন চাল ও গম পাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে প্রতিবারই আনসার ভিডিপির রেশনের ভুয়া কাগজপত্র, মোটা অঙ্কের ঘুষ ও মুচলেকা দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে সিন্ডিকেটটি। আর এক্ষেত্রে সিন্ডিকেটটিকে সহায়তা করছে খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা, আনসার ভিডিপি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা। খাদ্য গুদাম থেকে চাল ও গম বের করার সময় তদারকি ও চ্যালেঞ্জ করার মতো কোনো কর্তৃপক্ষ না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার বেলা ১২টার দিকে ২০ মেট্রিক টন চাল বোঝাই একটি ট্রাক জব্দ করে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। পরে প্রায় এক ঘণ্টা তদবির করে ওই গোয়েন্দা সংস্থাকে ‘মুচলেকা’ দিয়ে জব্দকৃত চাল ছাড়িয়ে নেন খাদ্য গুদামের উপ-খাদ্য পরিদর্শক কামরুল ইসলাম। এর দু’দিন আগে বৃহস্পতিবার রাতে ২০ মেট্রিক টন চাল ভর্তি একটি ট্রাক জব্দ করে সদর থানায় নেয়া হয়। কিন্তু পাঁচ ঘণ্টার মধ্যেই গভীর রাতে মোটা অঙ্কের লেনদেনের মাধ্যমে তা ছাড়িয়ে নিয়ে যায় সিন্ডিকেট। এক সপ্তাহ আগেও একটি গম ভর্তি ট্রাক আনসার ভিডিপির রেশন উল্লেখ করে চালিয়ে দেয়া হয়। দেড় মাস আগে খুরুশকুল থেকে ত্রাণের চাল বোঝাই একটি ট্রাক জব্দ করে থানায় নেয়া হলে তাও ছেড়ে দেয়া হয়। সাগর নামের এক চোরাকারবারি কক্সবাজার সদর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অং থোয়াইকে ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন ধরে খাদ্য গুদাম থেকে চোরাইপথে চাল ও গম পাচার করে আসছে বলে অভিযোগ। সূত্র জানায়, চাল ও গম খাদ্য গুদাম থেকে বের করে নেয়ার সময় নজরদারি ও চ্যালেঞ্জ করার মতো কোনো কর্তৃপক্ষ না থাকায় দেদারসে পাচার চলছে। তবে মাঝে মধ্যে ধরা পড়লে আনসার ভিডিপির কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে সখ্যের মাধ্যমে তাদের রেশনের কাগজ দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকায় ম্যানেজ করে তা ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। শনিবার জব্দ করা চাল ছাড়িয়ে নেয়ার সময় ‘ভুল’ স্বীকার করে মুচলেকা দেন উপ-খাদ্য পরিদর্শক কামরুল ইসলাম নিজেই।

বৃহস্পতিবার রাতে ২০ মেট্রিক টন চালসহ জব্দ করা গাড়িতে কোনো কাগজপত্রই ছিল না। কিন্তু গভীর রাতে আনসার ভিডিপির কথিত কাগজ দেখিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে থানা থেকে চাল ভর্তি অন্য ট্রাকটি ছাড়িয়ে নিয়ে যায় সাগর সিন্ডিকেটের সদস্যরা। দেড় মাস আগে খুরুশকুল থেকে ত্রাণের চাল ভর্তি একটি গাড়ি জব্দ করা হয়। দু’দিন থানায় তদবির করে সেই গাড়িও ছাড়িয়ে নেয় চোরাকারবারি সিন্ডিকেট। এক সপ্তাহ আগেও একটি গমের ট্রাক আনসার ভিডিপির রেশনের কাগজ দেখিয়ে ছাড়িয়ে নেয় সাগর। এভাবে গত দুই মাসে প্রায় ১০০ মেট্রিক টন চাল পাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

আনসার ভিডিপির ভুয়া কাগজ দেখিয়ে চাল পাচারের ঘটনায় ২০১৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর কক্সবাজারের শীর্ষ কালোবাজারি হিসেবে চিহ্নিত মেসার্স তাজরেজা ফ্লাওয়ার মিলের কর্মচারী ও খুরুশকুল রাস্তারমাথা এলাকার সাগর এন্টারপ্রাইজের মালিক শ্রীমন্ত পাল সাগরের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এছাড়া চকরিয়া ও রামু থানায়ও তাদের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সরকারি চাল ও গম পাচারের মামলা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কাছেও। মুচলেকার বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর খাদ্য গুদামের উপপরিদর্শক কামরুল ইসলাম বলেন, গাড়িতে কাগজপত্র ছিল না, তা ভুল হয়েছে। শনিবারের চালগুলো সরকারি প্রোগ্রামের। তবে খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অং থোয়াই বলেন, আমি কোনো পাচার ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নই। এছাড়া গুদামের বাইরে কিছু ঘটলে সেই দায় আমার নয়। ডিও নিয়ে কেউ আমার কাছে এলে আমি কাগজপত্র দেখে খাদ্যশস্য ডেলিভারি দিয়ে থাকি।

http://www.jugantor.com/news/2017/08/20/149474