২২ এপ্রিল ২০১৭, শনিবার, ১০:৪৩

আরেক দফা বাড়ল চালের দাম

নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী বাজার

সরকারের চাল ক্রয়ের ঘোষণার সাথে সাথে আরেক দফা বেড়েছে চালের দাম। প্রায় সব ধরনের চালের দাম কেজিতে পাঁচ-ছয় টাকা বেড়েছে। রমজান মাস আসতে প্রায় দেড় মাস বাকি থাকলেও বাজারে বাড়তে শুরু করেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। পেঁয়াজ, রসুন, ডাল, ছোলার দাম বেশ কিছুটা বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মওসুম পরিবর্তনের কারণেই দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন আড়তদাররা। এর প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারে।

সম্প্রতি চলতি বোরো মওসুমে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান-চাল সংগ্রহের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। কৃষকদের ফসলের ন্যায্য হিস্যা দিতে এবং কৃষকের আর্থিক উন্নয়নে আগামী ২ মে থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত ২৪ টাকা দরে ধান এবং ৩৪ টাকা দরে চাল সংগ্রহের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ ঘোষণার পর থেকে চালের দাম বাড়তে থাকে।
গতকাল শুক্রবার রাধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কেজিপ্রতি মোটা স্বর্ণা চাল ৪২ টাকা, পারিজা চাল ৪২-৪৩ টাকা, মিনিকেট ভালোটা ৫৫-৫৬ টাকা, মিনিকেট নরমাল ৫২ টাকা, বিআর-২৮ ৪৬ টাকা, নাজিরশাইল ৪২-৪৮ টাকা, বাসমতি ৫৬ টাকা, কাটারিভোগ ৭৪-৭৬ টাকা, হাস্কি নাজির চাল ৪১ টাকা এবং পোলাও চাল ১০০ (পুরাতন), নতুন ৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
চালের পাশাপাশি রমজানকে সামনে রেখে বেড়েছে সব ধরনের নিত্যপণের দাম। পণ্যের মূল্যতালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি চার-ছয় টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহে ২৮ টাকা দরে বিক্রি হওয়া দেশী পেঁয়াজ বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩২ টাকায়। আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজ কেজিতে ছয় টাকা বেড়ে ২৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে রসুনের দাম মানভেদে কেজিতে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া দেশী রসুন বাজারে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ভারতীয় রসুনের দাম কেজিতে ১০ টাকা বাড়িয়ে ২০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া কেজিপ্রতি দেশী মসুর ডাল ১৩০ টাকা, ভারতীয় মসুর ডাল ১০০ টাকা, দেশী মুগ ডাল ১২০ টাকা, ভারতীয় মুগ ডাল ১১০ টাকা, মাষকলাই ১৩৫ টাকা এবং ছোলার ডাল ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশী পেঁয়াজের সরবরাহ কমায় বাজারে ভারত থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। ফলে ব্যবসায়ীরাও এখন আমদানি বাড়িয়েছেন। তবে তা সার্বিক চাহিদা মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত নয়। এতে বাজারে পণ্যটির দাম কিছুটা বেড়েছে।

ব্যবসায়ীদের এমন তথ্যের পরিপ্রেেিত ভোক্তারা বলছেন, ব্যবসায়ীদের এসব অজুহাত রমজানের আগে পণ্যের দাম বাড়ানোর কৌশল ছাড়া আর কিছুই না। ক্রেতা রাসেল আহমেদ বলেন, প্রতি বছরই রমজানের আগে সব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। তবে এ দিকে সরকারের কোনো ভ্রƒপে নেই। এটা আমাদের জন্য ভোগান্তি ছাড়া আর কিছুই নয়।
রাজধানীতে গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে বেশির ভাগ সবজির দাম বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বেশির ভাগ সবজিতে অন্তত পাঁচ টাকা করে দাম বেড়েছে। আবার কিছু সবজিতে দাম বেড়েছে আট থেকে দশ টাকা।
শুক্রবার রাজধানীর সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় কয়েকটি বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহে প্রতি কেজি ঝিঙার দাম ছিল ৪০ টাকা, এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা করে। মান ভেদে করলার দাম বেড়েছে ১০ টাকা। গত সপ্তাহে যে করলা ৩০ টাকা বিক্রি হয়েছে, তা এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা করে, আর ৩৫ টাকার করলা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা করে। পটোলের দাম ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা করে। বেগুনের দামও বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি। সাদা বেগুন ৬০ টাকা, কালো বেগুন ৫০ টাকা, শিম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, ৩০ টাকার টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা করে। ধুন্দুলের দামও বেড়েছে ১০ টাকা, বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। মান ভেদে শসার দাম ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়।

৫০ টাকার বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা করে। ঢেঁড়সের দাম ছিল ৩০ টাকা, যা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা করে। কাঁচকলার হালি ছিল ২৫ টাকা, বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা করে। এ ছাড়া অন্যান্য সবজিতেও অন্তত পাঁচ টাকা করে দাম বেড়েছে।
কেজিপ্রতি আলু ২০ টাকা, পেঁপে ১৫ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। লেবু হালিপ্রতি ২০ টাকা, পালংশাক আঁটিপ্রতি ১৫ টাকা, লালশাক ১৫ টাকা, পুঁইশাক ২০ টাকা এবং লাউশাক ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গরুর গোশত প্রতি কেজি ৫০০ টাকা, খাসির গোশত প্রতি কেজি ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকায়। এ ছাড়া লেয়ার মুরগি ১৮০, দেশী মুরগি ৪০০, লাল মুরগি ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আকার ভেদে প্রতি কেজি রুই মাছ ২৫০-৩৫০ টাকা, সরপুঁটি ৩৫০-৪৫০ টাকা, কাতলা ৩৫০-৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৪০-১৮০ টাকা, সিলভার কার্প ১৫০-২০০ টাকা, চাষের কৈ ২০০-২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
পাঙ্গাশ প্রতি কেজি ১৩০-১৮০ টাকা, টেংরা ৬০০ টাকা, মাগুর ৬০০-৮০০ টাকা, প্রকার ভেদে চিংড়ি ৪০০-৮০০ টাকা, প্রতিটি ইলিশ ১৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে; প্রতি কেজি ইলিশের দাম রাখা হচ্ছে ১৬০০ টাকা।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/214073