২০ আগস্ট ২০১৭, রবিবার, ৯:২৭

বন্যায় ৫ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ

ক্ষতির মুখে পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষার্থীরা

বন্যার কারণে দেশের বিভিন্ন জেলায় এ পর্যন্ত পাঁচ হাজারের বেশি স্কুল-কলেজ-মাদরাসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রাথমিক নি¤œœ-মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক স্তর মিলে এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। কারণ বন্যায় কতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ পর্যন্ত বন্ধ হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) কাছে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। দুইটি অধিদফতরের শীর্ষ কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। আবার কোথাও পানি কমছে। তাই প্রতিনিয়তই চিত্র পাল্টাচ্ছে। তবে পরিস্থিতি আমাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। বন্যার পানি নেমে গেলেই দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বন্যানিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র ও বিভিন্ন জেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্রে জানা গেছে, উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে বন্যায় পাঁচ হাজারের বেশি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা বন্ধ হয়ে গেছে অথবা তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া বন্যাকবলিত এলাকার বিপন্ন ও দুর্গতদের আশ্রয়ের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম। বন্যাকবলিত এলাকায় শিক্ষার্থীদের বইপুস্তকও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলমান বেশ কিছু পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়। স্থগিত এসব পরীক্ষার তারিখ বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়।
এ দিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এক সভায় জানানো হয়েছে, বন্যাকবলিত এলাকায় মানুষ ঘরবাড়িতে বসবাস করতে না পেরে উঁচু স্থানে বা স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসে উঠেছে।
এ জন্য স্কুলের কার্যক্রম আপাতত স্থগিত রেখে সেখানে দুর্গতদের আশ্রয়দানের জন্য ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বন্যাকবলিত এলাকায় শিক্ষার্থীরা বইপুস্তক রক্ষা করতে পারেনি।
সভার সিদ্ধান্তে বলা হয়, স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা ভবনগুলো বন্যাকবলিত জনসাধারণের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ দিতে হবে। এ জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকসহ স্থানীয়পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ত করতে হবে। ওই সভায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বন্যাকবলিত এলাকায় যেসব শিক্ষার্থীর বইপুস্তক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের সবাইকে বই দেয়ার জন্যও প্রস্তাব করা হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বন্যার পানি নেমে গেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো মেরামত করা হবে। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বাড়তি ক্লাস নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা করতে থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও নীলফামারী জেলায় বন্যার
কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলার অনেক এলাকা বন্যা প্লাবিত হয়েছে। লালমনিরহাট সদর উপজেলায় ৯১টি সরকারি প্রাথমিক স্কুল, আদিতমারীতে সাতটি প্রাথমিক স্কুল, কালীগঞ্জে ২০টি সরকারি প্রাথমিক স্কুল, হাতীবান্ধায় ২০টি সরকারি প্রাথমিক স্কুল ও পাটগ্রামে ১০২টি সরকারি প্রাথমিক স্কুলের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া জেলার ১৫টি কলেজ, ১০টি মাদরাসা ও ২০টি মাধ্যমিক স্কুলে পানি উঠেছে। এসব বিদ্যালয়ে
পাঠদান সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুর, নাগেশ্বরী ও সদর উপজেলার ৩০টি ইউনিয়ন। গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল জানান, বন্যার পানি ওঠায় তার জেলার ২১৭টি প্রাথমিক স্কুল বন্ধ আছে। মোট ৯০টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ৮০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম জানান, বন্যাদুর্গতরা আশ্রয় নেয়ায় ৩৯৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এখন পানি কিছুটা কমছে, বগুড়ায় ৭৬টি প্রাথমিক, দুইটি মাদরাসা ও মাধ্যমিকের ৮টিসহ মোট ৮৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। পাবনার ৬ উপজেলার দেড় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ায় পাঠদান বন্ধ করে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। বন্যার পানিতে চাটমোহরে ৩৪টি, ভাঙ্গুড়ায় ৪০টি, ফরিদপুরে ৩০টি, বেড়ায় ২৮টি, সাঁথিয়ায় দুইটি ও সুজানগরে ৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া বন্যার কারণে জেলায় ১৭টি মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ রয়েছে। জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ জানান, বন্যার পানি ওঠায় এ পর্যন্ত জেলার ৯১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এর মধ্যে ২৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহƒত হচ্ছে।
জানা গেছে, এবার ইউনিয়নপর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে আশ্রয়কেন্দ্র
স্থাপন ও পরিচালনায় সার্বিক উদ্যোগ নিতে বলা হয়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে শিথিলতার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/245440