২৯ এপ্রিল ২০১৭, শনিবার, ১০:০৫

চার বিভাগে গরম চারটিতে বৃষ্টি

প্রাকৃতিকভাবেই দেশে আবহাওয়ার বিভক্তি সুস্পষ্ট। শীত মওসুম বিদায়ের পর থেকেই দেশের চার বিভাগে অপেক্ষাকৃত গরম এবং অপর চার বিভাগের অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা আবহাওয়া বিরাজ করছে। চার বিভাগের ঠাণ্ডা অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অবশিষ্ট অঞ্চল অপেক্ষা বেশি।
ঢাকা বিভাগের ফরিদপুর, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ জেলাকে বাদ দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে একটি সরল রেখা টানা হলে এক পাশে থাকবে ঢাকা বিভাগের অপর জেলাগুলো এবং সিলেট, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামের জেলাগুলো। অপর অংশে থাকবে ঢাকা বিভাগের তিন জেলা এবং বরিশাল, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চল। আবহাওয়ার বিভক্তিটা এ কল্পিত সরল রেখার এ পাশ এবং ওপাশে স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে আবহাওয়াবিদদের কাছে।
বেশ কয়েকদিন ধরে সিলেট, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম বিভাগে ভারী থেকে ভারী ও মাঝারি ধরনের বর্ষণ হয়ে আসছে। সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের বিভাগের নদী-খাল ও হাওর অবশ্য সীমান্তের ওপার থেকে পাহাড়ি বর্ষণে সৃষ্ট ঢলের পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে। আসাম-মেঘালয়ের বিভিন্ন অঞ্চলের বর্ষণের পানি আকস্মিক বন্যা হয়ে নেমে আসছে হাওরে। সাম্প্রতিক সময়ে সিলেট ও সুনামগঞ্জের হাওরবাসীর দুঃখে পরিণত হয়ে গেছে সীমান্তের ওপারে পাহাড়ি ঢলের পানি।
অন্য দিকে রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অপর চার বিভাগের চেয়ে অনেক কম। এর বাইরে রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের কয়েকটি জেলায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস পেলেই তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে তাপ প্রবাহের অবস্থায় পৌঁছে যাচ্ছে। গত ২৫ এপ্রিল থেকেই রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা, দিনাজপুর অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তাপ প্রবাহ। গতকাল শুক্রবারও রাজশাহী, পাবনা, যশোর ও সাতক্ষীরা অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু তাপ প্রবাহ ছিল এবং তা আজ শনিবারও অব্যাহত থাকবে।
আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, আবহাওয়ার বিচিত্রতা কেবল বাংলাদেশেই পরিলক্ষিত হচ্ছে, তা নয়। এটা বিশ্ব আবহাওয়ার অংশ। বিশ্বের অন্যান্য অংশে জলবায়ু অথবা আবহাওয়ার পরিবর্তন হলে বাংলাদেশের আবহাওয়ায় অথবা জলবায়ুতে তার প্রভাব পড়বেই। তারা বলছেন, বিশ্বব্যাপী পরিবর্তনশীল আবহাওয়ার কারণে অথবা জলবায়ু সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ। বিষয়টি অধিক স্পষ্ট বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে। সেন্টার ফর গ্লোবাল চেঞ্জের নির্বাহী পরিচালক এহসান আহমেদ জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে এই পরিবর্তন বেশ স্পষ্ট। ৩০ বছর আগের পরিবেশ আর এখনকার পরিবেশের মধ্যে বেশ পার্থক্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। বরগুনা অথবা পটুয়াখালীর উপকূলে ধান চাষের ধরন পাল্টে গেছে। আগে যেখানে শুকনা ভূমি ছিল এখন তাতে প্রায়ই জোয়ারের পানি উঠে যাচ্ছে। বরগুনা অঞ্চলে যেখানে ৩০ বছর আগে মানুষ শুকনো ভূমিতে বাজার প্রতিষ্ঠা করেছিল এখন সেখানে প্রায়ই জোয়ারের পানি উঠে যাচ্ছে। এটা জলবায়ু পরিবর্তনের খারাপ ফল বলে মনে করছেন এহসান আহমেদ। তিনি বলেন, এর বাইরে দিনাজপুর অঞ্চলের আবহাওয়া অন্য অঞ্চলগুলো থেকে ভিন্ন রকমের। অপর দিকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বৃষ্টিপ্রবণ। সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের অপেক্ষাকৃত বেশি বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশান্ত মহাসগারীয় ইএনএসও এপ্লিকেশন কাইমেন্ট সেন্টারের গ্র্যাজুয়েট ফ্যাকাল্টির প্রিন্সিপাল সায়েন্টিস্ট ড. মো: রাশেদ চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশের আবহাওয়া বিশ্ব আবহাওয়ারই অংশ। এল নিনো অথবা লা নিনার প্রভাবে বাংলাদেশের আবহাওয়ায় পরিবর্তন আসে। বৃষ্টির ধরন অথবা অনাবৃষ্টিতে প্রভাবে ফেলে। গতকাল শুক্রবার রাশেদ চৌধুরী নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, বিশ্ব আবহাওয়া এখন এল নিনো ও লা নিনা মুক্ত। বলা চলে যে আবহাওয়া নিরপেক্ষ অবস্থায় রয়েছে। তিনি বলেন, আগামী জুলাই অথবা আগস্ট মাসে এমনকি সেপ্টেম্বর মাসে এল নিনো অথবা লা নিনার সক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৩০ শতাংশ। বর্তমানে এল নিনো অথবা লা নিনা নিরপেক্ষ অবস্থায় আবহাওয়া স্বাভাবিক আচরণ করছে। সামনের দিনগুলোতে হয়তো এটা না-ও থাকতে পারে।
উল্লেখ্য, এল নিনো অথবা লা নিনা হলো প্রশান্ত মহাসগারীয় অঞ্চলে আবহাওয়ার বিশেষ একটি অবস্থা। এ দুইয়ের কারণে প্রশান্ত মহাসাগরের জলবায়ুতে পরিবর্তন হয়।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/216060