কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে ত্রাণের জন্য ছুটে আসা বন্যাদুর্গতরা
১৯ আগস্ট ২০১৭, শনিবার, ১২:২৯

কুড়িগ্রামে অনাহারে দিন কাটছে দুর্গতদের, ত্রাণের জন্য হাহাকার

কুড়িগ্রাম জেলার বন্যাকবলিত ৯টি উপজেলার প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্র ও উঁচু বাঁধ কিংবা পাকা রাস্তায় আশ্রয় নেয়া মানুষ প্রায় অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। ত্রাণের জন্য তারা হাহাকার করছেন। সরকারি কিংবা ব্যক্তি উদ্যোগে বিভিন্ন জায়গায় চিঁড়া, মুড়ি, গুড়, খিচুরি বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুুল। বাজারে চিঁড়া, মুড়ি, গুড় ও পলিথিনের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ব্যক্তিপর্যায়ে যারা কিছুটা ত্রাণ দিচ্ছেন তারা রংপুর কিংবা বদরগঞ্জ থেকে শুকনো খাবার সংগ্রহ করছেন বলে জানা গেছে।

গো-চারণভূমি আট দিন ধরে বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকায় গবাদিপশু পাখির খাদ্য সঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছে। জেলায় এ পর্যন্ত বন্যার পানিতে ডুবে ও সাপের দংশনে মারা গেছে অত্যন্ত ১৪ জন। হাজার হাজার মানুষের ঘরবাড়ি বন্যার পানির তোড়ে সম্পূর্ণ কিংবা আংশিক ভেসে গেছে। কোথাও কোথাও ঘরবাড়ির চিহ্নও নেই। ৩-৪ ঘণ্টার ব্যবধানে গলা অবধি পানি এসে চোখের সামনে ঘর, ঘরে থাকা ধান-চাল, আসবাবপত্র ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ায় রেল ও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে গত চার দিন ধরে।

জেলার উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বালাডোবা ও বতুয়াতুলি (৬ নং ও ৭ নং ওয়ার্ড) চরে সরেজমিন দেখা গেছে, সেখানে ৭০টি পরিবার বাস করত। গত চার দিন আগে রোববার ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানির স্র্রোতের তোড়ে ৭০টি বাড়িই ভেসে গেছে। গ্রামের কোথাও কোথাও বাড়িঘরের চিহ্নও নেই সেখানে।

স্থানীয় ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মহুবাদশা বলেন, হঠাৎ করে গলা অবধি পানি আসায় এখনকার মানুষ পরিবার নিয়ে সাতটি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেন। বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ২২ হাজার মানুষ প্রায় সবাই বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছেন। সাতটি আশ্রয়কেন্দ্রে মাত্র তিন হাজার মানুষকে আশ্রয় দেয়া হলেও বাকি লোকজন নৌকা, কলা গাছের ভেলা, উঁচু বাঁধ, পাকা সড়কে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন।

সেখানের আমীর হামজা (৬২) বলেন, গত রোববার থেকে বালাডোবার চরে সিএলপির ভিটা কেসমত আলীর বাড়িতে রয়েছি। পরিবারের চার সদস্য নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমার তিনটি ঘরের মধ্যে দু’টি ভেসে গেছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারিভাবে কোনো ত্রাণ পাইনি।

বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আ: গফুর (৬৪) বলেন, তিন সদস্য নিয়ে ৮ নম্বর ওয়ার্ড ফকিরের চরে আশ্রয়ণ প্রকল্পে রয়েছি। আমার একটি মাত্র দোচালা টিনের ঘর পানিতে ভেসে গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কোন ধরনের ত্রাণ পাইনি। তবে মেম্বার বাদশা মিয়া বলেছেন, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের লোকজন আজ বা কাল ত্রাণ পাবেন। এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আ: গফুর ও আমীর হামজার মতো প্রায় ৭০টি পরিবারের সবারই ঘর ভেসে গেছে। একই এলাকার আমিনুল (৩২), আলম (২৮), জাহেদুল (৩০), আফজাল (২৮), আজিজল (৪০) শাহজাদাসহ (৩৫) সবারই বাড়িঘর আংশিক কিংবা সম্পূর্ণ বন্যায় ভেসে গেছে।

বেগমগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন জানান, গতকাল পর্যন্ত ১১ মেট্রিক টন চাল ও ৭০০ প্যাকেট শুকনো খাবার পাওয়া গেছে যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এ ইউনিয়নের প্রায় সব মানুষই হতদরিদ্র, প্রান্তিক কৃষক। চরে কাশিয়া, বাদাম, তিল, তিশি এসব ফসল আবাদ করে এবং ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রিকশা চালিয়ে এবং কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। আমার ইউনিয়নের মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। সবাই ত্রাণের জন্য হাহাকার করছেন।

উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম গতকাল বলেন, আমরা প্রতিদিনই ত্রাণ বিতরণ করছি। হাতিয়া এবং বেগমগঞ্জে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। যেসব এলাকার বন্যাকবলিত মানুষ ত্রাণ পাননি তারা আজই ত্রাণ পেয়ে যাবেন।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/245300