১০ এপ্রিল ২০১৭, সোমবার, ৯:০৮

সিলেটে বেপরোয়া ছাত্রলীগ সমালোচনা পিছু ছাড়ছে না

সেতুমন্ত্রী বলেছিলেন ‘কাউয়া ঢুকছে’

সিলেটে একের পর এক নানা অপকর্মে বিতর্কিত হয়ে পড়েছে ছাত্রলীগ। ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সংগঠনের ক্যাডাররা। ঘুরে ফিরে বিতর্কিত ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছে তারা। দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ও আইনি ব্যবস্থা না নেয়ায় তারা অনেকটা নিয়ন্ত্রণহীন। এতে সমালোচনা পিছু ছাড়ছে না তাদের। এমতাবস্থায় সিলেটে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় সমাবেশে করা সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্য ফিরছে সমালোচকদের মুখে মুখে। ২২ মার্চ সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের সমাবেশে তিনি মন্তব্য করেছিলেন ‘দলে কাউয়া ঢুকছে, এদের বের করতে হবে।’


দীর্ঘ অতীত না ঘেঁটে শুধু গত ক’দিনে সিলেটে ছাত্রলীগের সংঘটিত নানা ঘটনা তুলে ধরলেই বোঝা যায় ক্যাডারদের ঔদ্ধত্য এখন কোন পর্যায়ে। বৃহস্পতিবার সেনাবাহিনীর মেজর আজিজুর রহমানকে ছুরিকাঘাত ও তার গাড়ি ভাংচুর করে সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের কয়েক ক্যাডার। বৃহস্পতিবারের এ ঘটনায় সাত ছাত্রলীগ ক্যাডারকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা হয়। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার ছাত্রলীগের চার ক্যাডারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হল : আসাদুজ্জামান খান জুয়েল, হাবিবুর রহমান পাবেল, সাইদুল ইসলাম ও মাকসুদ আহমেদ। তারা মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলিম তুষার গ্রুপের অনুসারী। মামলার অপর আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ তৎপর রয়েছে বলে দাবি করেছেন সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি সোহেল আহমদ।

একই দিনে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি শাহীন আলীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। দক্ষিণ সুরমা কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্রে জোর করে প্রবেশের চেষ্টা ও নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগে তাকে ২০ দিনের কারাদণ্ড দেয়া হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহেদ মোস্তফা এ আদেশ দেন। শনিবার শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের সহসভাপতি সরদার আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক নবিউল আলম দিপুর ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের কয়েক ক্যাডার। আহত দুই সাংবাদিক বর্তমানে এমএজি ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কয়েকজন ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় তাদের ওপর এ হামলা করে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। হামলাকারীরা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থর অনুসারী। রোববার হামলার প্রতিবাদে শাবি ক্যাম্পাসে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হলে সেখানেও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা। তাদের এমন অরাজকতায় শাবির শিক্ষার পরিবেশ এখন অনেকটা সংকটাপন্ন।

৬ এপ্রিল মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলিম তুষারকে ছুরিকাঘাতের জের ধরে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও ছাতক উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরীর বাসায় হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে। এ সময় দুটি জিপ, তিনটি মোটরসাইকেল ও বাসার জানালার কাচ ভাংচুর করে তারা। ৩১ মার্চ রাতে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের রাস্তায় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ছাত্রদল কর্মী ডন হাসানকে খুন করে। এ ঘটনায় নিহতের মা জাহেরা বেগম বাদী হয়ে ১৬ জনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলায় গ্রেফতার করা হয় ছাত্রলীগ ক্যাডার শাফি, রাব্বী, সাজু ও সাথী নামে চার ছাত্রলীগ ক্যাডারকে। এ ছাড়া নিকট অতীতে কলেজছাত্রী খাদিজার ওপর শাবির ছাত্রলীগ ক্যাডার বদরুলের বর্বর হামলা, শিক্ষক লাঞ্ছনা, যৌন হয়রানি, টেন্ডারবাজি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, জায়গা দখল, বাসা দখল, সাংবাদিক লাঞ্ছনাসহ বিভিন্ন অপকর্মে সম্পৃক্ততা ছাত্রলীগকে চরম বিতর্কিত করে তুলেছে।

অবস্থা যখন এমন তখন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম ভর্ৎসনা করে তার ফেসবুকে লিখেছেন, মোটরসাইকেলের মহড়া, চশমার ফাপড়বাজি কিংবা ফেসবুকে আগুন জ্বালানো বক্তব্যে সিলেটকে শক্তিশালী ইউনিট মনে হলেও রাজপথে জবাব দেয়ার ক্ষমতা সিলেটের নেই। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফেসবুকের পোস্টে এভাবে সমালোচনা করেন সিলেট ছাত্রলীগের। ওই পোস্টটিতে তিনি আরও বলেন, মোটরসাইকেলের মহড়া দেখে মনে হয় সিলেটে লাখ লাখ সমর্থক। চশমার ফাপড়বাজি দেখে একেক জনকে অনেক বড় হ্যাডম বলে মনে হয়। সিলেটের রাজনীতি ব্যক্তি লীগ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের চর্চা খুব কম হয়।

 

http://www.jugantor.com/news/2017/04/10/116482/