৫ জানুয়ারি ২০২২, বুধবার, ৬:২৩

সিন্ডিকেট ঠেকাতে মরিয়া রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক-শ্রমিকরা

বাংলাদেশের মনোভাব জানানো হয়েছে মালয়েশিয়াকে

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে আদৌ সিন্ডিকেট হচ্ছে কি না তা নিয়ে এখনো জনশক্তি প্রেরণকারী ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সব মহলে জল্পনা কল্পনা চলছে। এমওইউ চুক্তির পর কিভাবে, কোন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ থেকে সেখানে শ্রমিক পাঠানো হবে তা নিয়ে অনেকে রয়েছেন দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে।
এরপরও গতবারের মতো যদি এবারো সিন্ডিকেট হয়ে যায়, তাহলে সেই সিন্ডিকেটের সদস্য হিসেবে কারা থাকছেন? সেই তালিকা নিয়ে ব্যবসায়ীদের গ্রুপের মধ্যে নানা গুজবও ছড়ানো হচ্ছে।

শোনা যাচ্ছে বাংলাদেশের কিছু প্রভাবশালী রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের সমন্বয়ে এবার ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সির সমন্বয়ে সিন্ডিকেট গঠন হতে পারে। এমন কথা এখন জনশক্তি ব্যবসায়ীদের মুখে মুখে। তারাই নাকি শেষ পর্যন্ত সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণে রেখে ব্যবসা পরিচালনা করতে নানাভাবে চেষ্টা তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত একজন প্রভাবশালী কলকাঠি নাড়ছেন। তবে এর কোনো সত্যতা এখনো খাতা কলমে পাওয়া যায়নি।

জনশক্তি প্রেরণের সাথে সম্পৃক্ত সাধারণ রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক ও শ্রমিকরা নয়া দিগন্তকে বলছেন, তারা (এজেন্সি মালিক) কোনোভাবেই এবার মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট হতে দেবেন না? কারণ সিন্ডিকেট করে ব্যবসা শুরু হলে অবৈধ পথে দেশ থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার হয়ে যাবে। গতবার তেমনটি হয়েছিল। এই বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্টদের গুরুত্ব দিয়ে ভাবার অনুরোধ জানান তারা।

যদিও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইমারন আহমদ, সচিব ড. আহমদ মনিরুস সালেহিন ও জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো: শহীদুল আলম এনডিসি গতকাল পর্যন্ত জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট যাতে না হয়- সে ব্যাপারে তারা কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। তারা চাচ্ছেন এবার প্রতিযোগিতামূলক বাজার। সবাই যাতে কম টাকায় লোক পাঠাতে পারেন সে দিকটায় তারা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে তাদের মনোভাবের কথা মালয়েশিয়া সরকারকে জানানো হয়েছে। দু’দিন আগেও আবারো জানানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সোমবার গ্রিনল্যান্ড ওভারসিজের স্বত্বাধিকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই নয়া দিগন্তকে বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার জন্য আমাদের দুই সরকারের মধ্যে ইতোমধ্যে এমওইউ চুক্তি সই হয়েছে। এতে আমরা খুশি। এখন দুই দেশের সরকার যেভাবে ব্যবসা পরিচালনার উদ্যোগ নেবেন আমরা সেভাবেই ব্যবসা করব। তারা অবশ্যই আমাদের মঙ্গল চাইবেন। আর আমি সেটাই বিশ্বাস করতে চাই। গতবারের মতো এবার ২৫ জনের একটি সিন্ডিকেট মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণ করতে তোড়জোড় করছে বলে বাজারে শোনা যাচ্ছেÑ এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি শুধু বলেন, সবার মতো আমিও তো খালি শুনছি সিন্ডিকেট হচ্ছে, সিন্ডিকেট হচ্ছে। আসলে কী হচ্ছে না হচ্ছে তা আমি কিছুই বলতে পারব না। তবে শ্রমিক যাওয়া শুরু হলে তখন সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। এটা আমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, গতবার আমি ১০ সদস্যর সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলাম। যার কারণে আমার প্রতিষ্ঠান থেকে একজন লোকও আমি পাঠাতে পারিনি। এবার যেভাবে আমাদেরকে সুযোগ দেয়া হবে আমরা সেখাবেই মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাব। মোট কথা আমরা ব্যবসায়ী। আমরা সুন্দরভাবে ব্যবসা করতে চাই। আমাদের সরকারও এবার চাচ্ছে দেশ থেকে অল্প খরচে লোক পাঠাতে। যেহেতু এবার মালয়েশিয়া সরকার শ্রমিক নিতে সব খরচ দিতে রাজি হয়েছে সেই হিসাবে আমার প্রতিষ্ঠান থেকে আমি বিনা পয়সায় (নামমাত্র সার্ভিস চার্জে) মালয়েশিয়ায লোক পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি।

অভিবাসন বিশ্লেষক ড. শংকর চন্দ্র পোদ্দার গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, মালয়েশিয়ায় এবার অবশ্যই জিরো কষ্টে বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠাতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এর জন্য মালয়েশিয়া সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক অনেক দেশের চাপ রয়েছে। এই অবস্থায় ঢাকায় এসে শুনতে পাচ্ছি, ফের সিন্ডিকেট করে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক পাঠানোর পাঁয়তারা করছে ২৫ সদস্যের সিন্ডিকেট। এরা কারা তা জানতে পারিনি। তবে এটা যাতে না হয় সে ব্যাপারে আমাদের সবাইকে সোচ্চার হতে হবে এবং সরকারকে সব পক্ষের সাথে আলাপ করে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে।

এশিয়া কন্টিনেন্টাল বিডি গ্রুপের স্বত্বাধিকারী লোকমান শাহ নয়া দিগন্তকে বলেন, আমাদের মন্ত্রী, সচিব ও ডিজি স্যার চাচ্ছেন এবার যাতে কোনোভাবেই মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট না হয়। আমিও মনে করি সিন্ডিকেট করে এবার কর্মী পাঠানো ঠিক হবে না। তা ছাড়া বাংলাদেশ এখন শ্রমিক প্রেরণের ক্ষেত্রে যে অবস্থানে রয়েছে সে পর্যায়ে অন্য কোনো দেশ নেই। তাই আমাদেরকে এখন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মালয়েশিয়া কিন্তু তাদের প্রয়োজনে শ্রমিক নিচ্ছে। তাই আমাদের শ্রমিক এবং ব্যবসায়ীদের সুযোগ সুবিধার বিষয়টি আগে নিশ্চিত করা জরুরি। তার আগে শ্রমিক পাঠানোর কার্যক্রম শুরু করা ঠিক হবে না। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে সবাই ব্যবসা করতে পারবে এমন মেসেজ মন্ত্রণালয় থেকে সোমবার জানানো হয়েছে। এমন মনোভাবের প্রতিক্রিয়া কি জানা গেছেÑ এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সেটা জানতে পারিনি।

গত রাতে মালয়েশিয়ার ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত একাধিক সাধারণ ব্যবসায়ী নয়া দিগন্তকে বলেন, করোনায় আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য লাটে উঠেছে। এই অবস্থায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলেছে। এটিতে আমরা অনেক খুশি হয়েছি। মন্ত্রী ও সচিব মহোদয়কে ধন্যবাদ। কিন্তু সিন্ডিকেট করে ব্যবসার কথা শোনার পর থেকে হতাশ হয়ে আছি। কারণ সিন্ডিকেট হলে আমরা কি কাজ পাবো? আর সিন্ডিকেট হলে তখন কর্মী পাঠাতে অভিবাসন ব্যয় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। সবমিলিয়ে অস্বস্তির মধ্যে আছি।

রিক্রুটিং এজেন্সিজ ঐক্য পরিষদের (রোয়াপ) সভাপতি টিপু সুলতান নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা এবার মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কোনো সিন্ডিকেট চাই না। আমরা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আছি, ভবিষ্যতেও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধেই থাকব। আমরা চাচ্ছি সবাই যাতে মালয়েশিয়ার ব্যবসা করতে পারে। সে ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে যেন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/634416