ব্র্যাক সেন্টারে ‘সুন্দরবনের জন্য’র উদ্যোগে মতবিনিময়ে বক্তব্য রাখেন বিশেষজ্ঞরা : নয়া দিগন্ত
৯ এপ্রিল ২০১৭, রবিবার, ১:৫৯

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনে মহাবিপর্যয় ডেকে আনবে

ভারতীয় জ্বালানি বিশেষজ্ঞ

রামপালে কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনের সমর্থন জানিয়ে ভারতীয় জ্বালানি বিশেষজ্ঞ সৌম দত্ত বলেছেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনে মহাবিপর্যয় ডেকে আনবে। ভারতীয় সুন্দরবন অংশের কাছে এ ধরনের কোনো কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের বেলাতেও ঠিক একই কারণে জোরালো প্রতিবাদ জানানো হবেÑ বলেন তিনি। কেবল একটি রামপাল প্রকল্পই নয়, ওই এলাকায় যে দ্রুত হারে জমিদখল ও শিল্পায়ন ঘটছে, যার কারণে এ বিপর্যয় আরো ত্বরান্বিত করবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সৌম্য দত্ত আরো বলেন, বাংলাদেশে কার্বন নির্গমনের হার যথেষ্ট কম। কিন্তু রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র উচ্চহারে অ্যাসিডিক অক্সাইড নির্গত করবে। একটি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র মিলিয়ন টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত করে, যা ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের মাটির অ্যাসিড মারাত্মকভাবে বাড়াবে।
ব্র্যাক সেন্টার মিলনায়তনে ‘সুন্দরবনের জন্য’ ব্যানারে একটি নতুন প্লাটফরমের উদ্যোগে মতবিনিময়ে ভারতের জ্বালানি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ, ইন্ডিয়া পিপলস সায়েন্স ফোরামের ন্যাশনাল জেনারেল সেক্রেটারি সৌম দত্ত এ কথা বলেন।
মতবিনিময়ে সৌম দত্ত সবাইকে সতর্ক করে বলেন, একবার ক্ষতিগ্রস্ত হলে সুন্দরবনের মতো এ জটিল প্রাকৃতিক বনকে আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা দুরূহ।
তিনি বলেন, দরিদ্র ও প্রকৃতিনির্ভর লাখ লাখ মানুষের জীবিকা ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং যে দেশ এখন পর্যন্ত নাগরিকের মৌলিক সুবিধাগুলোর ব্যবস্থা করতে হিমশিম খাচ্ছে, তার জন্য এ ধরনের প্রকল্প পাপের সমান।
তিনি জানান, ভারতীয় অংশের সুন্দরবন, যা এরই মধ্যে উচ্চ পিএইচ মানের কারণে নৃতাত্ত্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর এরই মধ্যে কয়লাভিত্তিক একটি বিদ্যুৎ প্রকল্প হলে তা আরো বেশি ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে। এর ফলে সমুদ্রের নিকটবর্তী নদীর পানির স্তরও বৃদ্ধি পাবে, যা পটেনশিয়াল অব হাইড্রোজেন বা পিএইচ ভারসাম্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং বন ধ্বংসের মাত্রা বাড়িয়ে তুলবে।
ভারতীয় এ জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেন, বর্তমানে ভারতের নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ৪৪ হাজার মেগাওয়াট। ২০৩০ সালের মধ্যে এ ক্ষমতা এক লাখ ৭৫ হাজার মেগাওয়াটে পরিণত করার টার্গেট নেয়া হয়েছে। ভারত ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক সৌরজোট গঠন করেছে। সৌরবিদ্যুতের খরচও দিনকে দিন কমে আসছে। যদি ভারত তার লক্ষ্য এমনকি ৭০ শতাংশও অর্জন করতে পারে, তবে আগামী অন্তত ১৫ বছরের জন্য কোনো কয়লা, পারমাণবিক বা বৃহৎ বাঁধনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রয়োজন হবে না। ২০২২ সাল পর্যন্ত ভারতের কোনো কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রয়োজন নেই।
মতবিনিময়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন। বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বদরুল ইমাম, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সাবেক বিদ্যুৎ সচিব আ ন আকতার হোসেন, জ্বালনি বিশেষজ্ঞ বি ডি রহমাতুল্লাহ, ড. সুজিত চৌধুরী, কবি আব্দুল হাই শিকদার, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তমিজউদ্দিন খান, ঢাবির শিক্ষক মোর্শাহিদা সুলতানা ও সেভ দ্য সুন্দরবনের চেয়ারম্যান শেখ ফরিদুল ইসলাম।
ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, নিজের কন্যাকে হত্যা করে কোনো উন্নয়ন জনগণ মানবে না। তিনি বলেন, যারা সুন্দবনের মতো একটি প্রাকৃতিক সম্পদকে ধ্বংস করছেন তারা মানবতাবিরোধী কাজ করছেন। তাদেরও বিচার হওয়া উচিত।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, জনগণের দাবির মুখে সরকার ঠিকই বাধ্য হবে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে সড়ে আসতে। তবে তখন হয়তো অনেক দেরি হয়ে যাবে।
আ ন আকতার হোসেন ছোটবড় রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে এ ধরনের প্রকল্প জাতির জন্য কী ক্ষতিকর তা তুলে ধরতে হবে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে জাতির ক্ষতি করে কোনো প্রকল্প নেয়া যায় কি না।
নতুন এই সংগঠনটির পক্ষ থেকে এর কো-অর্ডিনেটর রিটা রহমান বলেন, সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলনে যে সংগঠনগুলো ইতোমধ্যে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে এবং নানান চড়াই-উৎরাইয়ের ভেতর দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের সাথে সংহতি, সংযোগ ও ঐক্যের লক্ষ্যে, সুন্দরবনের জন্য এই প্লাটফরমটি গঠন করা হয়েছে।