১০ এপ্রিল ২০১৭, সোমবার, ৯:২১

ঢাকাতে ইন্ডিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার যত ব্যক্তি রয়েছে বাংলাদেশেরও তত নেই -গয়েশ্বর

ঢাকাতে ইন্ডিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার যত ব্যক্তি রয়েছে বাংলাদেশেরও তত নেই উল্লেখ করে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, প্রতিরক্ষা সমঝোতার ফলে ভারতের সৈন্যরা বাংলাদেশে নির্বিঘেœ প্রবেশ করবে কিন্তু আমাদের সৈন্যরা সে দেশে প্রবেশ করতে পারবে না। তিনি বলেন, কাবিন দিয়ে যেমন দাম্পত্য জীবন নিশ্চিত করা যায় না, তেমনি চুক্তির বেড়াজালে ফেলে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব পাওয়া যাবে না। বন্ধুত্ব কোনো চুক্তি দিয়ে হয় না। দিন দিন আরো ঘৃণা বাড়বে।

গতকাল রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ভিআইপি লাউঞ্জে এক গোল টেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘জাতীয় সম্পদ, জাতীয় নিরাপত্তা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে বেগম খালেদা জিয়ার ডাক’ শীর্ষক এই আলোচনার আয়োজন করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ন্যাশনালিস্ট এক্স-স্টুডেন্টস এ্যাসোসিয়েশন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বাংলাদেশের ভূখ- ব্যবহার করে ভারত তার নিজস্ব ভূখ- রক্ষায় প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে। মনে হচ্ছে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বলে যে একটি শব্দ রয়েছে সেটা ভুলে যেতে হবে। কারণ বড় দেশের পাশে ছোট দেশের এটা থাকতে নেই। আমাদের তিন দিকে ভারত। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বেশি অস্ত্র আমদানিকারক দেশ। তাহলে তাদের কাছ থেকে আমাদেরকে অস্ত্র কিনতে হবে কেন? আমার দেশে যদি যুদ্ধ লাগে সীমান্তবর্তী দেশ কোন্্টা, ‘ভারত’। এই অস্ত্র কাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার হবে? কাজেই ভারতের নিরাপত্তা রক্ষায় চুক্তি হয়েছে বাংলাদেশের কোনো চুক্তি হয় নাই। ভারতের সঙ্গে যদি অন্য কোনো বড় রাষ্ট্রের যুদ্ধ বাধে তাহলে বাংলাদেশকে ব্যবহার করা হবে। ভারত তার সীমান্ত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে এটা কি বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য সম্মান বলে? প্রশ্ন রাখেন গয়েশ্বর।
এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, প্রতিরক্ষা সমঝোতার ফলে ভারতের সৈন্যরা বাংলাদেশে নির্বিঘেœ প্রবেশ করবে কিন্তু আমাদের সৈন্যরা সে দেশে প্রবেশ করতে পারবে না। আমাদের দেশে এখন এমনিতেই তাদের অনেক গোয়েন্দা দেখা যায়। মনে হয় ঢাকাতে ইন্ডিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার যত ব্যক্তি আছে বাংলাদেশেরও তত নাই।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ আমরা করেছি। রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। তখন ভারত আমাদের সহযোগিতার নামে মূলত পাকিস্তান বিভক্ত করেছে। এই কথা বললে অনেকে হয়তো রাজাকার বলতে পারে। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আজকে যদি ভারত আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্বের নামে এ ধরনের প্রভূত্বগিরি দেখানোর চেষ্টা না করতো তাহলে এই প্রশ্নটা উঠতো না ।
ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রীকে সম্মাননা প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, পত্র-পত্রিকা পড়ে যা বুঝলাম ভারত সরকার প্রধানমন্ত্রীকে অনেক সম্মান দিয়েছেন। প্রশ্ন হলো- ব্যক্তিকে নাকি রাষ্ট্রকে সম্মান দিয়েছেন? তবে ভারত যদি তিস্তা চুক্তি করতো তাহলে বাংলাদেশের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হতো। ছোট দেশের প্রধানমন্ত্রীকে সম্মান দিয়ে যদি হাতে চুড়ি পরিয়ে দেয়, তখন এই চুড়ির অবস্থাটা কী হবে? সে জন্যই বলছি ভারত বাংলাদেশের বন্ধুত্ব চায় না। চুক্তি এবং কথাবার্তায় মনে হয় শেখ হাসিনাকে দাসির ভূমিকায় রাখতে চায়। শেখ হাসিনাও শুধুমাত্র ক্ষমতায় থাকার জন্য ভারতের সেবায় নিজের জীবন ও দেশের সার্বভৌমত্ব বিসর্জন দিতে চায় ।
বাংলাদেশের সব ক্ষেত্রে ভারতের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গয়েশ্বর বলেন, শোনা কথা, বাংলাদেশের ব্যবসা- বাণিজ্যতেও ভারতের ব্যক্তিরা তদবির করেন। এছাড়া ভারতের সংবাদপত্রে এসেছে, ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির ছেলে অভিজিৎ মুখার্জিও এসব বিষয়ে তদবির করেন।
ক্ষমতায় থাকার জন্য ভারতের সেবা করে তুষ্ট করতে শেখ হাসিনা নিজের জীবন বিপন্ন করার পাশাপাশি দেশ বিক্রি করে দিতে পারেন মন্তব্য করে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, বলা হচ্ছে দুই দেশের সম্পর্ক সবচেয়ে বড় উচ্চতায় রয়েছে। তাহলে বন্ধুত্ব উচ্চতায় থাকলে কেন এত চুক্তি করতে হবে?
জঙ্গিবিরোধী সাম্প্রতিক অভিযানকে নাটক আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, চুক্তির আগে দেশের মানুষ মনে করে ছিলো আশকোনা থেকে সিলেট হয়ে মৌলভীবাজার এসে কুমিল্লায় থামলো জঙ্গি বিরোধী অভিযান, এটা খুলনা হয়ে রাজশাহী যাওয়ার কথা ছিলো। মানুষ নাটক বুঝে ফেললো, তাই এর আগেই থেমে গেলো। আমার মনে হয় কালকে (সোমবার) প্রধানমন্ত্রী আসার পর আর নাটকের প্রয়োজন হবে না। কিন্তু একটি চুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য কিছু নিষ্পাপ শিশুর জীবন দান করতে হয়েছে।
সীমান্ত চুক্তির পরও বিএসএফ বাংলাদেশীদের গুলী করে হত্যা করছে এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, বিএসএফ মানুষকে হত্যা করলেও বাংলাদেশ তাদের বিরুদ্ধে বন্দুকও ব্যবহার করবে না। তাহলে আমরা কাদের জন্য অস্ত্র ব্যবহার করবো। আর চীন কি আমাদের আক্রমণ করবে? তাহলে তো তাদের ভারত ডিঙিয়ে আসতে হবে। কারণ আমাদের চারদিকে ভারত, আর ভারতের সঙ্গে আমাদের যুদ্ধ লাগবে না, তারা আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র। চীনের সঙ্গেও যুদ্ধ হবে না। সুতরাং অন্যদেশের সঙ্গে যখন ভারতের যুদ্ধ লাগবে তখন বাংলাদেশকে তাদের রাষ্ট্রের অংশ হিসাবে ব্যবহার করবে।
তিনি বলেন, দক্ষিণ বঙ্গপোসাগর রক্ষার জন্য চীনের কাছ থেকে সাবমেরিন কিনে আমরা কোন অপরাধ করি নাই। আর এ জন্য অন্যদেশকে কেন জবাব দিতে হবে। আর এর জবাব দেয়ার জন্যই প্রধানমন্ত্রী ভারত গিয়েছেন।
গয়েশ্বর বলেন, মরতে হলে মরবো কিন্তু নীরবে মরে যাবো তা হতে পারে না। যদি কেউ আমাদের দাস-দাসীর মতো রাখতে চায় তাহলে আমরা লড়াই করবো। এটা ভারতের বিরুদ্ধে নয়, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি অধ্যক্ষ বাহাউদ্দিন বাহারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হারুন অর রশীদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

http://www.dailysangram.com/post/279230-