১২ জানুয়ারি ২০২২, বুধবার, ৩:১৪

নদীর সুফল মিলছে না

শুষ্ক মৌসুমে বাঁধ সংস্কারে ধীর গতি ধীর গতির কারণে প্রকল্প পরিচালককে কারণ দর্শানোর নোটিশ ভেঙে যাওয়া বাঁধ সংস্কারে দ্রুত প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও কাজ মন্থর পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৪০ শতাং

নদী খনন এবং বন্যা-দুর্যোগে ভেঙে যাওয়া বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের অসংখ্য প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও সেগুলোর কাজের গতি নেই। প্রকল্প গ্রহণ করে বছরের পর বছর ফেলে রাখায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে কোটি কোটি মানুষকে। বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর ভেঙে যাওয়া বাঁধ দ্রুত মেরামতের গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্তদের অব্যবস্থাপনা ও ‘ধীরে চলো নীতি’র কারণে নদীর বন্যায় ফেলে যাওয়া পলির সুবিধা থেকে বঞ্ছিত হচ্ছে মানুষ। দেশের উত্তরাঞ্চল-দক্ষিণাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে একই চিত্র। নদী বিশেষজ্ঞদের মতে নদীর পানি এবং নদীর পলিমাটি মানুষের জন্য আশির্বাদ হলেও সেটাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না পরিকল্পনার অভাবে। যদিও প্রকল্প গ্রহণ করা হয় তার বাস্তবায়ন হয় ধীর গতিতে। ফলে নদীর যে সুবিধা তা থেকে বঞ্ছিত হচ্ছে মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পের কাজে ঢিলেমির কারণে প্রকল্প পরিচালককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি রমেশ চন্দ্র সেন ইনকিলাবকে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের যেসব প্রকল্প ২০১৬ সালে শুরু হয়ে ২০১৮ সালে শেষ হওয়ার কথা এবং ২০২০ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া এ প্রকল্প চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল তা শেষ হয়নি। উন্নয়ন প্রকল্পে কাজে ধীর গতি হওয়ায় প্রকল্প পরিচালককে কারণ দর্শানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংসদীয় কমিটি।

একটি প্রকল্পের কাজ গত ২০২০ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া এ প্রকল্প চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করতে পারেনি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। আড়াই বছর মেয়াদের প্রকল্পের দুই বছর পার হয়ে গেলেও এখনো ৪০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড। গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৬১ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৪৬ শতাংশ।

টেকসই উন্নয়নের জন্য যে অর্থনীতি প্রয়োজন সেই অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করতে নদীকে তার হারানো গৌরব ও যৌবন ফিরিয়ে দিতে হবে। নদীর প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। নদীর ব্যবহার বহুমাত্রিক। নদীর কাছেই গড়ে উঠেছে বড় বড় কলকারখানা, নদীতে এখন হাজার হাজার লঞ্চ-স্টিমার। যখন যেভাবে যার প্রয়োজন, তখন সেভাবেই নদীকে তারা ব্যবহার করছে। কিন্ত সেইভাবে নদী শাসন প্রকল্পের গুরুত্ব কমছে।

দেশে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৪০৫টি নদী রয়েছে যার ৫৭টি আন্তঃদেশীয়। প্রধান নদীগুলো বছরে প্রায় ১১০ কোটি টন পলি নিয়ে এসে জমা করে। নদীতে ভাসমান বালু এবং মাটি স্রোতের গতি কমে আসার সাথে সাথে নদীর তলদেশে পতিত হয় এবং বালু ’চর’ সৃষ্টি করে। নদীতে সৃষ্ট এই চর নদীর প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে নদী তীরের ভাঙগন ঘটায় এবং নদীপথের নাব্যতা হ্রাস করা। দেশের প্রধান নদীগুলোর ক্রমবর্ধমান ক্যাপিটাল ও রক্ষণাবেক্ষণমূলক ড্রেজিং চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে বাপাউবো’র ড্রেজিং সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং টেকসই নদী ব্যবস্থাপনা সুনিশ্চিত করা সেটি করতে পারেনি।

২০২০ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া এ প্রকল্প চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা। উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে ধীর গতি হওয়ায় প্রকল্প পরিচালকদের কারণ দর্শানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংসদীয় কমিটি। কমিটির পাউবোর্তী সভায় তাকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। ঠাকুরগাঁও জেলার টাঙন ব্যারেজ, বুড়িবাঁধ ও ভুল্লিবাঁধ সেচ প্রকল্পসমূহ পুনর্বাসন, নদীতীর সংরক্ষণ ও সম্মিলিত পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের দ্রুত টেন্ডারের কাজ সম্পন্ন করার সুপারিশ করা হয়। গত ৬ জানুয়ারি সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। হবিগঞ্জ জেলার বিবিয়ানা বিদ্যুৎকেন্দ্রের সামনে কুশিয়ারা নদীর উভয় তীরের ভাঙন রোধ প্রকল্পের কাজে ধীর গতি হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। ছোট এই দেশের মধ্য দিয়ে ছোট-বড় অসংখ্য নদী বয়ে গেছে। মানুষের জীবন-জীবিকা এবং সাহিত্য-সংস্কৃতি সবকিছুই নদীর ওপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। আমাদের দেশে নদীর কাছে যে জমি চাষ করা হয়, তাতে ব্যবহার করা হয় নদীর পানি। উৎপাদিত ফসল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শহরে নিয়ে যাওয়া হয় নদীপথে। নদী আমাদের সমাজ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং জাতীয় অর্থনীতির চালিকাশক্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম উপাদান হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। নদীর গুরুত্ব বোঝা তাই সবচেয়ে বেশি জরুরি।

প্রকৃতির অপার দান নদীকে আমরা রক্ষা করতে পারছি না। পরিবেশ একা রক্ষা করা যাচ্ছে না। সবাইকে নদী ও পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসার প্রয়োজন। নদী খননের প্রশাসনিক কার্যাদি সম্পাদন ও নদী রক্ষায় নানা সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টিমূলক কাজ দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করাও দরকার। সর্বোপরি সরকারকে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে সরকারি-বেসরকারি প্রকল্পগুলোর কাজের গতি ত্বরান্বিত করার প্রয়োজন। এজন্য সংশ্নিষ্ট দায়িত্বশীল সবার জবাবদিহিতাও নিশ্চিত করতে হবে।

কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া এ প্রকল্প চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা। কিন্ত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৬১ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৪৬ শতাংশ। অর্থাৎ আড়াই বছর মেয়াদের প্রকল্পের দুই বছর শেষ হলেও এখনো ৪০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়নি। ঠাকুরগাঁও জেলার টাঙন ব্যারেজ, বুড়িবাঁধ ও ভুল্লিবাঁধ সেচ প্রকল্পসমূহ পুনর্বাসন, নদীতীর সংরক্ষণ ও সম্মিলিত পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের দ্রুত টেন্ডারের নির্দেশ।

রংপুর জেলার গংগাচড়া ও রংপুর সদর উপজেলায় তিস্তা নদীর ডান তীর ভাঙন হতে রক্ষা প্রকল্পের কাজ। এ প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০১৬ সাল শুরু শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালে সময়কাল জিওবি এবং বিদেশি সাহায্য প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ প্রকল্পের অগ্রগতি নেই। এদিকে কালনী-কুশিয়ারা নদী ব্যবস্থাপনা প্রকল্প এলাকা সিলেটের দক্ষিণে এবং ভৈরব বাজারের পূর্বে। দক্ষিণে কুশিয়ারা-বিজনা-রটনা-সুতরাং নদী, উত্তরে পুরাতন সুরমা-ডাহুক নদী এবং জগন্নাথপুর সিলেট সড়ক, পশ্চিমে পুরাতন সুরমা বোলাই এবং পূর্বে সিলেট-কাকটাই গ্রামীণ সড়ক দ্বারা পরিবেষ্টিত। শুষ্ক মৌসুমে কালনী-কুশিয়ারা নদীতে নৌ-চলাচল ব্যবস্থার উন্নয়ন, বন্যামুক্ত নতুন নিরাপদ গ্রাম গড়ে তোলা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিরূপ প্রভাব রোধকরণ, দারিদ্র বিমোচন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিকরণ। কিন্তু এ পর্যন্ত প্রকল্পটি শেষ করতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এ দিকে চলতি বন্যায় সারাদেশে ৩৬৬টি স্থানে ২০৫ দশমিক ৯০ কিলোমিটার বাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এসব বাঁধে আশ্রয় নেয়া লাখ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলোর মেরামত ও সংস্কারে ব্যবস্থা নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড। আবার অনেক জেলার নতুন করে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। এদিকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধগুলো সংস্কার ও মেরামতের বরাদ্দ চেয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালকে চিঠি দিয়েছে বিভিন্ন জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীরা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালকের কার্যালয়ের চিঠি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে পানি উন্নয় বোর্ডের মহাপরিচালক প্রকৌশলী ফজলুর রশিদ ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের বিভিন্ন জোনে চলতি বছরে বন্যায় বাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এসব তথ্য আমাদের কাছে এসেছে। আরো কিছু এলাকায় বাঁধ ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে। আমরা এগুলো প্রথমিকভাবে মেরামতের ব্যবস্থা নিয়েছি। সংসদীয় কমিটি যে সুপারিশ করেছে সেই প্রকল্পের পরিচালকদের বিরুদ্ধে নোটিশ পাঠানোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন আঞ্চলিক ও জোনের চিঠি বলা হয়েছে, চলতি বছরে জুন মাসের শেষার্ধ থেকে দেশের প্রধান প্রধান নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। দেশের পর্বাঞ্চলের প্রধান নদী সুরমা-কুশিয়ারার পানি জুন মাসে বৃদ্ধি পেয়ে সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে মৌলভীবাজার ও সিলেট, সুনামগঞ্জ এবং হবিগঞ্জ জেলা ভাসিয়ে দেয়। এর পরে উত্তরাঞ্চলের নদ-নদী তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও ঘাঘট, ব্রক্ষপুত্র-যমুনাসহ বিভিন্ন নদীতে পানি বৃদ্ধি পায়। এ সময় বিভিন্ন এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জে বন্যা দেখা দেয়। এ বন্যার সময় এসব এলাকায় লাখ লাখ মানুষ নদী ভাঙনের শিকার হয়। এদিকে বন্যার পানি কমানোর সাথে সাথে বিভিন্ন এলাকায় তীব্র নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। অবকাঠামো রক্ষার্থে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাঠ পর্যায়ের অফিসগুলো সীমিত মাত্রায় জরুরি আপদকালীন কাজ বাস্তবায়ন করার প্রয়োজন। এদিকে শুষ্ক মৌসুমে ক্ষতিগ্রস্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও অন্যান্য অবকাঠামো মেরামত না করা হলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবকাঠামো ও জনসম্পদ রক্ষা করা দুরুহ হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

চলতি বছর যেসব জেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সে জেলাগুলো হচ্ছে- ঢাকা পাউবো বিভাগ-২, ঢাকা সাভার ও গাজীপুরে ৩টি স্থানে ১১ দশমিক ৭০ কিলোমিটার বাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল বিভাগের ফরিদপুর পাউবো বিভাগের ফরিদপুর, সদর চরভদ্রাসন, ভাঙ্গা উপজেলা, রাজবাড়ী সদর, বালিয়া কান্দি ও পাংশা উপজেলায়, কুষ্টিয়া, পাউবো বিভাগের কুষ্টিয় সদর, কুমারখালী ও খোকসা জোনে মোট ৩১টি স্থানে ৯ দশমিক ১২৫ দৈর্ঘ্য কিলোমিটার বাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। পূর্বাঞ্চল কুমিল্লা ব্রাক্ষণবাড়িয়া পানি উন্নয়ন বিভাগ এলাকার মধ্যে ব্রাক্ষণবাড়িয়া সদর, আখাউড়া, ফেনী, ফুলগাজী, পরশুরাম, সোনাগাজী, নোয়াখালী, কোম্পানীগঞ্জ এবং হাতিয়া এলাকায় ২৪টি স্থানে ৪ দশমিক ১৯৬ দৈর্ঘ্য কিলোমিটার হাইড্রলিক ও স্ট্রাকচার বাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চল সিলেট জোনের সিলেট সদর, কানাঘাট, হবিগঞ্জ সদর, চুনারুঘাট, মাধবপুর, মৌলভীবাজার সদর, রাজনগর, কুলাউড়া, কমলগঞ্জ, জুড়ী এবং বড়লেখা এলাকায় ২০টি স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে হাজার হাজার ঘর-বাড়ি নদীগর্ভে গেছে। উত্তর-পশ্চিবমাঞ্চল রাজশাহী জোনের, বগুড়া, সারিয়াকান্দি, ধনুট, সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, বেলকুচি ও শাহাজানপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলা ও শিবগঞ্জ এলাকায় ১২টি স্থানে বাঁধ ভেঙে গেছে।

উত্তরাঞ্চলের রংপুর জোনের, রংপুর, গংগাছড়া, লালমনিরহাটের সদর উপজেলা, হাতিবান্ধা, কুড়িগ্রাম জেলা সদর, উলিপুর, রাজাহাট, চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুর, ফুলবাড়ি, নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী, গাইবান্ধা জেলা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলবাড়ী, সাঘাটা, ডালিয়া পাউবো এলাকার নীলফামারী, লালমনিরহাট ডিমলা, জলঢাকা ও হাতীবান্ধা এলাকার ১১০টি স্থানে ৩০ দশমিক ৯৩ দৈর্ঘ্য কিলোমিটার বাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এখনো প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়নি।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল জোনের খুলনা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, সাতক্ষীরা সদর, দেবহাটা, আশাশুনি, শ্যামনগর, কয়রা, বাঘের হাটের সদর উপজেলা, যশোর সদর, মনিরামপুর, বেশবপুর, ডুমুরিয়া, নড়াইল জেলার সদর উপজেলা, লোহাগড়া ও কালিয়া উপজেলার মোট ৩১টি স্থানে ৮ দশমিক ৭৭ দৈর্ঘ্য কিলোমিটার বাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল জোনের বরিশাল সদর, বাবুগঞ্জ, মেহেন্দিগঞ্জ, হিজলা, গৌরনদী, মুলাদী, উজিরপুর, আগৈলঝড়া, বরগুনা জেলার সদর উপজেলা, বামনা, পাথরঘাটা, বেতাগী ও আমতলী, পটুয়াখালী জেলার সদর উপজেলা, গলাচিপা, মির্জাগঞ্জ, কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী এলাকায় ৮৫টি স্থানে আংশিক ১২ দশমিক ১৭ দৈর্ঘ্য কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে গেছে। এখনো নতুন প্রকল্প শুরু হয়নি। ঢাকা জেলার ধলেশ্বরী-পুংলী, বংশাই, তুরাগ, বুড়িগঙ্গা রিভার সিস্টেম প্রকল্পে কাজ কয়েক দশকে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা এবং বালু নদীর প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। এসব নদীর পানি শিল্প কারখানা থেকে নির্গত তরল বর্জ্য, বিষাক্ত রাসায়নিক এবং মানব বর্জ্য দ্বারা দূষিত হয়ে পড়ছে। ক্রমাগত জনসংখ্য বৃদ্ধি ও আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তনের কারণে ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জের আভ্যন্তরিণ নদী বন্দর মারাত্মকভাবে সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়ে। পূর্বে অনেক খাল, মুক্ত জলাশয় ও নালা চতুর্পার্শে¦র ডোবার সাথে সংযুুক্ত ছিল যা বর্তমানে ভূমি জবরদখল ও অন্যান্য কারণে বন্ধ অথবা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। দূষণ ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বুড়িগঙ্গা এবং ঢাকার চারপার্শ্বের অন্যান্য নদীগুলো জনস্বাস্থ্য, ইকোসিস্টেম এবং আর্থ সামাজিক অবস্থার ওপর মারাত্মক হুমকির সৃষ্টি করছে।

২০১৩ সাল পর্যন্ত পাউবো’র ড্রেজার বহরে ছোট বড় মিলিয়ে মোট ২৮টি ড্রেজার ছিল যেগুলোর সর্বমোট বার্ষিক খনন ক্ষমতা ছিল ৫০ লক্ষ ঘনমিটার। কিন্তু চাহিদামাফিক ক্যাপিটাল এবং রক্ষণাবেক্ষণমূলক ড্রেজিং সফলভাবে সম্পাদন করার জন্য এই বাৎসরিক খনন ক্ষমতা প্রায় ২০০ কোটি ঘনমিটারে উন্নীত করা প্রয়োজন। সুতারং প্রয়োজনীয় খনন ক্ষমতা এবং পাউবো’র বর্তমান সক্ষমতার মধ্যে বিশাল ব্যবধান দেখা যায়। পাউবো’র বার্ষিক খনন ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশের নদী খননের জন্য ড্রেজার ও অনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ক্রয় শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। সেটি এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি।

https://www.dailyinqilab.com/article/452435