৭ জানুয়ারি ২০২২, শুক্রবার, ১:১৭

চান্দিনা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন

নৌকা প্রতীকে সিল মারা ব্যালট ভাসছে পানিতে

কুমিল্লার চান্দিনায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের পরদিন নৌকা প্রতীকে সিল দেয়া ব্যালট পেপার মৎস্য প্রজেক্ট থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ওই ঘটনায় নৌকা প্রতীক প্রার্থী সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসার ও প্রশাসনকে দায়ী করছেন। গতকাল সকালে উপজেলার ১ নম্বর শুহিলপুর ইউনিয়নের সুহিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দলপাড়া হারুন মিয়াজী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের পাশ থেকে কয়েটি ব্যালট পেপার উদ্ধার করে পুলিশ। যার প্রতিটিতে নৌকা প্রতীকের ওপর সিল দেয়া ছিল।

স্থানীয়রা জানান, সকালে শুহিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র সংলগ্ন মৎস্য প্রজেক্টের এক শ্রমিক মরা মাছ তুলতে গিয়ে স্কুলের পেছনে বেশ কয়েটি ব্যালট পেপার ভাসতে দেখে স্থানীয়দের খবর দেন। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আশরাফুন নাহার ও অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আরিফুর রহমান ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই ব্যালট পেপারগুলো উদ্ধার করেন। এ সময় প্রতিটি ব্যালটে নৌকা প্রতীকের ওপর সিল দেয়া ছিল।

সকাল সাড়ে ১১টায় একই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড হারুন মিয়াজী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র সংলগ্ন মৎস্য প্রজেক্টে থেকে একইভাবে আরো চারটি ব্যালট পেপার পাওয়া যায়। বেলা দেড়টায় সুহিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র থেকে এক শ’ গজ দূরত্বে একই প্রজেক্ট থেকে খাবারের প্যাকেটের ভিতরে আরো ১১টি ব্যালট পেপার পায় স্থানীয়রা। যার সবগুলোতেই নৌকা প্রতীকের ওপর সিল দেয়া।
এ ঘটনায় ওই ইউনিয়নের নৌকা প্রতীক প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান ইমাম হোসেন সরকার জানান, গত বুধবার পঞ্চম ধাপে চান্দিনার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে শুহিলপুর ইউনিয়নে পরিষদের ভোটগ্রহণ হয়। ভোটগ্রহণের শুরু থেকে আমার লোকজনকে হয়রানি শুরু করে প্রশাসন। ভোট গণনার সময় ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সুহিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড দলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র থেকে আমার এজেন্টদের বের করে দিয়ে অন্তত সাড়ে তিন শ’ ভোট পানিতে ফেলে ও বিভিন্ন ভাবে নষ্ট করে প্রশাসন।

শুহিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের নৌকা প্রতীকের এজেন্ট পল্লী চিকিৎসক ফারুক হোসেন জানান, শুহিলপুর ভোটকেন্দ্রের ঘেঁষেই বড় মৎস্য প্রজেক্ট। ভোট গণনার সময় আমাদেরকে বের করে দিয়ে ব্যালট পেপারগুলো নিয়ে প্রিজাইডিং অফিসার পাশের একটি কক্ষে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। অন্তত তিন ঘণ্টা পর রাত ৮টায় ফলাফল ঘোষণা করেন। পরদিন সকালে কেন্দ্রের পাশের প্রজেক্টে নৌকার সিল দেয়া ব্যালট ভাসছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, মূলত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে পরাজিত করতে নৌকা প্রতীকের ব্যালট পেপারগুলো পানিতে ফেলে দেয় প্রশাসন।
এ ব্যাপারে জানতে সুহিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং ফারুকুল ইসলাম জানান, আমরা যখন ভোট গণনা করেছি তখন সব প্রার্থীর একজন করে সাথে রেখেছি। সেখানে গোপনভাবে কিছুই করা হয়নি। আর পরদিন পানিতে কিভাবে ব্যালট পেপার এসেছে তা আমার জানা নেই।

উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো: আহসান হাবীব জানান, আমরা যারা ভোট ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত আমরা কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত দায়িত্ব। তারপরের বিষয়টি প্রিজাইডিং অফিসার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বে রেখে তার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা। পানিতে ব্যালট পেপারগুলো কিভাবে গেল এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তারা তদন্তসাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

চান্দিনা থানার ওসি মোহাম্মদ আরিফুর রহমান জানান, সকালে আমরা ১০টি অর্ধ ছেঁড়া ব্যালট পেপার পেয়েছি। পরের ব্যালট পেপারগুলো সম্পর্কে আমার জানা নেই।

এ ব্যাপারে জানতে চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আশরাফুন নাহারের ব্যবহৃত মোবাইলে একাধিকাবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

প্রসঙ্গত, চান্দিনা উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনটিতে নৌকা বাকি ৯টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হন। এর মধ্যে ১ নম্বর শুহিলপুর ইউনিয়নে তিন হাজার ২৮৭ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু বকর ছিদ্দিক। ওই ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ইমাম হোসেন সরকার পেয়েছেন তিন হাাজার ১২৫ ভোট।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/634839