১০ এপ্রিল ২০১৭, সোমবার, ৯:১৭

৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বাড়ানোর দাবি হাবের

হজযাত্রী নিবন্ধন নিয়ে অচলাবস্থা চলছেই

সরকার হজযাত্রী নিবন্ধনে আজ সোমবার পর্যন্ত দ্বিতীয় দফা সময়সীমা বেঁধে দিলেও তাতে সাড়া মেলেনি বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলোর সংগঠন হাবের। ধর্ম মন্ত্রণালয় ও আইটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুরাহা না হওয়ায় তারা নিবন্ধন কার্যক্রমে অংশ নেয়নি বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা। ফলে হজযাত্রী নিবন্ধন নিয়ে সৃষ্ট অচলাবস্থা অব্যাহত রয়েছে। তবে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের আইটি প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে গতকাল পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি মিলে সাড়ে ৫৪ হাজার হজযাত্রী নিবন্ধনের তথ্য পূরণ করেছেন। এ দিকে হাব নেতারা আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত নিবন্ধনের সময়সীমা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।
গত ২৮ মার্চ থেকে প্রাক-নিবন্ধিত হজযাত্রীদের চূড়ান্ত নিবন্ধন শুরুর ঘোষণা দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়। ৩০ মার্চ পর্যন্ত নিবন্ধনের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। এ তিন দিনের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি উভয় ব্যবস্থাপনায় হজে গমনেচ্ছুকদের নিবন্ধন করার জন্য বলা হয়। এ জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় নিযুক্ত আইটি প্রতিষ্ঠান বিজনেস অটোমেশন লিমিটেড তাদের সার্ভার চালু রাখে। নিবন্ধনের নিয়ম অনুযায়ী পাসপোর্ট স্ক্যান করে নিবন্ধন তথ্য পূরণ এবং ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ার নির্দেশ দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়। কিন্তু এতে সাড়া দেয়নি বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো সংগঠন হাব। ধর্ম মন্ত্রণালয় ও আইটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তারা নিবন্ধন কার্যক্রমে অংশ নেবেন না বলে জানান। এ কারণে ধর্ম মন্ত্রণালয় অনেকটা বাধ্য হয়ে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। আজ সোমবার এ সময়সীমা শেষ হচ্ছে। কিন্তু এ পর্যন্ত নিবন্ধন কার্যক্রমে অংশ নেয়নি হাব সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলো।
হাবের মহাসচিব শেখ আবদুল্লাহ গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সাথে আমাদের কয়েকদিন আগে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সৌদি আরব থেকে অতিথিরা আসায় বৈঠক করা সম্ভব হয়নি। দুই-একদিনের মধ্যে আমরা বৈঠকে বসতে সক্ষম হবো। তখন অনিয়মের বিষয়ে একটা সমাধান করা গেলে আমরা নিবন্ধন কার্যক্রমে অংশ নেবো।
এ দিকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের আইটি প্রতিষ্ঠান বিজনেস অটোমেশন লিমিটেড জানিয়েছে, গতকাল বিকেল ৫টা পর্যন্ত বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় রেজিস্ট্রেশনের জন্য ৫৪০টি হজ এজেন্সি মনোনীত হয়েছে, এদের মধ্যে ৪৮৭টি হজ এজেন্সি ৫১ হাজার ৩৩৭ জন হজযাত্রীর নিবন্ধনের তথ্য পূরণ করেছেন। এ ছাড়া সরকারি ব্যবস্থাপনায় তিন হাজার ৩১৬ জন হজযাত্রীর নিবন্ধনের তথ্য পূরণ হয়েছে বলে তারা জানায়।
এ ব্যাপারে হাবের মহাসচিব শেখ আবদুল্লাহ বলেন, শুধু নিবন্ধনের তথ্য পূরণ করলেই নিবন্ধন সম্পন্ন হয় না। এ জন্য আরো কার্যক্রম রয়েছে। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত মাত্র তিনটি এজেন্সি ছাড়া আর কেউ নিবন্ধন কার্যক্রমে অংশ নেয়নি। যে তিনটি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে তাদের শোকজ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের জবাব দেয়ার জন্য সাত দিন সময় দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সঠিক জবাব না দিলে তাদের হাবের সদস্যপদ বাতিল করা হবে।
এ সময় তিনি চলতি বছরের হজ গমনেচ্ছুদের নিবন্ধনের জন্য আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সময়সীমা বাড়ানোর দাবি জানান। হাব মহাসচিব জানান, বেশির ভাগ এজেন্সির কাছে যাত্রীরা পাসপোর্ট ও টাকা জমা দেয়নি। তাই ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় না দিলে নিবন্ধন সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না।
এ ব্যাপারে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব (হজ) আবুল হাসান নয়া দিগন্তকে বলেন, সময় আর বাড়ানো হবে কিনা তা আজ নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পর জানা যাবে।
হাজীদের টাকার অনিয়ম তদন্তের দাবি হাবের সাবেক সভাপতির : হাজীদের টাকার বিষয়ে অনিয়ম তদন্ত করার দাবি জানিয়েছে হাবের সাবেক সভাপতি ও হাব সমন্বয় পরিষদের প্রধান জামাল উদ্দিন আহমেদ। ২০১৫ সালের হজ কার্যক্রমে অতিরিক্ত কোটার পাঁচ হাজার হাজীর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠে। এসব অভিযোগ তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তিনিও যদি দোষী সাব্যস্ত হন তাহলে যেকোনো শাস্তি মেনে নিতে রাজি আছেন বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। হাব সমন্বয় পরিষদের কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেন।
আগামী ২০ এপ্রিল হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে হাব সমন্বয় পরিষদের প্যানেলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন হাবের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সভাপতি আলহাজ জামাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালনকালে হজ ব্যবস্থাপনাকে একটি সুষ্ঠু অবস্থায় নিয়ে এসেছিলাম।
এজেন্সিদের একাউন্টে হাজীদের সব টাকা জমা করার একটি পদ্ধতি চালু করেছিলাম। কিন্তু ২০১৫ সাল থেকে কমিটি থেকে হজ ব্যবস্থাপনায় একটি দুষ্ট চক্র কুক্ষিগত করে রেখেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য তিনি এবারের নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন।
তার বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের কোটার অতিরিক্ত পাঁচ হাজার হজযাত্রীর ব্যবস্থাপনায় আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি এসব হাজীদের থাকার ব্যবস্থার জন্য বাড়ির সন্ধান দিয়েছিলাম। কিন্তু টাকা তো আমার হাত দিয়ে খরচ হয়নি। টাকা দিয়েছে মক্কার হজ কাউন্সিলর। আর এজেন্সিগুলো আড়াই লাখ টাকা করে হাবের একাউন্টে জমা দিয়েছিল। প্রত্যেক হাজীর জন্য এক লাখ ৮০ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছিল। কিন্তু অবশিষ্ট হাজী প্রতি ৭০ হাজার টাকা কোথায় গেল? এসব টাকা এজেন্সিদের কেন ফেরত দেয়া হয়নি?
তিনি বলেন, এ ঘটনাটির বিষয়ে দুদকসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থাগুলোর কাছেও তথ্য আছে। কেন এ ঘটনার তদন্ত হয়নি। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি। হাজীর টাকা নিয়ে যারা অনিয়ম করছে তাদের বিচার হওয়া উচিত। এ ঘটনায় যদি আমিও দোষী সাব্যস্ত হই যেকোনো শাস্তির জন্য প্রস্তুত আছি। হজ ব্যবস্থাপনায় একটি দুষ্ট চক্র রয়েছে। এ দুষ্ট চক্র দূর করার জন্য তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
এ ব্যাপারে হাবের মহাসচিব শেখ আবদুল্লাহ বলেন, হজ এজেন্সিগুলোর বাকি ৭০ হাজার টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যমে অনেক আগেই পরিশোধ করা হয়েছে। তাই এ নিয়ে বিতর্ক হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/211025