২২ এপ্রিল ২০১৭, শনিবার, ১০:৪৯

উচ্চাভিলাষী নির্বাচনী এডিপি আসছে

আকার বাড়ছে ৪২ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা; সরকারি অর্থায়ন ৯৬ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা; প্রকল্প সহায়তা ৫৭ হাজার কোটি টাকা

আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নতুন অর্থবছরের জন্য ৩৮ দশমিক ৫১ শতাংশ আকার বাড়িয়ে উচ্চাভিলাসী নির্বাচনী ও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) করা হচ্ছে। এর আকার হচ্ছে এক লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। যা চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের মূল ও আরএডিপির চেয়ে ৪২ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা বেশি। বরাদ্দে অগ্রাধিকার পাচ্ছে পদ্মা সেতুর কারণে পরিবহন ও বিদ্যুৎ খাত। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, বাস্তবায়ন না করতে পারলেও আকার বড় করতে কোনো সমস্যা নেই। নির্বাচন সামনে রেখে কাগজে-কলমে যাই করি না কেন বাস্তবায়ন তো হবে না। তাদের মতে সমস্যা হলো আমরা বাস্তবায়নের ক্ষমতা না বাড়িয়ে আকার বাড়াচ্ছি।

অর্থ মন্ত্রণালয় ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে পদ্মা বহুমুখী সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ ১০টি মেগাপ্রকল্পের জন্য বড় ধরনের বরাদ্দ রাখতে হবে। তাই আগামী এডিপির আকার স্বাভাবিকভাবেই বড় হচ্ছে। ২০১৯ সালের শুরুতে কিংবা ২০১৮ সালের শেষ দিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। তাই নির্বাচনের আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট হবে বর্তমান সরকারের মেয়াদকালের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। এ কারণে আসন্ন বাজেটকে নির্বাচনী বাজেট ও নির্বাচনী এডিপি বলা হচ্ছে। আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের এডিপির আকার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্পদ কমিটির সভা থেকে চূড়ান্ত করে পরিকল্পনা কমিশনের কাছে পাঠানো হয়েছে। আর ইআরডি থেকে এডিপিতে প্রকল্প সাহায্য বা পিএ খাতে অর্থায়নের অংশে বলা হয়েছে ৫৭ হাজার কোটি টাকা। চলতি এডিপির পিএ’র আকার থেকে এটা ২৪ হাজার কোটি টাকা বা ৭২ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি। এটা বর্তমান অর্থবছরে কমিয়ে ৩৩ হাজার কোটি টাকায় আনা হয়েছে। মূল এডিপিতে এটার আকার ধরা হয়েছিল ৪০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের জন্য ৬০০ কোটি ডলার বৈদেশিক সাহায্য পাওয়ার প্রতিশ্রুতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

অন্য দিকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়নে সরকারি অর্থায়ন (জিওবি) প্রস্তাব করা হয়েছে ৯৬ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের আরএডিপির চেয়ে ১৮ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা বা ২৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরে জিওবি খাতে বরাদ্দ শেষ পর্যন্ত বাড়িয়ে ধরা হয় ৭৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পিএ’র আকার কমিয়ে ওই ঘাটতিটা জিওবি থেকে পূরণ করে এডিপির আকার ঠিক রাখা হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়নে পদ্মা সেতুর পাশাপাশি আরো ৯ মেগা প্রকল্প দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নের পদপে থাকবে আগামী বাজেটে। এ জন্য বরাদ্দও বাড়ানো হবে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. এবি মীর্জ্জা আজিজুল ইসলামের মতে, দেড় লাখ কোটি টাকার এই উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। এটা পুরনো ইতিহাস। আমাদের বাস্তবায়ন দক্ষতা বাড়েনি। কিন্তু প্রতি বছরই আকার বাড়ছে। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের আরএডিপি করার সময় পরিকল্পনা কমিশন থেকে আকার ১০ শতাংশ কাটছাঁট করার প্রস্তাব করা হয় এনইসিতে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তা বহাল রাখেন। অন্য দিকে, অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার হলো ৪৫ শতাংশ। যা গত অর্থবছর ছিল ৪৪ শতাংশ। ফলে যে আকারের এডিপি করা হচ্ছে, তা কোনোভাবেই বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। কাগজে-কলমে লিখতে তো কোনো মানা নেই।

তিনি বলেন, সামনে যেহেতু জাতীয় নির্বাচন, তার আগেই বাজেট। ফলে রাজনৈতিক নেতারা তাদের বিভিন্ন প্রকল্প এডিপিতে যুক্ত করার জন্য তো বলবেন। সে হিসেবে এটাকে নির্বাচনী এডিপিও বলা যায়।
বিশ্বব্যাংকের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনের মতে, বাস্তবায়ন হবে না জেনেও আমাদের রীতি হয়ে গেছে প্রতি বছর বড় আকারের এডিপি দিয়ে অর্থবছর শুরু করতে হবে। অর্থবছরের মাঝপথে এসে প্রকল্প সাহায্য খাতে বরাদ্দের আকারে বড় ধরনের কাটছাঁট করা হয়। তিনি বলেন, আমাদের পাইপলাইনে যদিও বেশ বড় আকারের অর্থ আছে; কিন্তু ওটা ব্যবহার করার ক্ষমতা আমাদের ১৬ থেকে ১৮ শতাংশের বেশি না। আগামী অর্থবছর ওটার ব্যবহার ক্ষমতা আরো বাড়ছে বা ছাড়করণ বৃদ্ধি পাবেÑ এটা আমরা বলতে পারি না।
তিনি বলেন, আমরা প্রতিশ্রুতি পাচ্ছি পাবো; কিন্তু ছাড় তো হতে হবে। এ ছাড়া আমাদের এমন কোনো সংস্কার হয়নি যে, আমরা ছাড়করণ বাড়াতে পারব। এডিপির বাস্তবায়ন জুনে এসে দেখা যায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/214098