২৯ এপ্রিল ২০১৭, শনিবার, ১০:১০

চিংড়ি ঘেরে অজ্ঞাত রোগে ব্যাপক মড়ক ॥ দিশেহারা চাষী

বাগেরহাটের রামপালে অজ্ঞাত রোগে সাদাসোনা খ্যাত বাগদা ও গলদা চিংড়ির ঘেরে মড়ক দেখা দিয়েছে। এতে চিংড়ি চাষীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এভাবে চিংড়ি মরতে থাকলে চাষীরা দারুণভাবে আর্থিক ক্ষতিরমুখে পড়বে বলে আশংকা করছেন তারা। গত দুই সপ্তাহে উপজেলার কয়েক শত ঘেরে হঠাৎ করে চিংড়ি মারা যায়। প্রতিদিনই এর সংখ্যা বাড়ছে। মৌসুমের শুরুতেই উপজেলার অধিকাংশ ঘেরে চিংড়িতে মড়ক লেগেছে বলে চাষীরা দাবি করেছে। উপজেলার অধিকাংশ ঘেরের চিংড়িতে মড়ক দেখা দিলেও তা প্রতিকারে কোন পরামর্শ সহায়তা পাচ্ছেন না বলে চাষীরা জানিয়েছেন।

তবে কি রোগে ঘেরের বাগদা চিংড়িতে মড়ক লেগেছে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেনা মৎস্য বিভাগ। তারা আক্রান্ত বাগদা চিংড়ি সংগ্রহ করে রোগ নির্ণয়ের জন্য তা পরীক্ষাগারে পাঠাচ্ছে।
ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে ঘের প্রস্তুত করে চাষীরা বাগদার পোনা ছাড়তে শুরু করেন। অধিকাংশ ঘেরের বাগদা চিংড়ি ইতিমধ্যে ৬৬ গ্রেডের হয়ে গেছে। এই চিংড়ি জৈষ্ঠ্য মাসে চাষীরা ধরে তা বাজারে বিক্রি করে থাকেন।
মৌসুমের শুরুতে চিংড়িতে মড়ক দেখা দেয়ায় চাষীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। তারা বলছেন চলতি বছরে লাভ তো দূরের কথা অধিকাংশ চাষীকে ঋণগ্রস্থ হতে হবে বলে আশংকা করছেন জেলা চিংড়ি চাষীরা। এই বিপর্যয় কাটাতে চাষীদের মাছ চাষে রাখতে সরকারকে সুদমুক্ত ঋণ দেয়ার দাবি জানিয়েছে তারা।
সোমবার সকালে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার রামপাল সদর, হুড়কা, পেড়িখালী, ও রাজনগরসহ বিভিন্ন বিলে গিয়ে দেখা গেছে অধিকাংশ ঘেরে বাগদা চিংড়ি মরে রয়েছে। কোন কোন চাষী তার ঘেরের পানিতে নেমে মরা চিংড়ি তুলে উপরে ফেলে দিচ্ছেন। আবার অনেকে হতাশ হয়ে ঘেরে নামছেন না। মরে যাওয়া চিংড়িতে লাল ও হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। উপজেলার অধিকাংশ মাছের ঘেরে একই অবস্থা।
চাষীরা বলছেন, মৌসুমের শুরুতে ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে ঘের প্রস্তুত করে আমরা বাগদার পোনা ছাড়তে শুরু করি। অধিকাংশ ঘেরের বাগদা চিংড়ি ইতিমধ্যে ৬৬ গ্রেডের হয়ে গেছে। এই চিংড়ি জৈষ্ঠ্য মাসে ধরে বাজারে বিক্রি করা শুরু করি। হঠাৎ করে বাগদা চিংড়ি মরতে শুরু করে। ঘেরে নেমে আমরা বাগদা চিংড়ি দেখতে পাচ্ছি না। তবে কি কারণে ঘেরের বাগদা চিংড়ি মরছে তা তারা বলতে পারছেন না। এতে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। নতুন করে তারা আবার মাছ ছাড়বেন সেই টাকা তাদের কাছে নেই। মাছ মরে যাওয়ার কারণে দেনাগ্রস্থ হয়ে পড়বেন বলে তারা আশংকা করছেন।
চিংড়ি চাষী মোঃ লোকমান হোসেন বলেন, রামপাল উপজেলার অধিকাংশ ঘেরের বাগদা চিংড়িতে মড়ক লেগেছে। এবার মোড়ক লাগার বিষয়ে কোন ঘের মালিক কোন কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। এতে হাজার হাজার চাষি দারুণভাবে আর্থিক ক্ষতিরমুখে পড়েছেন। উপজেলার অধিকাংশ চাষীরা চড়া সুদ ও ব্যাংকের ঋণ নিয়ে চিংড়ি করে থাকে। মৌসুমের শুরুতে এমন বিপর্যয় চাষীকে সর্বশান্ত করবে। তাই এইসব চাষীদের তালিকা তৈরি করে সরকারকে সুদমুক্ত ঋণ দেয়ার দাবি জানান তিনি।
বাগেরহাট মৎস্য বিভাগের বিভাগীয় মৎস্য কর্মকর্তা (ডিএফও) জিয়া হায়দার সাংবাদিকদের বলেন, মৌসুমের শুরুতে এই এলাকায় বৃষ্টিপাত অনেক কম। অনাবৃষ্টি ও ঘেরগুলোতে যে পরিমাণ পানি থাকার দরকার তা নেই। ফলে প্রচণ্ড তাপদাহে পানি গরম হয়ে অক্সিজেন কমে গেছে। অনাবৃষ্টির কারণে অস্বাভাবিকহারে তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। তাই বাগদা চিংড়িতে মড়ক লেগেছে। এতে চাষীরা আর্থিক ক্ষতিরমুখে পড়ছেন। তারপরও মারা যাওয়া চিংড়ি পরিক্ষা-নিরিক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

http://www.dailysangram.com/post/281860-