১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১০:৫৬

মুজিবকেল্লা প্রকল্পের নামে ১৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেন প্রকৌশলীর আত্মীয়স্বজন

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মুজিবকেল্লা প্রকল্পের কাজের নামে ১৫০ কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। অধিদফতরের ওই প্রকল্পের একজন সহকারী প্রকৌশলী আনোয়ারুল ইসলামের বিরুদ্ধে তার আত্মীয়স্বজনকে কাজ পাইয়ে দেয়ার নামে এই বিপুল টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।

প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী আনোয়ারুল ইসলামের বিরুদ্ধে উত্থাপিত দুর্নীতির অভিযোগে গত ১৮ আগস্ট সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের একটি সিন্ডিকেট তাকে বাঁচাতে তদন্ত রিপোর্ট না দেয়ার জন্য টালবাহানা করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এছাড়া দুর্নীতির অভিযোগে আনোয়ারুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে অভিযোগ দাখিল করেছেন আর এম সোহেল নামে এক ব্যক্তি। আনোয়ারুল ইসলামের বিরুদ্ধে অধিদফতরে দুর্নীতিসহ নামে-বেনামে অবৈধ সম্পদ গড়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। দুদক অভিযোগটি আমলে নিয়ে যাচাই-বাছাই করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
অধিদফতর সূত্র জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সুফল পেতে দেশব্যাপী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে দুর্নীতিবাজদের অপসারণ করা হচ্ছে। কিন্তু দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরে আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টার কাছে দায়ের করা অভিযোগ ও দুদকে দাখিল করা আবেদনে জানা গেছে, যেখানে সরকারের কাজের স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য এক পদে তিন বছরের বেশি থাকার বিধান নেই। সেখানে ২০১৮ সাল থেকে অধিদফতরটির মুজিবকেল্লা প্রকল্প শুরুর সময় থেকে সহকারী প্রকৌশলী আনোয়ারুল ইসলাম কর্মরত রয়েছেন দীর্ঘ সাত বছর ধরে। প্রথম শ্রেণীর পিআইও এর পদে পদোন্নতি হলেও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো: মহিববুর রহমানকে দিয়ে তদবির করে একই পদে থেকে যান তিনি। আনোয়ারুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে অভিযোগে তাকে অপসারণ ও দুর্নীতির বিষয় তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন করেন মো: আর এম সোহেল নামে এক ব্যক্তি। কিন্তু অধিদফতরটির পরিচালক প্রশাসন তাকে স্বপদে রেখেই লোকদেখানো একটি তদন্ত কমিটি করে কালক্ষেপণ করছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, তাকে ওই পদে রেখে দুর্নীতির তদন্ত করা হলে তা কোনো কাজে আসবে না। কারণ তদন্ত কমিটির কাছে সে নিজের মতো করে ফাইল উপস্থাপন করার সুযোগ পাবেন। এতে বর্তমান সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের সুফল পাবে না দেশের মানুষ।

অভিযোগে জানা গেছে, সহকারী প্রকৌশলী অনিয়ম ও দুনীতির মাধ্যমে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ঢাকা শহরে রয়েছে তার একাধিক বাড়ি ও ফ্ল্যাট। এর মধ্যে রাজধানীর মগবাজার দিলুরোডে ‘ডমিনো’ অ্যাপার্টমেন্টে রয়েছে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। নামে বেনামে ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরে বিভিন্ন প্রকল্পে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকার কাজ। অর্থের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের বিভিন্ন প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের।

অভিযোগে জানা গেছে, প্রকৌশলী আনোয়ারুল ইসলাম মেসার্স জান্নাত এন্টারপ্রাইজের কাগজপত্র ভুয়া থাকা সত্ত্বেও লক্ষ্মীপুর জেলায় একটি ও নোয়াখালী জেলায় একটি নোয়া (অনাপত্তিপত্র) প্রদান করা হয়েছে মুজিবকেল্লার। যার চুক্তিমূল্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা। জান্নাত এন্টারপ্রাইজ আনোয়ারুল ইসলামের আত্মীয় এবং ব্যবসায়িক পার্টনার। আরেক দিকে মেসার্স খান অ্যান্ড ব্রাদার কাগজপত্র ভুল থাকা সত্ত্বেও এর নামে নোয়াখালী জেলায় সুবর্ণচর উপজেলায় দু’টি নোয়া প্রদান করা হয়েছে আরেকটি মুজিবকেল্লার। যার চুক্তিমূল্য প্রায় ১৬ কোটি টাকা। খান অ্যান্ড ব্রাদার্সের নামে আনোয়ারুল ইসলাম নিজেই ঠিকাদারি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আরিফ এন্টারপ্রাইজের নামে লক্ষ্মীপুর ও ভোলা জেলায় মোট ছয়টি মুজিবকেল্লার কাজের নোয়া প্রদান কর হয়েছে। যার চুক্তিমূল্য ৩৫ কোটি টাকা। আরিফ এন্টারপ্রাইজের সাথেও পার্টনারে কাজ করেন বিধায় কাজের অতিরিক্ত বিল প্রদান করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

এছাড়া মেসার্স শাহ জব্বারিয়া এন্টারপ্রাইজ আনোয়ারুল ইসলামের বন্ধু হওয়ার কারণে দুইজনে পার্টনারে ঠিকাদারি করেন। চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী এবং ভোলা জেলার মনপুরা, দৌলতখান উপজেলায় মোট পাঁচটি মুজিবকেল্লার কাজের নোয়া প্রদান করেন। যার শক্তিমূল্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা। ভোলা জেলায় দৌলতখান এবং বোরহানউদ্দিন উপজেলায় আনোয়ারুল ইসলামের বোন জামাই মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, ইউনুস অ্যান্ড সন্সের নামে পাঁচটি মুজিবকেল্লার কাজ করেন। যার কার্যাদেশ মূল্য প্রায় ১৮ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলায় হালিমা ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের নামে আনোয়ারুলের চাচাতো ভাই দু’টি মুজিবকেল্লার কাজ করে। যার কার্যাদেশ মূল্য প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলায় তৈয়বা ইন্টারন্যাশনালের নামে তার মামাতো দুলাভাই মুজিবকেল্লার কাজ করেন। তার কার্যাদেশ মূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা।

এছাড়াও আনোয়ারুল ইসলাম তার আত্মীয়-স্বজনদের নামে আরো কয়েকটি মোট প্রায় ১৫০ কোটি টাকার মুজিবকেল্লার কাজ হাতিয়ে নিয়েছেন।

অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ সত্য নয়। কাজ দেন অধিদফতরের মহাপরিচালক। একই পদে দীর্ঘদিন থাকার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ চেয়েছে বলেই এই পদে এখনো আছি।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/863261