১৪ জানুয়ারি ২০২২, শুক্রবার, ১২:৪৯

সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি

পোশাক খাতের বাইরে কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ব্যাপক বেড়েছে

সাম্প্রতিক সময়ে পোশাক খাতের বাইরে অন্য কারখানায় অগ্নিদুর্ঘটনা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। গেল ছয় মাসে বাইরের কারখানাগুলোতে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৮২টি। এসব দুর্ঘটনায় মোট ১৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ২৫৬ জন। তবে কারখানা মালিকদের এই সব দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য যে ধরনের বিনিয়োগ করার দরকার তা তারা করছেন না।

গতকাল ‘কর্মক্ষেত্রে অগ্নিদুর্ঘটনা ও শ্রমিক নিরাপত্তা : নিরসনের উদ্যোগ কোথায়’ শীর্ষক এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য তুলে ধরেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ’ (সিপিডি)। সংবাদ সম্মেলনে এ-সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

মূল প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কাঠামোগত, অগ্নিকাণ্ড ও বৈদ্যুতিক সমস্যার ক্ষেত্রে নিরাপত্তাব্যবস্থার ঘাটতির কারণে দেশে তৈরী পোশাক শিল্পবহির্ভূত কারখানাগুলোতে অগ্নিদুর্ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। প্রতি দুই দিনে একটি করে দুর্ঘটনা ঘটছে। গত ছয় মাসে ৮২টি কারখানায় দুর্ঘটনা ঘটেছে, এর মধ্যে ৫২টি-ই হচ্ছে অগ্নিকাণ্ড। এসব দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ১৬৭ জনের এবং আহত হয়েছেন ২৫৬ জন। এর মধ্যে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় হতাহতের সংখ্যাই বেশি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা ও পাশের এলাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামÑ প্রধান এ চারটি শিল্প এলাকাতেই দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। গত ছয় মাসে ঢাকা ও পাশের এলাকায় ২৯টি, নারায়ণগঞ্জে ১০টি, গাজীপুরে আটটি ও চট্টগ্রামে আটটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আবাসিক ভবন, হাসপাতাল, মার্কেট, বাণিজ্যিক ভবন ও কারখানা এসব দুর্ঘটনার প্রধান স্থল। বর্তমানে শপিংমল ও মার্কেটগুলোতে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকির হার ৪২.৩ শতাংশ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ২২ শতাংশ ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো ১৯.২ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, তৈরী পোশাক কারখানা এবং তৈরী পোশাকবহির্ভূত কারখানার অগ্নিদুর্ঘটনার কারণের মধ্যে তেমন বিশেষ পার্থক্য নেই। অধিকাংশ অগ্নিকাণ্ডের কারণ হচ্ছে গ্যাস লিকেজ, কারিগরি ত্রুটি, বয়লার বিস্ফোরণ, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট ইত্যাদি। তবে তৈরী পোশাক শিল্প রফতানিমুখী হওয়ায় এ খাতের কারখানাগুলো গ্লোবাল ভ্যালু চেইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, এ কারণে এখানে নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এর বিপরীতে তৈরি পোশাকবহির্ভূত অধিকাংশ কারখানা অভ্যন্তরীণ সরবরাহ চেইন দ্বারা পরিচালিত, যে কারণে এসব কারখানায় কর্মপরিবেশ নিরাপত্তা ও শ্রমিক অধিকারের বিষয়টি যথাযথ মানা হয় না।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে পোশাক খাতের বাইরে অন্য খাতগুলোর কারখানায় অগ্নিদুর্ঘটনা ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় শিল্প নিরাপত্তার বিষয়টি আবার জোরালোভাবে ওঠে এসেছে। কারখানাগুলোতে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হচ্ছেÑ দুর্ঘটনা রোধে বা নিরাপত্তা খাতে বিনিয়োগে কারখানার মালিক ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের আগ্রহ কম। এ ছাড়া যথাযথ মনিটরিংয়ের অভাব, সংস্থা ভেদে নিরাপত্তার ভিন্ন ভিন্ন মানদণ্ড ও সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগে দুর্বলতা রয়েছে। শিল্প খাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গত বছরের অক্টোবরে ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ (বিডা) বড় ধরনের উদ্যোগ নিয়েছিল; কিন্তু সে উদ্যোগের যথাযথ বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

‘সার্বিকভাবে শিল্প নিরাপত্তায় আইনের প্রয়োগ উন্নয়নশীল দেশের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ’ এমন মন্তব্য করে সিপিডি বলেছে, এ ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা চারটি। এগুলো হচ্ছেÑ নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিনিয়োগে উদ্যোক্তাদের সদিচ্ছার অভাব; সরকারি তদারকি সংস্থাগুলোর সুশাসন কাঠামোর দুর্বলতা; সরকারি সংস্থাগুলোর মনিটরিং ও আইন প্রয়োগে সীমিত সক্ষমতা এবং শিল্প খাতে কর্মনিরাপত্তার বিষয়ে ক্রেতা ও ভোক্তাদের চাপ না থাকা।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/636395