১৯ আগস্ট ২০১৭, শনিবার, ১২:২৬

সরকারকে চাল দিচ্ছে না মিলাররা

অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে লক্ষ্য অনুযায়ী বোরো সংগ্রহ করতে পারছে না সরকার। চুক্তি সত্ত্বেও সরকারকে নির্ধারিত মূল্যে চাল সরবরাহ করছেন না মিল মালিকেরা (মিলাররা)। হাওরে অকাল বন্যা ও সারা দেশে বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণে বাজারে চালের দাম বেড়েছে। এ অবস্থায় বোরো মওসুমে চাল সংগ্রহ থেকে পিছু হটতে হচ্ছে সরকারকে।

গত বুধবার খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভা শেষে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, সরকারের বোরো সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। চলতি অর্থবছরে বিদেশ থেকে ১৫ লাখ টন চাল এবং ৫ লাখ টন গম আমদানি করা হবে।

খাদ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, ১৬ আগস্ট পর্যন্ত ৭ লাখ টনের বিপরীতে ধান সংগ্রহ করা হয়েছে এক হাজার ৯৬৫ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার দশমিক ২৫ শতাংশ। আট লাখ টনের বিপরীতে চাল সংগ্রহ করা হয়েছে দুই লাখ চার হাজার ৯৫৪ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার ২৫ শতাংশের মতো।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বোরোতে ১৫ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হলেও সোয়া দুই লাখ টনের বেশি আসছে না সরকারের গুদামে। তাই ১২ লাখ ৭৫ হাজার টন ধান-চালই সংগ্রহ করতে পারবে না খাদ্য বিভাগ।

বোরো দেশের সবচেয়ে বড় ফসল। সঙ্কট মোকাবেলায় খাদ্যের মজুদ গড়ে তুলতে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সরকারের সংগ্রহের বড় অংশটিও হয় বোরো থেকে। তাই বোরো সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় সরকারের মজুদ সঙ্কট শিগগিরই কাটছে না বলেও মনে করা হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে এবার বোরোতে ধান-চাল সংগ্রহের শেষ সময় ৩১ আগস্ট। চার মাসের মধ্যে সাড়ে তিন মাসে ধানের লক্ষ্যমাত্রার ১ শতাংশও সংগ্রহ করতে পারেনি সরকার। আর চালের ক্ষেত্রে প্রায় ২৫ শতাংশ সংগ্রহ করা হয়েছে।

গত ১৬ এপ্রিল খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভায় চলতি বোরো মওসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ৭ লাখ টন ধান ও ৮ লাখ টন চাল সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মূল্য নির্ধারণ করা হয় প্রতি কেজি চালের দাম ৩৪ টাকা ও ধানের ২৪ টাকা। গত ২ মে থেকে বোরো ধান-চাল সংগ্রহ শুরু হয়। কিন্তু এর পরই চালের দাম বাড়তে শুরু করে। সরকারি বাণিজ্য সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বৃহস্পতিবারের তথ্যানুযায়ী, খুচরা বাজারে মোটা চালের দাম প্রতি কেজি ৪৩-৪৫ টাকা।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সংগ্রহ ও সরবরাহ) মো: আতাউর রহমান জানান, যেটুকু সংগ্রহ হয়েছে এরপর আর বোরো সংগ্রহ নিয়ে আমরা ভাবছি না। কারণ হাওরে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বোরো উৎপাদন হয়নি। আমরা চাল আমদানি করে মজুদ বাড়ানোর দিকে নজর দিচ্ছি।

খাদ্য অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, ১৬ আগস্ট সরকারি গুদামে খাদ্যশস্যের মজুদ ছিল চার লাখ ৩৬ হাজার টন। এর মধ্যে চাল দুই লাখ ৯২ হাজার টন, বাকিটা গম। গত বছর একই সময়ে চালের মজুদের পরিমাণ ছিল ছয় লাখ ৪৬ হাজার টন।

বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কে এম লায়েক আলী বলেন, বাজারে চালের যে দাম সরকার সেই অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করেনি বলে বোরো চাল সরবরাহ করতে পারিনি। চুক্তি করায় অনেক মিল মালিককে লস দিয়ে হলেও চাল সরবরাহ করতে হয়েছে। অনেকে বাজার সহনীয় হওয়ার অপেক্ষা করছেন।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা না প্রকাশ না করে বলেন, সরকারের ভাণ্ডারে এ মুহূর্তে চালের মজুদের পরিমাণ খুবই কম। সরকার মনে করছে, সরকারি আদর্শ মজুদের পরিমাণ ১০ লাখ টন হওয়া উচিত। সে লক্ষ্যেই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/245302