বন্ধ হয়ে গেছে ট্যানারি। তাই ট্রাকে করে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে ট্যানারির যন্ত্রপাতি।
১০ এপ্রিল ২০১৭, সোমবার, ৯:০৭

সাভারে ট্যানারির গ্যাস–সংযোগ নিয়ে জটিলতা

রাজধানীর হাজারীবাগের ট্যানারিগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সাভারে চামড়াশিল্প নগরে গ্যাস-সংযোগ নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। ট্যানারির মালিকেরা বলছেন, সরকার চামড়াশিল্প নগরে শুধু ৫৪টি ট্যানারিকে গ্যাস-সংযোগ দিতে চাইছে, যাদের হাজারীবাগে সংযোগ ছিল। মালিকেরা আরও অভিযোগ করেন, সরকার স্থানান্তরের ক্ষেত্রে ট্যানারির গ্যাসের বরাদ্দ বাড়াতেও রাজি নয়।

ট্যানারি বর্জ্যে এমনই বিপর্যস্ত হাজারীবাগের খাল।

হাজারীবাগে অনেক ট্যানারি শুধু চামড়া প্রক্রিয়াকরণের প্রথম ধাপ ওয়েট ব্লু করত। এতে তাদের গ্যাস প্রয়োজন হতো না। কিন্তু সাভারে তারা প্রস্তুত চামড়া উৎপাদনে বিনিয়োগ করছে, যা গ্যাস ছাড়া সম্ভব নয়। বড় ট্যানারিগুলো বলছে, তাদের হাজারীবাগের চেয়ে বেশি লোড বা চাপের গ্যাস দরকার। কিন্তু সরকার এখন তা দিতে রাজি হচ্ছে না।
তবে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ট্যানারিগুলোকে গ্যাস-সংযোগ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। জানতে চাইলে গতকাল রোববার বিকেলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো সমস্যা নেই। গ্যাস-সংযোগ দেওয়া হবে। আমরা বসে আছি, তাঁদের তো বিজ্ঞাপন দিয়েও আনা যায় না।’ নতুন সংযোগ ও চাপ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা আছে কি না, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘কোনো সমস্যা নেই। তারা আবেদন করুক। আবেদনই তো করে না। টাকাই জমা দেয় না। তাদের আবেদন করতে হবে, আবেদনের সঙ্গে ফি জমা দিতে হবে।’

গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার পর চামড়া খাতসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো আজ হাজারীবাগে মহাসমাবেশ করবে। এর পক্ষে শ্রমিকদের সভা।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ গতকাল ১৫ দিনের মধ্যে আবেদনকারী ট্যানারিগুলোকে সাভারে আবেদনকারীদের গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি-সংযোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন। এর আগে আদালতের নির্দেশে গত শনিবার হাজারীবাগের ট্যানারিগুলোর গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে পরিবেশ অধিদপ্তর।
হাজারীবাগের মোট ২০৫টি ট্যানারির ১৫৫টি সাভারে জমি পেয়েছে। এর মধ্যে নবীপুর ও কমলা নামের ২টি ট্যানারির বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। জমিলা নামের একটি ট্যানারি দেউলিয়া ঘোষিত হয়েছে। জুবলি নামের একটি ট্যানারির মালিকপক্ষের পারিবারিক জটিলতায় শেষ পর্যন্ত জমি বরাদ্দ পায়নি। ফলে হাজারীবাগ থেকে মূলত ১৫১টি ট্যানারি সাভারে নিতে কাজ করছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। এসব ট্যানারির ৫৪টি হাজারীবাগে গ্যাস-সংযোগ ছিল, তারা ওয়েট ব্লুর পাশাপাশি ক্রাস্ট ও ফিনিশড চামড়া উৎপাদন করত।
চামড়াশিল্প নগর প্রকল্প কার্যালয়ের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাভারে নতুন গ্যাস-সংযোগের জন্য আবেদন করেছে ৯২টি ট্যানারি। হাজারীবাগ থেকে গ্যাস-সংযোগ সাভারে স্থানান্তরের আবেদন করেছে ৫৪টি ট্যানারি। এ ছাড়া চাপ বা লোড বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেছে ১৬টি ট্যানারি।

মহাসমাবেশের পক্ষে মাইকিং ছবিগুলো গতকাল তোলা l প্রথম আলো

এদিকে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি গত বৃহস্পতিবার একটি দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে জানায়, স্থানান্তরের আবেদন করা ৫৪টি ট্যানারির মধ্যে ৩৮টি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করেছে। বাকি ১৬টি করেনি। কাগজপত্র দাখিল করা ৩৮টি ট্যানারির মধ্যে ২০টির বিপরীতে ডিমান্ড নোট ইস্যু করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১টি টাকা জমা দেওয়ায় তাদের সংযোগ কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। ৯টি টাকা জমা দেয়নি। তাদের তাগাদা দেওয়া হয়েছে। তবে তিতাসের বিজ্ঞাপনে নতুন গ্যাস-সংযোগের বিষয়ে বা লোড বৃদ্ধির বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
উচ্চ আদালত হাজারীবাগের ট্যানারিগুলো বন্ধের আদেশ দেওয়ার পর ট্যানারির মালিকেরা সাভারে দ্রুত গ্যাস-সংযোগ পেতে তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহিন আহমেদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ওই বৈঠকে পেট্রোবাংলা ট্যানারির মালিকদের হাজারীবাগে সংযোগের বিপরীতে সাভারে সংযোগ ও একই পরিমাণ লোড বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিল।
শাহিন আহমেদ বলেন, ‘পেট্রোবাংলা বলেছিল নতুন সংযোগের বিষয়ে তাদের কোনো সিদ্ধান্ত নেই। এটি গ্যাস-সংযোগ পর্যালোচনার জন্য গঠিত জাতীয় কমিটির বিষয়। এর আগে আমরা জ্বালানিসচিবের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছি। তখনো আমাদের পরিষ্কার করে কিছু বলা হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, নতুন সংযোগ না পেলে ট্যানারিগুলো শুধু ওয়েট ব্লু করে সাভারে টিকতে পারবে না। পাশাপাশি বড় ট্যানারির জন্য গ্যাসের চাপ বৃদ্ধি না করলে বেশি ক্ষমতার বয়লার চালানো যাবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা জ্বালানিসচিবের সঙ্গে, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের সঙ্গে, তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তাঁরা আমাদের বলেছেন নতুন গ্যাস-সংযোগ নীতিনির্ধারকদের বিষয়।’
এক বছর আগে আবেদন করেও গ্যাস পাননি জাকির হোসেন ট্যানারির মালিক মো. সেকান্দার হোসেন। এ নিয়ে ৫ এপ্রিল হাইকোর্টে একটি রিট করেন। হাইকোর্ট সংযোগ দিতে নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি আবেদন করার পর এখন পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি। নথিপত্রের ঘাটতি থাকলে তাও চাওয়া হয়নি।’
তবে সাভার চামড়াশিল্প নগরে বিদ্যুৎ ও পানি-সংযোগ নিয়ে বিশেষ কোনো সমস্যা নেই। ইতিমধ্যে ১৩৯টি ট্যানারি স্থায়ী বিদ্যুতের জন্য আবেদন করেছে, সবাইকে ডিমান্ড নোট দেওয়া হয়েছে। ৪৮টি ট্যানারি স্থায়ী বিদ্যুৎ-সংযোগ পেয়েছে। তবে ৫৩টি ট্যানারি ২ এপ্রিল পর্যন্ত টাকা জমা দেয়নি। পানির জন্য আবেদন করেছে ৪৫টি ট্যানারি। ৪২টিতে মিটার বসানো হয়েছে।

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1140661/