হাজারীবাগে ট্যানারির বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির লাইন বিচ্ছিন্ন করার পর সব কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। রোববার তোলা একটি কারখানার ছবি -যুগান্তর
১০ এপ্রিল ২০১৭, সোমবার, ৯:১১

কর্মহীন হাজারও শ্রমিক ট্যানারির গেটে তালা

শিগগিরই সাভারে গ্যাস বিদ্যুৎ সংযোগ মিলছে না * আজ সমাবেশ থেকে কর্মসূচি ঘোষণা

একদিনেই বদলে গেছে রাজধানীর হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্পাঞ্চলের চিরচেনা পরিবেশ। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে না যাওয়া এসব কারখানায় গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্নে থেমে গেছে এখানকার কর্মতৎপরতা। বন্ধ আছে সব ধরনের উৎপাদন। বেশিরভাগ ট্যানারির গেটে ঝুলছে তালা। ফলে হাজার হাজার শ্রমিককে এখন অলস সময় কাটাতে হচ্ছে। তাদের চোখে-মুখে শুধুই উদ্বেগ-অনিশ্চয়তার ছাপ। এদিকে সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে শিগগির গ্যাস সংযোগ না পেলে মালিকরা ট্যানারিও চালু করতে পারবেন না। ফলে এ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা শ্রমিকদের পাশাপাশি মালিকদের ওপরও ভর করেছে।


এমন পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে রোববার সন্ধ্যায় জরুরি বৈঠকে বসেন ট্যানারি সংশ্লিষ্ট ১৩ সংগঠনের নেতারা। আজ তারা হাজারীবাগের ট্যানারি মোড়ে পূর্র্বঘোষিত সমাবেশ করবেন। সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হওয়া ওই সমাবেশ থেকেই তারা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে জানা গেছে। হাজারীবাগের চামড়া কারখানাগুলোতে অভিযান চালিয়ে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে পরিবেশ অধিদফতর। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে না যাওয়া এসব কারখানায় শনিবার থেকে রোববার বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা শেষ হয় বলে পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সমরকৃষ্ণ দাস জানিয়েছেন।

জানা গেছে, রোববারের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, আদালত নির্দেশিত সময় পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করবেন। এ সময়ের মধ্যে হাজারীবাগের ট্যানারিতে সব ধরনের সংযোগ না মিললে তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ করে দেবেন। এতে ট্যানারি বন্ধ হয়ে গেলে শ্রমিক অসন্তোষের দায়-দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। এ দায় ট্যানারি মালিকরা নেবেন না। আদালত ১৫ দিনের মধ্যে স্থানান্তরিত সব কারখানায় সংযোগ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে শ্রমিকরা জানিয়েছেন, ট্যানারি বন্ধ হলে অস্তিত্বের স্বার্থে তারা মালিকদের বিরুদ্ধেই আন্দোলনে নামবেন। এদিকে সাভারে স্থানান্তরিত হয়েছে এমন ট্যানারির সংখ্যা ৫০টির মতো। সেখানে বিসিক চামড়া শিল্পনগরীতে এসব ট্যানারি ওয়েট ব্ল– প্রসেসিং কাজ শুরু করলেও তাদের ক্রাস্ট ও ফিনিশড পণ্যের উৎপাদন হতো হাজারীবাগে। কিন্তু রোববার গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এখন হাজারীবাগের ট্যানারিও অচল হয়ে পড়েছে। ফলে এসব ট্যানারিতে রফতানিমুখী ফিনিশড পণ্যের উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এখানে কর্মরত শ্রমিকরা জানিয়েছেন, এসব ট্যানারির ফিনিশড পণ্যের উৎপাদন করা শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজারের বেশি। সেবা সংযোগ বিচ্ছিন্নের কারণে শতভাগ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। ওয়েট ব্ল– ও ক্রাস্ট মিলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৬০ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করতেন হাজারীবাগে।

সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন, সাভারে শিগগিরই গ্যাস সংযোগ পাচ্ছেন না মালিকরা। বিসিকের দায়িত্বহীনতা এবং প্লট মালিকদের গড়িমসি ও অবহেলার কারণেই সাভার শিল্পাঞ্চলে দ্রুত গ্যাস সংযোগ পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে সাভার তিতাস গ্যাস অ্যান্ড ট্রান্সমিশনের ম্যানেজার সিদ্দিকুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, সংযোগ দেয়া-নেয়ার জন্য সবার আন্তরিকতা থাকতে হবে। সরকারের আন্তরিক ইচ্ছা রয়েছে। মালিকরা তা পেতে সব ধরনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলে রকেট গতিতে সংযোগ মিলবে। নতুবা শিগগির গ্যাস সংযোগ নিতে পারবেন না মালিকরা। কারণ এর জন্য বেশ সময়ের দরকার। তিনি বলেন, মাত্র তিনটি সংযোগের অনাপত্তির জন্য তিতাস গ্যাসের ফাইনান্স বিভাগে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। ক্লিয়ারেন্স পেলে সপ্তাহ খানেকের মধ্যে তিনটি সংযোগ দেয়া হবে। আর বাকি সংযোগগুলোর জন্য পেপার ওয়ার্ক ও অন্যান্য কাজেই লেগে যাবে বহু দিন। তিনি বলেন, সংযোগ নিতে হলে যেখানে আগে সংযোগ ছিল সেটাকে কিল করে একটি ফাইন্যান্স ক্লিয়ারেন্স এবং কারিগরি ক্লিয়ারেন্স স্থানীয় অফিসে লাগবে। তিনি বলেন, এক একটি ডিপার্টমেন্টের একেকটি কাজ। কারণ ডিমান্ড নোটের টাকা জমা দেয়ার পর কোম্পানিকে ঠিকাদার নিয়োগ করতে হবে। বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের ক্লিয়ারেন্স লাগবে। সব মিলিয়ে দীর্ঘ সূত্রতার জটের সুরাহা দ্রুত সময়ে করা কঠিন।

জানা গেছে, কারখানার মূল জ্বালানি হিসেবে গ্যাস অত্যাবশ্যক হলেও একটি সংযোগও এখন পর্যন্ত নিতে পারেননি শিল্প মালিকরা। কারণ গত তিন মাসে ৫২টি প্রতিষ্ঠান চালু হলেও কোনো মালিকই গ্যাস সংযোগ নেয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেননি। বারবার তাগাদা দেয়া হলেও শিল্প মালিকরা বরাবরের মতো গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে টালবাহানা করেছেন। সব দায় বিসিকের ওপর চাপিয়ে কালক্ষেপণ করেছেন। এদিকে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শাহিন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা খুব দ্রুত গ্যাস সংযোগ চাই। হাজারীবাগে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় মালিকদের সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানই বন্ধ হয়ে গেছে।’ তিনি দাবি করেন, ১২০টি শিল্প মালিক গ্যাস সংযোগ চেয়ে বছর খানেক আগে আবেদন করলেও গ্যাস অফিস থেকে আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত কোনো চিঠি দেয়নি এবং কোনো কাগজপত্রও চায়নি। তবে তিতাস কর্মকর্তারা বলেন, বৈধ কাগজপত্র পেয়ে ইতিমধ্যে ১০টি ডিমান্ড নোট ইস্যু করা হলেও ব্যবসায়ীরা কেউ ডিমান্ড নোটের টাকা জমা দেননি। ফলে ঠিকাদার নিয়োগসহ সংযোগ দেয়ার সব প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে।

http://www.jugantor.com/last-page/2017/04/10/116470/