১৭ আগস্ট ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১১:৩১

ঝুঁকিতে মহাসড়ক

মধ্যাঞ্চলে বন্যার অবনতি

বন্যায় উত্তরাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো আগেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কয়েকটি জেলার রেললাইনে পানি ওঠায় রেল যোগাযোগও বন্ধ রয়েছে। এবার আঘাত এসেছে মহাসড়কে। কয়েকদিন আগে থেকেই রংপুর-কুড়িগ্রাম ও জয়পুরহাট-বগুড়া মহাসড়কে তলিয়ে ছিল। প্রতিদিনই বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, জামালপুর, নাটোরসহ কয়েকটি জেলায় মহাসড়ক আংশিক তলিয়ে গেছে। এসব সড়ক দিয়ে বর্তমানে ঝুঁকি নিয়ে যান চলাচল অব্যাহত থাকলেও পানি আরও বাড়লে তা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। গতকাল বুধবার নতুন করে হুমকির মুখে পড়েছে বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক। মহাসড়কের এলেঙ্গা অংশে পানি ওঠার উপক্রম হয়েছে। যে কোনো সময় সড়কটি তলিয়ে যেতে পারে। এমন হলে ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের সড়ক যোগাযোগ গুরুতরভাবে ব্যাহত হবে। ইতিমধ্যে টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর বালুর বস্তা ফেলে পানি ওঠা প্রতিরোধের চেষ্টা করছে। অন্যান্য স্থানেও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও মহাসড়ক রক্ষায় সেনাবাহিনী নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।

এদিকে দিনাজপুর ও নীলফামারীতে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও যমুনার পানি বাড়ায় সিরাজগঞ্জ ও জামালপুরে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। একই সঙ্গে মধ্যাঞ্চলের ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মুন্সীগঞ্জ, ঢাকার দোহার ও মাদারীপুরের শিবচরে বন্যা ছড়িয়ে পড়েছে।


বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, বিপদসীমার ১০০ সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হলে তাকে 'ভয়াবহ বন্যা' বলা হয়। তবে যমুনায় পানি বাড়লেও কমেছে তিস্তা ও ব্র?হ্মপুত্রে। মেঘনা অববাহিকার ভারতীয় অংশে পানি কমতে শুরু করায় অধিকাংশ নদীর পানিও কমছে। গঙ্গা-পদ্মার পানি আগামী ৭২ ঘণ্টায় বাড়লেও তা বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হবে। বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র আরও জানায়,

আগের ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি কুড়িগ্রামের নুনখাওয়া পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার কমেছে। তবে তা এখনও বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। ৮ সেন্টিমিটার পানি কমেছে কুড়িগ্রামের চিলমারী পয়েন্টে। তবে তা এখনও বিপদসীমার ৭৯ সেন্টিমিটার ওপরে। বাহাদুরাবাদ এবং ফুলছড়ি পয়েন্টে পানি স্থিতিশীল রয়েছে। জামালপুরের বাহাদুরাবাদে পানি এখনও বিপদসীমার ১৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। পরিস্থিতির অবনতি না হলেও এ এলাকা ভয়াবহ বন্যার সম্মুখীন হয়েছে।

গতকালও বন্যার পানিতে ডুবে স্কুলছাত্রসহ ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে কয়েকদিনে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৫৩ জনে। বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ পর্যন্ত ১০৭ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ ছাড়া বন্যার কবলে মোট ২২ জেলা এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা এখন ৩৩ লাখ ২৭ হাজার বলে তথ্য দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর।

সমকালের আঞ্চলিক অফিস, জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো আরও খবর :

দিনাজপুর :জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে। গ্রামাঞ্চলের পাশাপাশি নেমে যাচ্ছে শহরের পানি। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে লোকজন বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। তবে সংকট রয়েছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির। নলকূপগুলোতে পানি প্রবেশ করায় পানি ফুটিয়ে পান করার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। জেলা পাউবো কর্মকর্তা মাহবুব আলম জানান, ইতিমধ্যে প্রধান ৩টি নদীর মধ্যে দুটি নদীর পানি বিপদসীমার নিচে নেমে গেছে। আর একটির পানি বিপদসীমার একটু ওপরে অবস্থান করছে। তবে খুব দ্রুত পানি নেমে যাবে। গতকাল জাতীয় সংসদের হুইপ এম ইকবালুর রহিম, রংপুর সেনানিবাসের এরিয়া কমান্ডার (জিওসি) মেজর জেনারেল মাসুদ রাজ্জাক ও পার্বতীপুর শহীদ ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান ক্যান্টনমেন্টের ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিন আকবার জেলার বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ সময় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান জরুরি মেরামতের প্রতিশ্রুতি দেন তারা। এদিকে পানিতে ডুবে গতকাল আরও দু'জনের মৃত্যু হয়েছে। সকালে বিরল উপজেলার কাজীপাড়া এলাকার মিজানুর রহমানের মেয়ে মিনি আক্তার পুনর্ভবা নদীতে ডুবে মারা যায়। একই সময়ে পার্বতীপুর উপজেলার পলাশবাড়ী ইউনিয়নের আত্রাই গ্রামে করতোয়া নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে ডুবে মারা যায় দুলাল নামে এক ব্যক্তি। এ নিয়ে জেলায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২৪-এ।

জামালপুর :জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, মাদারগঞ্জ, সরিষাবাড়ী, বকশীগঞ্জসহ সারা জেলায় ৬ লাখ মানুষ বন্যাকবলিত। ৮৭৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। গতকাল বিকেল ৫টার দিকে বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে পানি বেড়ে বিপদসীমার ১৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রেললাইনে পানি ওঠায় এদিন সকাল থেকে জামালপুর-বঙ্গবন্ধু সেতু (পূর্ব) ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একদিনেই সরিষাবাড়ী সদরে পৌর এলাকার আরামনগর, শিমলা, বাউসী বাজার, বাসস্ট্যান্ড, হাসপাতাল, খাদ্যগুদাম, থানা, ভূমি অফিস, সাবরেজিস্ট্রার অফিস, ফায়ার স্টেশন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সরিষাবাড়ী রেললাইন তলিয়ে গেছে। শহরের প্রধান সড়কগুলো তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বকশীগঞ্জের বগারচর ইউনিয়নের গাজীরপাড়া, মেরুরচর ইউনিয়নের আউলপাড়া ও সাধুরপাড়া ইউনিয়নে তিনটি ব্রিজ ভেঙে গেছে। ফলে উপজেলা সদরের সঙ্গে ওই সব এলাকার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

এদিকে সেলফি তুলতে গিয়ে বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে মেলান্দহ উপজেলার নাগেরপাড়া গ্রামের দশম শ্রেণির ছাত্র জিল্লুর রহমান। নিখোঁজ রয়েছে তার সহপাঠী কাজীরপাড়া গ্রামের সজীব শেখ। এ ছাড়া তাদের বাঁচাতে গিয়ে সদর উপজেলার তেঁতুলিয়া এলাকার লাল মিয়া (৪৩) নিখোঁজ রয়েছেন। বকশীগঞ্জ উপজেলার মালিরচরে বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছেন মোজাম্মেল হক (৩৫) নামে এক ব্যক্তি।

জয়পুরহাট :জেলায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জয়পুরহাট-বগুড়া সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ভারী যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। জেলার ৪টি নদীর মধ্যে তুলসীগঙ্গার পানি বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভাঙন দেখা দিয়েছে আক্কেলপুর উপজেলার তুলসীগঙ্গা বাঁধের মাদারতলী ঘাট পয়েন্টে। জেলা ত্রাণ বিভাগ জানিয়েছে, বন্যায় জেলার ৬০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে।

সিরাজগঞ্জ :গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনার পানি বেড়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় বিপদসীমার ১৫২ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যার পানির স্তর ছুঁতে আর মাত্র ২৫ সেন্টিমিটার বাকি। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার যমুনা নদীর ব্রহ্মপুত্র বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরের গ্রামগুলো প্লাবিত হচ্ছে। জেলা সদর, কাজীপুর, চৌহালী, বেলকুচি ও শাহজাদপুর উপজেলার ৪৪টি ইউনিয়নের প্রায় ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তারা ছুটছে পাউবোর বাঁধ ও উঁচু স্থানে। তবে বাঁধ ভাঙার আতঙ্কে রয়েছে যমুনাপাড়ের লক্ষাধিক মানুষ। জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তর থেকে এ পর্যন্ত ৩৩৫ টন চাল ও প্রায় ১২ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।

নীলফামারী :সৈয়দপুর উপজেলার উঁচু এলাকা থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট একেবারে বিধ্বস্ত। পানি কমলেও মানুষের দুর্ভোগ কমছে না। উপজেলা ও পৌরসভার অনেক এলাকার বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ ও হাসপাতালের সামনে এখনও হাঁটুপানি। কয়েক দিনের বন্যায় উপজেলায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। যারা আশ্রয়কেন্দ্রে যায়নি, তাদের বেশিরভাগই কোনো ত্রাণ সহায়তা পায়নি। চার দিন পানিতে ডুবে থাকলেও কেউ তাদের খোঁজখবর নেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। সৈয়দপুর উপজেলা প্রশাসন বলছে, বাঁধ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত শুধু আড়াই হাজার পরিবারের জন্য ১৫ টন চাল ও ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে, যা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে।

গাইবান্ধা :কোনো কোনো নদীর পানি সামান্য কমলেও সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। করতোয়ার পানি গতকাল গোবিন্দগঞ্জ-ফুলবাড়ী-দিনাজপুর উপমহাসড়কের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া সাঘাটা উপজেলায় ৫টি ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ এখনও পানিবন্দি। দুই হাজার বানভাসি মানুষ পাউবো বাঁধসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। পাউবো জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্রের পানি এখনও বিপদসীমার ১০১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে গাইবান্ধা সদরের কামারজানি থেকে সুন্দরগঞ্জে বামর্তীর পীরগাছার তাম্বুলপুর পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার বাঁধের ৮০টি পয়েন্টে ধস দেখা দিয়েছে। ঘাঘট নদীর গাইবান্ধা শহর রক্ষা বাঁধের ডেভিড কোম্পানিপাড়া, বাহারবন, চকমামরোজপুর, কাজলঢোপের ৮টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ। ওইসব এলাকায় সার্বক্ষণিক তদারকি করছে সেনাবাহিনী।

কুড়িগ্রাম :চিলমারীতে ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়েছে ব্রহ্মপুত্র নদের বাঁধ। ইতিমধ্যে বাঁধটির প্রায় ১৫ জায়গা দিয়ে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। এদিকে গতকাল রৌমারীতে বন্যার পানিতে ডুবে শিশুসহ দু'জন মারা গেছে। হোসেন আলী (৬০) নামে এক ব্যক্তি কলাগাছের ভেলায় করে নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে ভেলাটি উল্টে পানিতে ডুবে তিনি মারা যান। এছাড়া সন্ধ্যায় উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের খঞ্জনমারা গ্রামে নানাবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে পানিতে পড়ে মারা যায় আনজিরা নামে এক শিশু।

পানি উঠায় জেলায় ৫০০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং কলেজ, মাধ্যমিক স্কুল, মাদ্রাসাসহ ২৩৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।

টাঙ্গাইল :যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় টাঙ্গাইল শহর হুমকির মধ্যে পড়েছে। আর সামান্য পানি বাড়লেই যুগনি স্লুইস গেট ভেঙে শহরসহ কয়েকটি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়বে। ইতিমধ্যে কালিহাতীর হাতিয়া বাঁধ ভেঙে সদর, বাসাইল, কালিহাতী উপজেলার অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া ভূঞাপুরের পিংনা-জোগারচর তারাকান্দি বাঁধের একটি অংশ ভেঙে গোপালপুর ও ভূঞাপুরের ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

শেরপুর : বন্যার পানিতে গোসল করতে গিয়ে এক কিশোর মারা গেছে। সদর উপজেলার কামারের চর ইউনিয়নের কামারেরচর বাজার সংলগ্ন শুক্রামাদি বিলে পানির পাকে পড়ে গতকাল বিকেলে হানিফ উদ্দিন (১৫) নামে ওই কিশোরের মৃত্যু হয়। হানিফ সদর উপজেলার সাহাবাজপুর ইউনিয়নের গণেশপুর গ্রামের দুলাল উদ্দিনের ছেলে। সে সাহাব্দির চর মধ্যপাড়া মাদ্রাসায় হেফজ বিভাগের ছাত্র ছিল।

সারিয়াকান্দি (বগুড়া) :গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল দুপুরে বিপদসীমার ১২৬ সেন্টিমিটার ওপরে অবস্থান করছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বগুড়ার ৪৫ কিলোমিটার ব্রহ্মপুত্র বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। বাঁধের বিভিন্ন পয়েন্টে ইঁদুরের গর্ত দিয়ে পানি চুয়াচ্ছে এবং ফাটল দেখা দিয়েছে। পাউবো জরুরিভিত্তিতে বাঁধ মেরামত করছে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল আলম জানান, ৬০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ এবং দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

নাটোর :চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের তিন শতাধিক বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি ওঠায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সিংড়া-বলিয়াবাড়ি স্থানীয় সড়কের যান চলাচল। আত্রাই নদীর পানি এখনও বিপদসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার ওপরে রয়েছে। পানি বাড়লে আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হবে।

ফরিদপুর :গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মার পানি গত ১২ ঘণ্টায় ২৪ সেন্টিমিটার বেড়ে গতকাল বিপদসীমার ৭৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে আস্তে আস্তে ফরিদপুরের নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকতে শুরু করে। সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের গোলডাঙ্গী সড়কটি পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে সেখানকার মানুষ। পদ্মার পাশাপাশি আড়িয়াল খাঁ, কুমার ও মধুমতী নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে রয়েছে। এর ফলে জেলার বিভিন্ন স্থানে ছয় হাজার পরিবার এখন পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।

মুন্সীগঞ্জ :জেলার লৌহজং ও টঙ্গিবাড়ীতে আবারও ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত দুই দিনে এই দুই উপজেলার ৫-৬টি বসতবাড়ি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। মানুষজন তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। গতকাল সন্ধ্যায় পদ্মার পানি ১৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে রাতে ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ফলে সদর, টঙ্গিবাড়ী ও লৌহজংয়ের পদ্মা তীরবর্তী গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

দোহার (ঢাকা) :উপজেলায় প্রায় ৫০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় বন্ধ রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। প্রায় ৫০ হাজার পানিবন্দি মানুষ ত্রাণের জন্য ছোটাছুটি করছে। এখন পর্যন্ত এলাকায় কোনো ত্রাণসামগ্রী পেঁৗছেনি। উপজেলা চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন জানান, জরুরি ত্রাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি উন্নয়ন উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে এসে ত্রাণ বিতরণ করবেন।

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) :উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ৮৮টি গ্রামের ৬৪ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকাশ কৃষ্ণ সরদার জানান, পদ্মার পানি বৃদ্ধি ও তীব্র স্রোতের কারণে নদীতীরবর্তী দেবগ্রাম ও দৌলতদিয়া এলাকায় দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। বাড়িতে পানি ওঠায় অনেকে রাস্তা ও উঁচু বাঁধে আশ্রয় নিচ্ছে। ইউএনও হাসান হাবীব জানান, বন্যার্তদের সাহায্যের জন্য ১০ লাখ টাকা, ১৭০ টন চাল, শুকনা খাবারসহ অন্যান্য চাহিদা উল্লেখ করে সোমবার মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

শিবচর (মাদারীপুর) :কয়েক দিনে হঠাৎ পদ্মায় অস্বাভাবিক গতিতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের কাউলিপাড়া দারুল উলুম কওমি মাদ্রাসাসহ শতাধিক বাড়িঘর নদীভাঙনের শিকার হয়েছে। হুমকিতে রয়েছে এ দুই ইউনিয়নের স্কুল, ইউনিয়ন পরিষদসহ শত শত ঘরবাড়ি। এদিকে পানি বাড়ায় এ দুটি ইউনিয়ন ছাড়াও চরাঞ্চলের মাদবরচর ও বন্দরখোলার হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) :ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে যাওয়া আখাউড়ার ৩টি ইউনিয়নের ২৭ গ্রাম থেকে উজানের পানি সরে যাচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়া মানুষ এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। তারা এখন জমিতে কাজকর্ম শুরু করেছে। ইতিমধ্যে উপজেলা কৃষি ও মৎস্য বিভাগের লোকজন মাঠে গিয়ে ক্ষতির

 

http://bangla.samakal.net/2017/08/17/317621